Advertisement
০৮ জানুয়ারি ২০২৫
Digital Arrest

৪০ ঘণ্টা ‘ভিডিয়ো বন্দি’! নিয়ন্ত্রণের বাইরে মেসেজ এবং ফোন, ‘ডিজিটাল অ্যারেস্টে’ বিধ্বস্ত যুবক

ইউটিউবার অঙ্কুশ বহুগুণা সম্প্রতি ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর কবলে পড়েছিলেন। ৪০ ঘণ্টা টানা একটি ভিডিয়ো কলে ‘আটকে’ ছিলেন তিনি। পরে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।

সাইবার প্রতারণার শিকার ইউটিউবার অঙ্কুশ বহুগুণা।

সাইবার প্রতারণার শিকার ইউটিউবার অঙ্কুশ বহুগুণা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০১
Share: Save:

এক নয়, দুই নয়, টানা ৪০ ঘণ্টা! নিজের ফোন, ল্যাপটপ নিজের কাছেই আছে, কিন্তু সেগুলি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কাউকে ফোন করা যাচ্ছে না। কারও ফোন আসছে না। মেসেজের মাধ্যমেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কারা যেন ভার্চুয়াল মাধ্যমেই বেঁধে দিয়েছে হাত-পা। ‘ডিজিটাল অ্যারেস্টের’ সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন ইউটিউবার অঙ্কুশ বহুগুণা। নেটপ্রভাবী হিসাবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। সেই তিনিই সম্প্রতি সাইবার অপরাধীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছিলেন। খোয়াতে হয়েছে অনেক টাকা। সমাজমাধ্যমেই একটি ভিডিয়োবার্তায় নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তিনি।

অঙ্কুশ জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন তিনি সমাজমাধ্যমে সক্রিয় থাকতে পারেননি। শুধু সমাজমাধ্যম নয়, নিজের বন্ধুবৃত্ত, এমনকি পরিবারের লোকজনের থেকেও তিনি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। ৪০ ঘণ্টা টানা একটি ভিডিয়ো কলে ‘আটকে’ ছিলেন তিনি। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। বাড়ি থেকে কোথাও বেরোতেও পারেননি। ছিলেন টানা নজরদারির অধীনে। অঙ্কুশের কথায়, ‘‘এখনও ঘোর কাটেনি আমার। টাকাপয়সা হারিয়েছি। নিজের মানসিক স্বাস্থ্য হারিয়েছি। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার সঙ্গে এটা হয়েছে।’’

কী ঘটেছিল? কী ভাবে সাইবার অপরাধীদের ফাঁদে পা দিলেন?

অঙ্কুশ জানিয়েছেন, তাঁর কাছে সাধারণ একটি ফোন এসেছিল। বলা হয়েছিল, তাঁর নামে একটি পার্সেল আছে। তা পাওয়ার জন্য ফোনে শূন্য (০) টিপতে হবে। তা করার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধীদের জগতে আটকে পড়েন অঙ্কুশ। তাঁকে বলা হয়, চিনের সঙ্গে যুক্ত বেআইনি কিছু জিনিস তাঁর নামে পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দারা তাঁর উপরে নজর রাখছেন এবং বেআইনি পাচারের অভিযোগে তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন অঙ্কুশ। তিনি জানান, এমন কোনও জিনিসের কথা তিনি জানেন না। তখন তাঁকে বলা হয়, ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে পুলিশ তাঁকে জেরা করবে। সেই ভিডিয়ো কল চলে টানা ৪০ ঘণ্টা ধরে। এই সময়ের মধ্যে তাঁকে দিয়ে একাধিক কাজ করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি ইউটিউবারের।

অঙ্কুশ বলেন, ‘‘বাইরের জগত থেকে আমি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। ফোন তুলতে পারছিলাম না, কারও মেসেজ দেখতে পাচ্ছিলাম না। প্রতি মুহূর্তের স্ক্রিনশট দুষ্কৃতীদের হাতে চলে যাচ্ছিল। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করলেই আমাকে গ্রেফতার করা হবে বলছিল। সেই সঙ্গে আমার কাছের মানুষদের ক্ষতি করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল।’’ জোর করে একাধিক বার অনলাইনে টাকা দিতেও বাধ্য করা হয়েছিল অঙ্কুশকে।

এই ৪০ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অঙ্কুশের অনেক বন্ধু তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। অভিযোগ, তাঁদের কাছে অঙ্কুশের অজান্তেই তাঁর ফোন থেকে মেসেজ চলে যায়, ‘আমি ঠিক আছি’, ‘আমি ব্যস্ত আছি’। এতে বন্ধুদের সন্দেহ হয়েছিল। তাঁরা উদ্যোগী হওয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছেন, জানিয়েছেন অঙ্কুশ। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা আমার সঙ্গে যা খুশি করেছে। আমি কাঁদছিলাম, কিন্তু কিছু করতে পারছিলাম না। ৪০ ঘণ্টা পরে আমি আমার বোনের মেসেজ দেখতে পাই। আমার বন্ধুদের মেসেজ দেখতে পাই। ওরা না-থাকলে আমি হয়তো এখনও আটকে থাকতাম। এই অভিজ্ঞতা আর কারও হোক, আমি চাই না। এই ধরনের ফোন এলেই আপনারা পুলিশকে জানান। সতর্ক থাকুন।’’

উল্লেখ্য, ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনও। ফোন করে বা অন্য কোনও উপায়ে ওটিপি নম্বর জেনে নিয়ে টাকা হাতানোর কৌশল এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে। এখন সাইবার অপরাধীরা আরও ‘উন্নত’ কৌশলে জাল বিস্তার করছেন। তাতে পা দিয়ে ফেলছেন ছোট থেকে বড়, অনেকেই। বার বার প্রশাসনের তরফেও সতর্ক করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।

অন্য বিষয়গুলি:

Digital Arrest Youtuber Cyber Crime Online fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy