জাঠার মানচিত্রে বালিও। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা ভোটের আগে রাজনীতির বিশেষ নজরে এখন গ্রামবাংলা। গ্রামে গ্রামে জাঠা নিয়ে গিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছে বামেরা। তাদের জাঠায় সাড়া মিলছে ভালই। এই অবস্থায় শাসক দলও তাদের ছাত্র-যুব সম্মেলন কলকাতা থেকে সরিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছা, ছাত্র ও যুব সংগঠনকে নিয়ে ভোটের প্রস্তুতি আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হোক জঙ্গলমহল তথা গ্রামবাংলা থেকেই।
বামেদের ১১৩টি গণসংগঠনের যৌথ মঞ্চ বিপিএমও-র জাঠা কর্মসূচি আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হওয়ার কথা ৩০ নভেম্বর। তবে কিছু এলাকায় বিশেষ পরিস্থিতির কারণে তার পরেও পদযাত্রা জারি থাকবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী জাঠা কর্মসূচির খতিয়ান নিতে গিয়ে দেখেছে, গ্রামে গ্রামে বহু এলাকায় এই পদযাত্রাকে ঘিরেই এত দিন গুটিয়ে থাকা বাম কর্মী-সমর্থকেরা আবার বাইরে এসেছেন। যে সব জায়গায় জাঠার উপরে হামলা হয়েছে, মহিলা-সহ স্থানীয় মানুষই প্রতিরোধে সাহায্য করেছেন। হামলা হলে হয়তো সে সব জাঠা খবরে এসেছে। কিন্তু তার বাইরেও শান্তিপূর্ণ জাঠা বাম কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণের নিরিখে আলিমুদ্দিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘গ্রামে গ্রামে অনেক জায়গায় বাম কর্মী-সমর্থকেরা এত দিন জড়সড় হয়েছিলেন। জাঠা কর্মসূচিকে ঘিরে বেশ কিছু জায়গায় সাড়ে চার বছরে প্রথম বার কর্মীরা সামনে এসে মিছিল করলেন।’’ বালিতে যেমন শাসক দলের ‘সন্ত্রাসে’র আবহেও তিন দফায় জাঠা হয়েছে। যার শেষ পর্যায়ের মিছিল ছিল বুধবার।
আলিমুদ্দিনের আলোচনায় ঠিক হয়েছে, জাঠার ‘সাফল্যে’র উপরে ভর করেই আগামী ২৭ ডিসেম্বরের ব্রিগেড সমাবেশের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। সামনে ব্রিগেড থাকার জন্যই আগামী এক মাসে কলকাতায় খুব বড় কর্মসূচি হবে না। তবে ব্রিগেডের জন্য প্রচারের ফাঁকেও কর্মসংস্থানের দাবি, দুর্নীতির প্রতিবাদ বা বেসরকারি লগ্নিসংস্থার কেলেঙ্কারিতে বিচারের দাবিতে রাজধানী শহরেও পথে নামা হবে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। দলের রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, এক দিকে প্লেনামে যেমন সংগঠনকে সাজানোর চেষ্টা হবে, তেমনই ভোটের আগে ধারাবাহিক ভাবে দলের নেতা-কর্মীদের রাস্তায় থাকতে হবে।
গ্রামে গ্রামে বামেরা যে পায়ের তলায় জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে, মুখে কটাক্ষ-বিদ্রূপ করলেও তা নজর এড়ায়নি তৃণমূল নেতৃত্বের। তাই আচমকাই শাসক দলের ছাত্র-যুব সম্মেলন ১১ ডিসেম্বর কলকাতার নজরুল মঞ্চের বদলে ১৯ ডিসেম্বর গড়বেতায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্মেলনের মূল বক্তা তৃণমূল নেত্রী মমতা ও দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘গ্রামের মানুষের কাছে আরও বেশি করে আমরা পৌঁছতে চাইছি। সেই জন্যই কলকাতার বদলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে ছাত্র-যুব সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এর পরে সব জেলাতেই ওই ধরনের সম্মেলন হবে।’’ গড়বেতা বিধানসভা এখনও বামেদের দখলে। দলের নেতাদের একাংশের ধারণা, ভোটের আগে সংগঠনকে আরও চাঙ্গা করতে সেই এলাকাকেই ছাত্র-যুবদের সম্মেলনের জন্য তৃণমূল নেত্রী বেছে নিয়েছেন। ভোটের আগে মমতা জেলাকে গুরুত্ব দিতে চান বলে নিজেই এক এক করে সব জেলার বিধায়ক-সহ নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy