পাত্রপক্ষের জন্য টিফিনে ছিল লুচি, মুরগির মাংস, কয়েক রকমের ফল আর সিমুই। মধ্যাহ্নভোজে ছিল দু’রকমের মাংসের পদ, বিরিয়ানি, সাদা ভাত, ডাল, চাটনি ,পাপড়, দই এবং মিষ্টি। ডিজে বক্সে গান বাজছিল। তালে তালে নাচে অল্পবয়সি অতিথিরা নাচছিলেন। হঠাৎ বিয়ের আসরে ছন্দপতন। দেনমোহর (মুসলিম বিবাহের অন্যতম শর্ত, যা পাত্র পাত্রীকে দেন) লেখা নিয়ে পাত্র এবং পাত্রীপক্ষের লোকজনের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। সেখানে প্রথমে বচসা, তার পর হয় হাতাহাতি। এমনকি, বিয়ের অনুষ্ঠানে চলে ইট ছোড়াছুড়িও। তাতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। রবিবার এমন ঘটনায় শোরগোল মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার আসাননগর এলাকায়। গন্ডগোল এমন পর্যায়ে পৌঁছোয় যে, পুলিশ যায় বিয়ের অনুষ্ঠানে। শেষ পর্যন্ত অনাড়ম্বর ভাবে শেষ হয় বিয়ে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ভরতপুরের গ্রামের এক যুবতীর বিয়ে ছিল রবিবার। বেলা ১২টা নাগাদ ১৫০ বরযাত্রী-সহ কয়েকটি গাড়ি নিয়ে পাত্রীপক্ষের বাড়িতে পৌঁছে যান বর। পাত্রপক্ষের জন্য বেশ বড় আয়োজন করেছিল পাত্রীপক্ষ। সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। গোল বাধল দেনমোহর ঘোষণা নিয়ে। প্রকৃতপক্ষে পাত্রকে যা যা দেওয়া হচ্ছিল, দেনমোহরে তার কিছুই উল্লেখ ছিল না বলে অভিযোগ। তাতে আপত্তি জানায় পাত্রীপক্ষ। তা অগ্রাহ্য করে বিয়ের দায়িত্বে থাকা হাজিসাহেব নিকাহনামা পড়তে থাকেন। পাত্রীপক্ষ প্রবল আপত্তি করে। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পাত্রের বাড়ির লোকজন। সেখান থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ।
আরও পড়ুন:
বিয়েবাড়িতে গন্ডগোলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। উভয়পক্ষের সঙ্গে বার বার আলোচনায় মেলে সমাধানসূত্র। পাত্রীপক্ষের দাবিমতো বিয়েতে উপহার হিসাবে দেওয়া সমস্ত জিনিসপত্রের উল্লেখ দেনমোহরে লিখে দেওয়া হয়। কোনওরকমে শেষ হয় বিয়ে। পাত্রপক্ষের তরফে সুজাউদ্দিন বিশ্বাস নামে এক যুবক বলেন, ‘‘যা দিয়েছে, সেটা তো ছিলই, যা যা দেবে বলছে সেটাও দেনমোহরে উল্লেখ করতে চাইছিল। আমরা বলেছিলাম, যেটা এখনও হাতে পায়নি, তা দেনমোহরে থাকবে না। বাড়িতে ডেকে এনে এ ভাবে হেনস্তা করার পর কোনও আত্মীয়তা হয় না।’’ উল্টো দিকে, পাত্রীপক্ষের তরফে ওবায়দুল্লাহ খান নামে এক জনের দাবি, ‘‘নিকাহনামা তো বার বার লেখা হয় না। দেনমোহর হিসাবে যা যা কথা আছে, সবটাই সেখানে উল্লেখ থাকা উচিত। আমরা শুধু সেটুকুই বলেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, কোন কিছু জিনিস আপনারা বুঝে না পেলে তার জন্য লেখাপড়া করে নিন। কিন্তু ওঁরা ইচ্ছা করে অশান্তি করেছেন।’’ তাঁর সংযোজন, একপ্রকার জোর করে বিয়ে হল। আমাদের মেয়ের দাম্পত্যজীবন কতটা সুখের হবে, সে নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’’