Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Sujata Mondal Khan

রাজনৈতিক উচ্চাশা থেকেই কি বিচ্ছেদ সুজাতা-সৌমিত্রের, জল্পনা জোরদার

কেন আচমকা বিজেপি সাংসদ সৌমিত্রর স্ত্রী তৃণমূলে চলে গেলেন? রাজ্য বিজেপি-র একাংশ বলছে, বিষয়টা রাতারাতি হয়নি।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:২৯
Share: Save:

সোমবার বিকেল ৪টের সময়েও সুজাতা মণ্ডল খাঁয়ের ফেসবুকে প্রোফাইলের কভার ছবিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখোমুখি। মাঝে বঙ্গ বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। অথচ তার তিন ঘণ্টা আগে তিনি নাটকীয় ভাবে তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে গিয়ে জোড়াফুলের পতাকা নিয়ে নিয়েছেন। যার এক ঘণ্টা পর দশ বছরের বিবাহিত জীবনে আরও নাটকীয় ভাবে দাঁড়ি টেনে দিয়েছেন বিজেপি-র সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। যা শুনে সুজাতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূলে গিয়েছি বলেই ডিভোর্সের নোটিস পাঠাচ্ছে।’’

কেন আচমকা বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য যুব সংগঠনের সভাপতি সৌমিত্রর স্ত্রী তৃণমূলে চলে গেলেন? রাজ্য বিজেপি-র একাংশ বলছে, বিষয়টা রাতারাতি হয়নি। কিছুদিন ধরেই দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। তার দূরত্বের পিছনে ছিল সুজাতার ‘রাজনৈতিক উচ্চাশা’। যদিও সুজাতার ঘনিষ্ঠরা সে কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, সুজাতার যে ‘রাজনৈতিক উচ্চাশা’র কথা বলছে বিজেপি-র একাংশ, তা আসলে কুযুক্তি। সুজাতা বিজেপি-তে সম্মান পাননি। তাই তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তবে উভয় তরফের যে যা-ই বলুন, এত তাড়াতাড়ি এই ‘দলবদল’ হবে, সেটা কেউই আঁচ করতে পারেননি।

সুজাতা কেমন রাজনীতি করতেন, রাজনীতিতে কতটা সক্রিয় ছিলেন, সবই জানা যায় তাঁর ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে নজর দিলে। কখনও সাইকেলে, কখনও মোটরসাইকেলে বিজেপি-র পতাকা নিয়ে সুজাতা। পরের পর মিটিং-মিছিলের ছবি আর ভিডিয়োর পোস্ট। একটু পিছন দিকে গেলে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সুজাতার ছবি। কোনও ছবিতে তিনি অমিতের হাতে গোলাপ তুলে দিচ্ছেন, কোনওটায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উপহার দিচ্ছেন ডোকরার দুর্গামূর্তি। গত ৫ নভেম্বর অমিতের বাঁকুড়া সফরের সময়েও যে গোটা দিনই সুজাতা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে-কাছে ছিলেন, তা-ও স্পষ্ট। আবার অমিতের পরের বঙ্গসফর রবিবার শেষ হওয়ার পরদিন, সোমবারেই সুজাতা তৃণমূলে। এটা কি নিছকই কাকতালীয়? না কি এই দলত্যাগের সঙ্গে অমিত-সফরের কোনও যোগ রয়েছে? আপাতত তা নিয়েই রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে জোর জল্পনা।

আরও পড়ুন: ভুল করলে সুজাতা, আমি কি পাপী? স্ত্রী-র দলত্যাগে অশ্রুসজল সৌমিত্র

সেই জল্পনায় কান পাতলে যা শোনা যাচ্ছে, তাতে সৌমিত্র-সুজাতা বিচ্ছেদের পিছনে রয়েছে বড় ‘রাজনৈতিক কারণ’। এটা ঠিক যে, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আইনি বাধায় সৌমিত্র নিজের কেন্দ্র বিষ্ণুপুরে যেতে না পারলেও সেখানে প্রচারে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী সুজাতা। তার জেরে সুজাতা তখন প্রচারের আলোতেও আসেন। বিষ্ণুপুরে বিজেপি-র জয়ে সুজাতার প্রশংসা করতে শোনা গিয়েছিল বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। বিজেপি-তে তাই সুজাতার পরিচয় শুধু ‘সাংসদের স্ত্রী’ ছিল না। বস্তুত, ‘সাংসদের স্ত্রী’ পরিচয়টাই না কি ইদানীং পছন্দ হচ্ছিল না সুজাতার। এমনটাই দাবি বিজেপি-র অনেকের। তাদের আরও দাবি— সুজাতা নাকি বিজেপি-র ‘যুবনেত্রী’ হয়ে উঠতে চাইছিলেন! ঘটনাচক্রে, সৌমিত্র এখন রাজ্য বিজেপি যুবমোর্চার সভাপতি। তা হলে কি সুজাতা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতে চেয়েছিলেন? সরাসরি সেই প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন না কেউই। কিন্তু ঠারেঠোরে অনেকে সেদিকেই ইঙ্গিত করছেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সুজাতা। ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

বিজেপি-র একাংশ আরও বলছে, সম্প্রতি সুজাতার ‘যুবনেত্রী’ হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেড়ে গিয়েছিল। শুধু বিষ্ণুপুর বা বাঁকুড়া জেলা নয়, নদিয়া, মেদিনীপুরেও যুব বিজেপি-র বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছিল সুজাতাকে। চলতি ডিসেম্বর মাসেই বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্গত কোতুলপুরে বাইক মিছিল করেন সুজাতা। এর পরে তাঁকে দেখা যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় জনসভায়। নদিয়ার বাদকুল্লা, শান্তিপুর, রানাঘাটে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ‘প্রথমসারির মুখ’ হিসেবে ছিলেন সুজাতা। বিজেপি-র এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘শুধু সক্রিয় রাজনীতি করাই নয়, সেই সঙ্গে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে স্বামীর লোকসভা কেন্দ্র বিষ্ণুপুরের কোনও আসন থেকে বিজেপি-র টিকিটে লড়তে চাইছিলেন সুজাতা।’’ আবার রাজ্য বিজেপি-র অন্য এক নেতার বক্তব্য, ‘‘সৌমিত্রও না কি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কারণ, বিজেপি ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে সে ক্ষেত্রে তিনি রাজ্যে মন্ত্রী হতে পারবেন। পাশাপাশিই, সৌমিত্র চেয়েছিলেন, বিধানসভার বদলে সুজাতা উপনির্বাচনে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়ান। কিন্তু এমন কোনও প্রস্তাব কানে তোলেননি দলীয় নেতৃত্ব।’’ ওই নেতার আরও দাবি, প্রাথমিক ভাবে নেতৃত্ব রাজি না হলেও সৌমিত্র-সুজাতা ভাবছিলেন পরে কিছু একটা হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা যে হওয়ার নয়, তা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যায় অমিতের সদ্যসমাপ্ত সফরে। কারণ, অমিত একই পরিবারের দু’জনকে ভোটের রাজনীতিতে আনার পক্ষে মত দেননি। কারণ, এ রাজ্যে তাঁদের লড়াই ‘পরিবারতন্ত্র-’এর বিরুদ্ধেই।

আরও পড়ুন: সৌমিত্র-সুজাতা, দলত্যাগের জল গড়িয়ে গেল ডিভোর্স নোটিসে

তাই, বিজেপি সূত্রের অনুমান, তার অব্যবহিত পরেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলমুখী হয়েছেন সুজাতা। প্রসঙ্গত, সুজাতা দল ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার পর প্রকারান্তরে ‘পরিবারতন্ত্র’-এর কথা শোনা গিয়েছে সৌমিত্রর গলাতেও। সরাসরি না বললেও স্ত্রী-র দলত্যাগের পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি সুজাতার উদ্দেশে বলেন, ‘‘বিজেপি-তে পরিবারতন্ত্র চলে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sujata Mondal Khan TMC Soumitra Khan BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy