Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Congress

অধীরের বিদায়ে উচ্ছ্বাস তৃণমূলে, পরীক্ষায় শুভঙ্কর

হলিউডের সেই ‘কাম সেপ্টেম্বর’ ছবির মুখ্য চরিত্র ছুটি থেকে ফিরে দেখেছিলেন, তাঁর বাড়িকে রীতিমতো হোটেল বানিয়ে ফেলেছে কেয়ারটেকার, সঙ্গিনীও ছেড়ে গিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের অবস্থাও এখন যেন অনেকটা সেই রকমই কিংকর্তব্যবিমূঢ়!

বিধান ভবনে স্বাগত নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারকে।

বিধান ভবনে স্বাগত নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারকে। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৬
Share: Save:

অধীর চৌধুরীর বদলে বর্ষীয়ান সোমেন মিত্রকে দ্বিতীয় বার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যখন, ছ’বছর আগের সেই দিনটা ছিল ২১ সেপ্টেম্বর। সোমেনের প্রয়াণের পরে অধীর আবার যখন দ্বিতীয় ইনিংসে দায়িত্ব পেলেন, ২০২০ সালে সেটাও সেপ্টেম্বর। অধীরকে অব্যাহতি দিয়ে শুভঙ্কর সরকারকে প্রদেশ সভাপতি পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত জানাল এআইসিসি, এ বারও দিনটা ২১ সেপ্টেম্বর!

হলিউডের সেই ‘কাম সেপ্টেম্বর’ ছবির মুখ্য চরিত্র ছুটি থেকে ফিরে দেখেছিলেন, তাঁর বাড়িকে রীতিমতো হোটেল বানিয়ে ফেলেছে কেয়ারটেকার, সঙ্গিনীও ছেড়ে গিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের অবস্থাও এখন যেন অনেকটা সেই রকমই কিংকর্তব্যবিমূঢ়! অধীরের ঘনিষ্ঠ লোকজন যে ভাবে দল চালাচ্ছিলেন, তাতে অনেকের ক্ষোভ ছিল। কিন্তু সভাপতি বদলে যাঁকে নিয়ে আসা হল, তাতে ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেস এ বার ‘মুখ’ও হারিয়ে ফেলল কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন, কট্টর তৃণমূল কংগ্রেস-বিরোধী অধীর সরে যাওয়ায় বাংলায় কংগ্রেসের কি রাস্তা বদল হবে? দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনে অন্তত নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কাছে তার উত্তর মেলেনি।

হাওড়ায় মিছিলে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

হাওড়ায় মিছিলে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে অধীরের বিদায়ে তৃণমূল শিবিরে উচ্ছ্বাস গোপন থাকছে না। সমাজমাধ্যমে শাসক দলের ডিজ়িটাল সৈনিকেরা যেমন অধীরের সরে যাওয়ায় আনন্দিত, তেমনই শুভঙ্করকে নিয়ে এসে এআইসিসি তৃণমূলের প্রতি বার্তা দিতে চেয়েছে বলে স্বস্তি প্রকাশ করছেন। তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষের বার্তা, ‘‘আলাদা রাজনৈতিক মঞ্চ হলেও শুভেচ্ছা থাকল বন্ধু! নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব দায়িত্ব পেলে দেখতেও ভাল লাগে। আশা করি, বঙ্গ রাজনীতির বাস্তবতা প্রতিফলিত থাকবে তোমার পদক্ষেপে।’’

বঙ্গ রাজনীতির বাস্তবতা কী? তৃণমূল মনে করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা ছেড়ে দিল্লির মতো বাংলাতেও কংগ্রেসের উচিত তাদের পাশে থাকা। সিপিএম মনে করে, বিজেপি ও তৃণমূলের দ্বিমেরু রাজনীতির মোকাবিলায় বিকল্প গড়ে তুলতে কংগ্রেস ও বামপন্থীদেরএকসঙ্গে লড়াই করা উচিত। শুভঙ্কর কী মনে করেন? তিনি বলেছেন, ‘‘বিজেপি-আরএসএসের যে বিচারধারা, তার বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন দর্শনের রাজনৈতিক দল নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ তৈরি হয়েছে। সেই মঞ্চের শরিক আমাদের রাজ্যের দুই রাজনৈতিক দল। লোকসভা নির্বাচনে একটি দলের সঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতা হয়েছিল। আর একটি দলের সঙ্গে হয়নি। রাজনৈতিক সমীকরণ এবং রাজনৈতিক দল পরিচালনা করা আলাদা বিষয়। এখন সভাপতি হিসাবে দলকে শক্তিশালী করাই আমার কাজ হবে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, কেন্দ্রে বিজেপি ও রাজ্যে তৃণমূলের সরকারের কর্মকাণ্ডের তাঁরা বিরুদ্ধে। আবার এ-ও বলেছেন, তৃণমূল যদি গণতন্ত্র রক্ষা করে, সরকার যদি শিল্প আনতে চায়, তা হলে তাঁরা অকারণ বিরোধিতা নয়, সমর্থন করবেন। আর জি কর-কাণ্ডে প্রবল প্রতিবাদের আবহে রাজ্যের শাসক দল সম্পর্কে প্রথম দিনে কোনও কড়া মন্তব্য না করা, বরং প্রয়োজনে সহায়তার কথা জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছে!

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘কংগ্রেস কাকে দায়িত্ব দিচ্ছে বা কী করছে, তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে যে বাংলায় বিজেপি-বিরোধিতায় কাজের কাজ হবে না, কংগ্রেস কর্মীরা সেটা জানেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।’’ প্রদেশ সভাপতি বদল প্রসঙ্গে সিউড়িতে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, এতে জোটের উপরে কোনও প্রভাব পড়বে না। যিনি ছিলেন তিনি কংগ্রেসের রাজনীতির কথা বলতেন, যিনি এলেন তিনিও নিশ্চয়ই কংগ্রেসের রাজনীতির কথাই বলবেন।”

শুভঙ্কর যখন তুলনায় ‘নরম সুর’ শুনিয়েছেন, সে দিনই হাওড়া জেলা কংগ্রেসের ডাকে আর জি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়ে চেনা সুরেই শাসক দলকে আক্রমণ করেছেন তাঁর পূর্বসূরি। হাওড়া ময়দান থেকে শিবপুর কাজিপাড়া পর্যন্ত মিছিলের পরে সদ্যপ্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেছেন, ‘‘আর জি করে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরেও মানুষ দুঃখিত। কিন্তু দুঃখ হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর। আমরা মানুষের সঙ্গে প্রতিবাদে আছি।’’

সূত্রের খবর, অধীরের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে শুভঙ্করের। বর্তমান সভাপতির কাজে সঙ্গে থাকার কথা বলেছেন প্রাক্তন। আরও এক প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের সঙ্গেও কথা বলেছেন শুভঙ্কর। প্রদীপের কথায়, ‘‘শুভেচ্ছা জানিয়েছি। বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আলোচনা করব বলেছি।’’ আবার প্রবাসী নেতা রণজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্বে এমন একটা সময়ে নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যখন মানুষ তৃণমূল বনাম বিজেপি থেকে বেরিয়ে তৃতীয় বিকল্প চাইছে। কংগ্রেস এই সময় ও সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে, এটাই নতুন নেতৃত্বের কাছে আশা।’’

কংগ্রেস রাজনীতিতে সচরাচর সাংসদ-বিধায়কদেরই কদর বেশি থাকে। সাম্প্রতিক কালে শুভঙ্করই প্রথম প্রদেশ সভাপতি, যিনি ভোটে বহু বার লড়লেও বিধায়ক বা সাংসদ হননি। পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দলকে শক্তিশালী করার কথাই বারবার বলছেন। তবে দলের পথ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জের মুখে যে তাঁকে পড়তে হবে, প্রথম দিনেই তার ইঙ্গিত স্পষ্ট!

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Adhir Chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE