Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Supreme Court

৩২০০০ শিক্ষকের চাকরি: কোন কোন যুক্তিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ খারিজ সুপ্রিম কোর্টে

অভিযোগ ওঠে, নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারভিউয়ে অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়ার কথা থাকলেও বহু ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ উড়িয়ে আদালতে পর্ষদ জানায় যে, চাকরিপ্রার্থীদের ওই টেস্ট নেওয়া হয়েছিল।

WBBPE argues on 32000 job termination case which SC set aside High Court’s order

(বাঁ দিকে) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সুুপ্রিম কোর্ট (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩ ১৭:০১
Share: Save:

৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, শুক্রবার তা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং শিক্ষকদের একাংশের করা মামলায় এই নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। তবে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নতুন করে মামলাটির শুনানি হবে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে।

২০১৪ সালে এক লক্ষ ২৫ হাজার চাকরিপ্রার্থী প্রাথমিকের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে যাঁদের মধ্যে থেকে ৪২ হাজার ৫০০ জন চাকরি পান। প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী ২০১৬ সালের প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে মামলা করেন। তাঁদের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি আদালতে জানিয়েছিলেন, এই মামলাকারীদের থেকে কম নম্বর পেয়ে অপ্রশিক্ষিত অনেকেই চাকরি পেয়েছিলেন। এই মামলাতেই উঠে আসে ইন্টারভিউ বিতর্ক। অভিযোগ ওঠে, নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারভিউয়ে অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়ার কথা থাকলেও বহু ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন জেলায় যাঁরা ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন, তাঁদের তলব করে গোপন জবানবন্দিও নথিবদ্ধ করেছিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার ভিত্তিতেই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু পর্ষদ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে আদালতে জানায় যে, চাকরিপ্রার্থীদের অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়েছিল। নিজেদের বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণও পেশ করে পর্ষদ।

অভিযোগ উঠেছিল প্রশিক্ষণহীনদের নামও মেধাতালিকায় উঠেছিল। এ ক্ষেত্রে পর্ষদের যুক্তি ছিল, ২০১৪ সালে চাকরিপ্রার্থীদের প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু পরে, ২০১৯ সালের মধ্যে এনসিইটি-র নিয়ম মোতাবেক সব চাকরিপ্রাপক প্রশিক্ষণ নেন বলে আদালতে যুক্তি দেয় পর্ষদ। মনে করা হচ্ছে পর্ষদের এই যুক্তির প্রেক্ষিতেই ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে বলেছিল হাই কোর্ট। নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফিও করতে বলা হয় উচ্চ আদালতের তরফে। পর্ষদের একটি সূত্রের খবর, অল্প সময়ে পুরো বিষয়টি সময়ে শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিল তারাও। সুপ্রিম-রায় ঘোষণার পরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল বলেন, “পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের দিকে তাকিয়ে ছিল। ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ শেষ করতে বলা হয়েছিল। আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বোর্ড খুশি। এত শিক্ষকের চাকরি যাওয়া ঠিক নয়। বোর্ড বোর্ডের যুক্তি দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে তা মান্যতা পেয়েছে।”

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর রায়ে জানিয়েছিলেন, আপাতত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বহাল থাকবে। তাঁরা আগের কাঠামো অনুসারেই বেতন পাবেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, চাকরিহারারা চার মাসের জন্য পার্শ্বশিক্ষকের হারে বেতন পাবেন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ৩২০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অথবা আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে। একই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চ তার অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনেই চলতে হবে।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন চাকরিহারাদের একাংশ। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ মামলার শুনানিতে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে কিছুটা পরিবর্তন করে। তারা জানায়, ওই ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে পার্শ্বশিক্ষক হিসাবে কাজ করতে হবে না। তাঁরা যেমন ছিলেন, তেমনই থাকবেন। তবে পর্ষদকে নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে এই ৩২ হাজার শিক্ষককেও। সেখানে তাঁরা ব্যর্থ হলে চাকরি হারাবেন। এর পর হাই কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান এই প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ এবং পর্ষদ কর্তৃপক্ষ। শীর্ষ আদালতে বিচারপতি জেকে মহেশ্বরী এবং কেভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চ হাই কোর্টের নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে না।

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় হাই কোর্ট এত দিন যা যা নির্দেশ দিয়েছে, তা খারিজ করা হচ্ছে। হাই কোর্টের নতুন ডিভিশন বেঞ্চে নতুন করে মামলার শুনানি হবে। তাঁরা নতুন করে বিচার করবেন এবং সিদ্ধান্ত নেবেন। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে মামলাটি যাবে হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের আইনজীবী হিসাবে মামলাটি লড়েন মুকুল রোহতগি, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পার্থ দেব বর্মণ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy