প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পঞ্চায়েত ভোট শুরু হতে আর ঘণ্টা কয়েক বাকি। অথচ ভোটের কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের হিসাব কোনও অঙ্কেই মিলছে না। সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রতি ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেই নির্দেশ কার্যকর করার ব্যাপারে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সব বুথ তো দূর অস্ত্, অর্ধেক বুথেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যায়নি। শুক্রবার রাত ৮টার সময় কমিশন যে হিসাব দিয়েছে, তাতে রাজ্যে এখনও প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেই পৌঁছয়নি। তাদের বুথে বুথে মোতায়েন করার তো তার পরের কথা।
রাত ৮টায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রাজ্যে প্রায় ৬০০ কোম্পানির মতো বাহিনী এসে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, প্রতি কোম্পানিতে ৮০ জন করে সক্রিয় জওয়ানের হিসাবে রাজ্যে এসে পৌঁছেছে ৪৮ হাজারের মতো কেন্দ্রীয় জওয়ান। এ দিকে রাজ্যে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩৮২। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার ব্যাপারে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত পরিকল্পনা মানলে, অর্থাৎ, ভোটকেন্দ্র পিছু হাফ সেকশন বাহিনী (চার জন সক্রিয় জওয়ান) রাখতে হলে পাটিগণিতের হিসাবে স্রেফ ১২ হাজার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন সম্ভব। সে ক্ষেত্রে কলকাতা হাই কোর্ট প্রতি ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের যে নির্দেশ দিয়েছিল তা মানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এই হিসাব অনেকটাই সরলরৈখিক। বাস্তবে ভোটকেন্দ্র পিছু বুথের সংখ্যা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রস্তাব মানলে বুথপিছু বাহিনীর সংখ্যা আরও কমবে।
বুথ পিছু বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব
আইজি বিএসএফ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোঅর্ডিনেটরের প্রস্তাব ছিল, প্রতি বুথে অন্তত হাফ সেকশন অর্থাৎ চার জন সক্রিয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করতে হবে। বাহিনীর জওয়ানদের নিরাপত্তার স্বার্থেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এক থেকে দু’টি বুথ থাকলে কমপক্ষে হাফ সেকশন বাহিনী, তিন থেকে চারটি বুথ থাকলে কমপক্ষে এক সেকশন বাহিনী, পাঁচ থেকে ছ’টি বুথ থাকলে কমপক্ষে দেড় সেকশন বাহিনী এবং সাতটি বা তার বেশি বুথ থাকলে অন্তত দু’সেকশন বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এ ছাড়া ‘স্ট্রংরুম’ অর্থাৎ যেখানে ব্যালটবাক্স বা ইভিএম রাখা হয়, সেখানে এক কোম্পানি বাহিনী (৮০ জন সক্রিয় জওয়ান) মোতায়েন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বাহিনীর কোঅর্ডিনেটরের তরফে। শুক্রবার বাহিনীর কোঅর্ডিনেটরদের সেই প্রস্তাব মেনে নেয় কমিশন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় ওই সংখ্যক বাহিনী মোতায়েনের জন্য যে পরিমাণ জওয়ান প্রয়োজন, তা রাজ্যে এসেই পৌঁছয়নি রাত পর্যন্ত।
কত বুথ পঞ্চায়েত ভোটে
শনিবার রাজ্যের মোট ৪৪ হাজার ৩৮২টি ভোটকেন্দ্রে পঞ্চায়েত ভোট হবে। তবে একটি ভোটকেন্দ্র মানে একটি বুথ নয়। এক একটি ভোটকেন্দ্রে ৬-৭টি বুথও থাকতে পারে। সেই হিসাবে পঞ্চায়েত ভোটে মোট বুথের সংখ্যা ৬১ হাজার ৬৩৬টি। এর মধ্যে কিছু আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী জিতে যাওয়ায় এবং অন্যান্য নানা কারণে বুথের সংখ্যা কমে হয়েছে ৬০ হাজার ৫৯৩টি।
ভোটকেন্দ্র পিছু বুথের সংখ্যা
একটি মাত্র বুথ রয়েছে এমন ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২৯ হাজার ৯৪০। দু’টি বুথ রয়েছে ১২ হাজার ৩২০ ভোটকেন্দ্রে। তিনটি বুথ রয়েছে এমন ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৯৪টি। চারটি বুথ রয়েছে এমন ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪৩৩টি। পাঁচটি বুথ রয়েছে এমন ভোটকেন্দ্র ৬৪টি, ছ’টি বুথ রয়েছে ২৪টি কেন্দ্রে এবং ছয়ের বেশি বুথ রয়েছে সাতটি কেন্দ্রে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রস্তাব অনুযায়ী ৪২ হাজার ২৬০ ভোটকেন্দ্রে অন্তত চার জন করে জওয়ান মোতায়েন করলে প্রয়োজন অন্তত ৪২২৬০X৪= ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪০ জন সক্রিয় জওয়ান। অথচ রাত ৮টায় দেওয়া কমিশনের বিবৃতি অনুযায়ী এ পর্যন্ত রাজ্যে ৪৮ হাজার সক্রিয় জওয়ান এসে পৌঁছতে পেরেছে। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য মোট ৮২২ কোম্পানি বাহিনীর অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। কোম্পানি পিছু ৮০ জন সক্রিয় বাহিনীর হিসাব করলেও সংখ্যা লাখ পেরোয় না। ৮২২ কোম্পানি বাহিনীতে সক্রিয় জওয়ানের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫ হাজার ৭৬০ জন।
রাত ৮টায় কমিশন কী বলল
রাত ৮টার কিছু আগে কমিশন জানিয়েছে, ৪৮৫ কোম্পানির মধ্যে ২৬৩ কোম্পানি বাহিনী ঢুকে গিয়েছে রাজ্যে। আগেই ৩৩৭ কোম্পানি জওয়ান এসেছিল। কমিশন বলে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৬০০ কোম্পানির মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে গিয়েছে। কমিশন সূত্রে এ-ও জানানো হয় যে, অনেক বাহিনী এখনও রাস্তায় আসছে। তারাও পৌঁছে যাবে। কিন্তু হিসাব বলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কো অর্ডিনেটারদের প্রস্তাব তাতেও মানা যাবে না।
কেন বুথ পিছু অন্তত হাফ সেকশনের প্রস্তাব ছিল?
পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তার কথা ভেবেই নিয়ে আসা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তার কথা ভাববে কে? রাজ্যে বিভিন্ন এলাকায় হিংসার ঘটনার উদাহরণ টেনে তাই প্রতি বুথে অন্তত হাফ সেকশন অর্থাৎ চার জন সক্রিয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ভারপ্রাপ্ত কোঅর্ডিনেটর এবং বিএসএফের আইজি। সেই সঙ্গে বলেছিলেন রাজ্য পুলিশকেও পাহারায় থাকতে হবে। কোঅর্ডিনেটরদের যুক্তি ছিল, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের যা অবস্থা, তাতে জওয়ানদেরও ‘প্রাণহানির আশঙ্কা’ রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। এই মর্মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোঅর্ডিনেটরদের। বৈঠকে যা সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই এই প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।
হাই কোর্ট কী বলেছিল
সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর লক্ষ্যে পঞ্চায়েত ভোটে সমস্ত ভোটকেন্দ্রেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেছিলেন, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হয়েছিল, ২০২৩ সালের ভোটও অন্তত সেই সংখ্যক বাহিনী দিয়ে করাতে হবে। হাই কোর্টের সেই নির্দেশ পেয়ে এর পর কেন্দ্রের কাছে মোট ৮২২ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে চিঠি দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্র প্রথমে ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনীর অনুমোদন দিলেও পরে বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী পাঠানো হবে বলে জানায়। কিন্তু এই সব সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয় পঞ্চায়েত ভোটের মুখে। তার পর শুরু হয় বাকি বাহিনী রাজ্যে পাঠানোর কাজ। যা শনিবার পঞ্চায়েত ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগেও শেষ হয়নি।
রাজ্য পুলিশ থাকছে
বাহিনীর সংখ্যা নিয়ে সংশয় থাকলেও সমস্ত বুথে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েনের পরিকল্পনায় খামতি থাকছে না বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। প্রতি বুথে অন্তত এক জন সশস্ত্র পুলিশ রাখার কথা বলা হয়েছিল হাই কোর্টে। সেই মতো ৭০ হাজার সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া বুথ পিছু ১-২ জন লাঠিধারী পুলিশ এবং ১-২ জন সিভিক ভলান্টিয়ারও থাকবেন। তবে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করা হবে না। ভোটারদের লাইন ঠিক রাখা, লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের সাহায্য করার কাজ করবেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy