বিধায়ককে আশীর্বাদ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুকুল রায় নিয়ে তৃণমূলের অস্বস্তির মধ্যেই দলের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে চলেছেন সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ।
এর আগে দলেরই পরিচালিত সিউড়ি পুরসভার দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও পুরমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। তদন্তের আশ্বাস না পেয়ে বিধানসভার সামনে ধর্না পর্যন্ত করেছেন। সিউড়ি শহরে তাঁর সমর্থনে পড়েছে পোস্টার। এ বার সারদা-কাণ্ডে জেলে থাকা মন্ত্রী মদন মিত্রের প্রসঙ্গ তুলে দল আরও অস্বস্তি বাড়ালেন এই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল বিধায়ক।
রবিবার সিউড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করেন স্বপন। পরে মদন মিত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জেলে থাকার পরেও মন্ত্রী পদত্যাগ করছেন না। এটা কিন্তু মানুষ ভাল চোখে দেখছেন না।” গাওলা কেলেঙ্কারিতে সিবিআইয়ের হাতে ধরার পড়ার পরে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে লালুপ্রসাদ যাদবের পদত্যাগের প্রসঙ্গও তোলেন তিনি।
তৃণমূল সূত্রের অবশ্য খবর, সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়ে জেলে যাওয়া পরিবহণ মন্ত্রী নিজে ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা গ্রহণ করেননি। সেই দলনেত্রীকেও এ দিন বিঁধেছেন স্বপন। ক্ষোভের সুরে বলেছেন, “তৃণমূলে গণতান্ত্রিক কাঠামো নেই। নেত্রী কথা বলেন, আমরা মেনে চলি। আলোচনার কোনও জায়গা নেই। ঠিক হচ্ছে কিনা জানার অধিকার নেই।”
সিউড়ি পুরসভার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চেয়ে স্বপনকান্তি আগেই দলের রোষানলে পড়েছিলেন। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি দল। কিন্তু, বিধানসভা চত্বরে ধর্নায় বসার পরেই তড়িঘড়ি তাঁকে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত জানান তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাতেও দমেননি এই বিধায়ক। পাশাপাশি বিরোধী দলগুলি স্বপনের পদক্ষেপকে হাতিয়ার করে আসন্ন সিউড়ি পুরভোটে লড়তে চলেছে, সেটা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। সিউড়ি শহরে স্বপনের সমর্থনে কিছু পোস্টারও পড়েছে।
সিউড়িতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কিছু দাবি জানাতে চাওয়ার সময়ও সেই সমর্থনের কিছুটা আঁচ পাওয়া গেল। জনা পঞ্চাশেক কর্মী-সমর্থক এ দিনও বিধায়কের সঙ্গে ছিলেন। তাঁকে মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়াই হোক বা আলুন্দার দুই মহিলা সমর্থক মাথায় হাত দিয়ে বিধায়ককে আশীর্বাদ করার মধ্যেই কোথাও রইল, ‘তুমি এগিয়ে যাও আমরা সঙ্গে আছি-র বার্তা।’ স্বপন অবশ্য বলেন, “পোস্টার কে বা করা দিয়েছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নই। এখন আমার একটাই লক্ষ্য, পুরসভার টাকা নয়ছয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করানো। না হলে মানুষের কাছে আমি ছোট হয়ে যাব!’’ তিনি জানান, চলতি সপ্তাহে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর দেখা করে দুর্নীতি নিয়ে দরকারে সিবিআই বা ইডি-র তদন্ত চাইবেন।
তবে, স্বপনের সব চেয়ে বেশি ক্ষোভ, দল তাঁকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করলেও তিনি এখনও সাসপেনশনের চিঠি হাতে না পাওয়ায়। এই সূত্রেই খোদ মহাসচিবের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, “আজ থেকে সাত দিন অপেক্ষা করব। এই সময়ের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে দল সাসপেনশনের চিঠি দিলে ভাল। না হলে সাসপেনশন অর্ডার পেতে আমি উকিলের নোটিস পাঠাব। তার পরে পনেরো দিনের মধ্যেও যদি অর্ডার না পাই, তা হলে হাইকোর্টে যাব ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।” কেন আদালতে যাবেন, এ প্রশ্নের উত্তরে স্বপনের বক্তব্য, “সাসপেনশনের কথা শুধু মুখে বলা হচ্ছে। পার্থবাবু সাসপেনশন অর্ডার দেবেন না অথচ মিডিয়ায় মুখ খুলবেন, তা তো হয় না! যে হেতু আমি কোনও অন্যায় করিনি, তাই ওই চিঠি হাতে পেলে তার উত্তর দেওয়ার সুযোগ আমার কাছে থাকছে। তাই চিঠি না পেলে আদালতে যেতে বাধ্য হব।”
এ প্রসঙ্গে পার্থবাবুর বক্তব্য, “দলের যা করণীয় তা করা হয়েছে। উনি (স্বপন) যা করার করুন!”
দলে থেকে তাঁর এ ধরনের মন্তব্যে কি দলেরই ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে না? স্বপনকান্তির দাবি, “কখনও আমি দলের বিরুদ্ধে যাইনি। আমি বলেছি রাজ্য সরকারের নগরোন্নয়ন দফতরের বিরুদ্ধে।” তাঁর দাবি, সিউড়ি পুরসভার দুর্নীতি নিয়ে তাঁর সব চিঠি নগরোন্নয়ন মন্ত্রী (ফিরহাদ হাকিম) এবং ওই দফতরের অধীনে থাকা সংস্থা সুডাকে দেওয়া হয়েছে। আড়াই বছর ধরে বলেও ফল না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই তাঁকে এই রাস্তা নিতে হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy