Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
BJP

‘কাম ডিসেম্বর’ মন্ত্র জপছেন বিজেপি নেতারা! কিন্তু কী হবে বছর শেষে? কৌতূহলই সার পদ্মপত্রে

ডিসেম্বরের পরে তৃণমূল সরকার থাকবে না। বলেই চলেছেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা। কেউ কেউ তো মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার হতে পারেন বলেও মন্তব্যও করেছেন। কিন্তু কী হতে পারে? আঁধারে অনেক নেতাও।

কী হবে ডিসেম্বরে? জল্পনাই সার।

কী হবে ডিসেম্বরে? জল্পনাই সার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২২ ১৫:১৯
Share: Save:

সবাই ডাকছেন, ‘এসো ডিসেম্বর’। কিন্তু কেন ডাকছেন, সে জবাব অধিকাংশের কাছেই নেই। আসলে নেতারা বলছেন বলে তাঁরাও বলছেন। রাজ্য বিজেপির এক মাঝরি মাপের নেতা তো ‘শুভ বিজয়া’র বার্তায় লিখেছেন, ‘আসছে বছর, বিজেপির হবে।’ কিন্তু কেন লিখেছেন? তিনিও জবাব দিলেন বড় নেতাদের কায়দায়, ‘‘দেখুন না কী হয়!’’

হলিউডের বিখ্যাত ছবি ‘কাম সেপ্টেম্বর’ ছিল ‘রোমান্টিক কমেডি’। কিন্তু এ একেবারে ‘থ্রিলার’। এ ছবির ‘এন্ডিং’ ঠিক কতটা ‘হ্যাপি’, কিংবা আদৌ ‘হ্যাপি’ কি না, তা জানা নেই। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরা ‘তৃণমূল সরকার ডিসেম্বরে পড়ে যাবে’ বলে বার বার মন্ত্র জপলেও এ ছবির শেষটায় কী হবে তা নিয়ে ধারণা কর্মীদের তো নেই-ই, স্পষ্ট উত্তর নেই নেতাদের মুখেও। যা রয়েছে তার বেশিটাই ‘রহস্য’। সেই সঙ্গে গেরুয়া শিবির জুড়ে অপার কৌতূহল। কেউ কেউ বলছেন, এই কৌতূহলই সার। আবার অনেকের কথায়, কিছু তো একটা হবেই। কিন্তু কী হবে? প্রশ্নের জবাবে মিলছে, নিরুত্তর রহস্য মাখানো হাসি।

এটা শুরু হয় গত জুলাইয়ের শেষ বা অগস্ট থেকে। সেপ্টেম্বর পার হয়ে অক্টোবরেও সেই ‘হুঁশিয়ারি’ শোনা যাচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র ঘটনায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই গেরুয়া শিবির তৃতীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য শুরু করে। অগস্টেই শুভেন্দু দাবি করেন, ‘‘ডিসেম্বর মাসে এই সরকার কার্যত আর থাকবে না। ২০২৪ সালে বিধানসভা ও লোকসভার নির্বাচন একসঙ্গে হবে। দেখতে থাকুন।’’ এর পরে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হয়েছেন। একের পরে এক শিক্ষাকর্তাকে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বা সিবিআই। আর তার পর থেকেই ‘ডিসেম্বরে সরকারের পতন’ বলা আরও বেড়েছে।

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে সুকান্ত দাবি করেন, বছর ঘোরার আগেই বাংলার তৃণমূলের সরকার পড়ে যাবে। এমনকি, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেলে যেতে পারেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের অনুমান, ডিসেম্বরের মধ্যেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে। রাজ্যের বেশির ভাগ মন্ত্রী, আমি জানি না মুখ্যমন্ত্রীও তাঁদের মধ্যে থাকবেন কি না! কারণ এমনও হতে পারে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও জেলেই রইলেন। যদি তা হয়, তবে নিশ্চিত ভাবেই এই সরকারের পতন হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া এই সরকার আর কে চালাবে!’’ তবে কি শুধু কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে ভরসা রেখেই পদ্ম-নেতাদের এই অনুমান? যা শুনে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ একাধিক বার বলেছেন, ‘‘যদি সিবিআই-ইডি দিয়েই সরকার বদল হয়, তবে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এ সব পদে তদন্তকারী সংস্থার লোকেদেরই বসানো হোক না!’’

রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখেও ‘কাম ডিসেম্বর’ মন্ত্র শোনা গিয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দলের ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচির দিনে দিলীপ বলেছিলেন, “আমাদের নেতারা বলেছেন ডিসেম্বরে নাকি সরকার ভেঙে যাবে। আমি জানি না। কিন্তু যদি রোজ কয়েক জন মন্ত্রীর বাড়িতে অভিযান চলে, মন্ত্রী গায়েব হয়ে যান, সরকার কে চালাবে? নেতারা যদি পালিয়ে যান, বিধায়কেরা যদি বাংলা ছেড়ে পালিয়ে যান, বিধানসভাটা চলবে কী করে? স্বাভাবিক সরকার তো চালানোর সম্ভাবনা নেই। সে দিকেই যাচ্ছে পশ্চিমবাংলা।” যদিও পুজোর মুখে তিনি সুর একটু বদল করে পদ্মের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ বুঝিয়ে দেন যে সরকার ফেলে দেওয়ার পক্ষে নয় বিজেপি। তিনি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে সরকার ফেলে দেব, আমি তো কখনও বলিনি।’’ শুভেন্দু বা সুকান্তও কখনও সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলেননি। আর তাতেই বিজেপিকর্মীদের মধ্যে অন্য প্রশ্ন, সরকার ফেলা না হলেও সরকার পড়ে যাবে কী করে?

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। অন্য দিকে, ৭৭ আসনে জিতলেও এখন বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা কমে ৭০। রাজ্যে সাংসদ সংখ্যাও দুই কমে ১৬। গত দেড় বছরে কোনও নির্বাচনেই ভাল ফল হয়নি। আন্দোলন বলতে একমাত্র ‘নবান্ন অভিযান’ সাফল্য পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কোন অঙ্কে ডিসেম্বরে সরকার পতনের হুঁশিয়ারি? এ রাজ্যে বিজেপির কাছে মহরাষ্ট্রের মতো কোনও ‘একনাথ শিন্ডে’ রয়েছে বলেও কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। যদিও বিজেপির অভিনেতা নেতা মিঠুন চক্রবর্তী অনেক তৃণমূল বিধায়ক তাঁর এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে দাবি করছেন। কেউ কেউ ভাবছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে বিজেপির দখলে থাকা গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। সেই ভোটের ফলের কথা ভেবেই কি কোনও ইঙ্গিত? কিছুতেই অঙ্ক মেলাতে পারছেন না বিজেপি কর্মীরা। কিছুতেই ‘বছর শেষে সরকার শেষ’ ছবির স্ক্রিপ্ট পড়তে পারছেন না। পদ্মপত্রে তাই কৌতূহলই সার।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Suvendu Adhikari Sukanta Majumdar TMC Dilip Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy