The drugs that are prohibited for Manufacture and sale by the ministry of health and family welfare dgtl
Banned Medicine
প্যারাসিটামল থেকে অ্যামক্সিসিলিন, চেনা ওষুধের বহু কম্পোজিশনই দেশে নিষিদ্ধ
‘দাঁত ভাঙা’ নামের এই সব ওষুধ ক্ষতিকর কি না তা বোঝা তো দূর, নামই জানার কথা নয় আমজনতার। তা হলে কোন ওষুধে ভয়, বুঝবেন কী ভাবে? স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি তালিকা কাজে লাগতে পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২২ ১৪:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৩
ওষুধ ভেবে যা খাচ্ছেন, তা বিষ নয় তো! ভারতে তৈরি কাশির সিরাপ খেয়ে গ্যাম্বিয়ার ৬৬টি শিশুর মৃত্যু হতেই এই আতঙ্ক চেপে বসতে শুরু করেছে। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, ওই কাশির সিরাপে এমন এক তরল মেশানো হয়েছিল যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত। নির্দিষ্ট অনুপাতের বেশি ওই তরলের ব্যবহার দীর্ঘদিন ধরেই নিষিদ্ধ। বিষয়টি কোনও ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার না জানার কথা নয়। কিন্তু আমজনতার পক্ষেও বিষয়টি জানা সম্ভব নয়।
০২১৩
হরিয়ানার একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা মেইডেন ফার্মাসিউটিকাল লিমিটেড বানিয়েছিল ওই কাফ সিরাপ। হু জানিয়েছে, মেইডেনের তৈরি চারটি কাশির সিরাপে ব্যবহার করা হয়েছিল ডাইথিলিন গ্লাইকল বা ইথিলিন গ্লাইকল (ডিইজি)। মিষ্টি স্বাদের গন্ধ-বর্ণহীন এই তরল বহু ওষুধেই ব্যবহৃত হয়। তবে এটি কিডনির ক্ষতি করতে পারে। স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এর থেকে পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, মাথা যন্ত্রণা হতে পারে। হতে পারে প্রস্রাবে সমস্যা। এমনকি, মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
০৩১৩
গ্যাম্বিয়ায় এই ওষুধ খেয়ে যেমন পর পর মৃত্যু হয়েছে, ডাইথিলিন গ্লাইকল থেকে এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গত ৭০ বছরে অন্তত ১০ বার গণবিষক্রিয়া হয়েছে এই তরল থেকে। তার পরও বিভিন্ন ওষুধে এই তরলের ব্যবহার হয়ে আসছে। কারণ এর বদলে তুলনায় নিরাপদ যে গ্লিসারিন ওষুধে ব্যবহার করতে হয়, তার দাম বেশি।
০৪১৩
সব দিক নজরে রেখে ডাইথিলিন গ্লাইকলের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা মানবদেহের পক্ষে নিরাপদ। কিন্তু হু জানিয়েছে ওই কাফ সিরাপগুলির প্রত্যেকটিতেই সেই সীমারেখার অনেক বেশি পরিমাণে ডিইজির উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।
০৫১৩
কিন্তু ‘দাঁত ভাঙা’ নামের এই সমস্ত ওষুধ ক্ষতিকর কি না তা বোঝা তো দূরের কথা, তাদের নামই জানার কথা নয় আমজনতার। তা হলে কোন ওষুধ কখন ক্ষতিকারক হতে পারে তা তাঁরা বুঝবেন কী ভাবে? এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের একটি তালিকা কাজে লাগতে পারে।
০৬১৩
রোগের রকমফের অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ মিলিয়ে নতুন কম্পোজিশন করে তৈরি হয় নতুন ওষুধ। সেই সব কম্পোজিশনের কোনটি নিষিদ্ধ, কোন ওষুধের সঙ্গে কোন ওষুধকে মেলানো উচিত নয়, তা জানিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। মোট ৫১৮টি ওষুধ অথবা কম্পোজিশন রয়েছে সেই তালিকায়। এর মধ্যে যে সমস্ত ওষুধ প্রায়ই ব্যবহার করা হয়, তেমনই কিছু ওষুধের নিষিদ্ধ কম্পোজিশনের হদিস রইল এখানে।
০৭১৩
প্যারাসিটামল— ব্যথা-জ্বরে প্যারাসিটামল খেয়ে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে অনেকেরই। অনেকে তার আগে চিকিৎসকের পরামর্শও নেন না। এই প্যারাসিটামলের সঙ্গে প্রায় ১০০টি ওষুধের কম্পোজিশন নিষিদ্ধ বলে জানানো হয়েছে এই তালিকায়। যেমন নিমেস্যুলাইডের সঙ্গে প্যারাসিটামলের ডিসপার্সেবল ট্যাবলেট, প্যারাসিটামলের সঙ্গে ফিনাইলফ্রাইন, ক্যাফিন এবং ক্লোরফেনিরামাইনের কম্পোজিশন, এর সঙ্গে ব্রোমহেক্সাইন এবং গুয়াইফেনেসিনের কম্পোজিশনও রয়েছে নিষিদ্ধ তালিকায়। এ ছাড়া, প্যারাসিটামলের সঙ্গে প্রপিফেনাজোন এবং ক্যাফিনের কম্পোজিশন, সেট্রিজিন এবং ক্যাফিনের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি ওষুধ, ন্যাপ্রোক্সেন এবং প্যারাসিটামল, ডাইক্লোফেনাক এবং ফ্যামোটিডাইনের সঙ্গে কম্পোজিশন। এ ছাড়াও আরও অনেক ওষুধের কম্পোজিশন রয়েছে এই তালিকায়।
০৮১৩
অ্যামোক্সিসিলিন— ব্রোমেক্সাইন সঙ্গে কিংবা ডাইক্লোক্সাসিলিনের সঙ্গে অ্যামোক্সিসিলিনের কম্পোজিশন নিষিদ্ধ। আবার সেফিক্সাইম, পটাশিয়াম ক্লভ্যুলানিক অ্যাসিডের সঙ্গে অ্যামোক্সিসিলিন মিলিয়ে তৈরি ওষুধও নিষিদ্ধ। ২০১৯ সালে অ্যামোক্সিসিলিনের সঙ্গে প্যারাসিটামল, ডাইকোফ্লেনাক সোডিয়াম, ক্লোক্সাসিলিন, প্যান্টোপ্রাজোল, ল্যাকটিক অ্যাসিড বাসিলাস এবং সেরারাটিয়োপেপটিডেসের একটি কম্পোজিশনকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
০৯১৩
নিমেস্যুলাইড— ব্যথার জন্য, এমনকি অস্টিয়োআর্থারাইটিসের চিকিৎসাতেও নিমেস্যুলাইডের ব্যবহার হয়। সেই নিমেস্যুলাইডের সঙ্গে ডাইকোফ্লেনাকের কম্পোজিশন, সেট্রিজিন এবং ক্যাফিনের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি ওষুধ, টাইজানিডাইনের সঙ্গে, সেরারাটিয়োপেপটিডেসের সঙ্গে, প্যারাসিটামলের ইঞ্জেকশনের সঙ্গে, ডাইক্লোমাইনের সঙ্গে— সব মিলিয়ে মোট ২১টি কম্পোজিশন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১০১৩
অ্যাজিথ্রোমাইসিন— করোনার সময়ে আচমকাই চাহিদা বেড়েছিল অ্যাজিথ্রোমাইসিনের। কণ্ঠনালীতে সংক্রমণের অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবেও এই ওষুধ পরিচিত। কিন্তু সেই অ্যাজিথ্রোমাইসিনের সঙ্গেও অন্য ওষুধের কম্পোজিশন বিপজ্জনক হতে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তালিকা অনুযায়ী সেফিক্সাইমের সঙ্গে অ্যাজিথ্রোমাইসিন নিষিদ্ধ। লেভোফ্লাক্সাসিন, ওফ্লোক্সাসিন, সেফপোডোক্সাইম, অ্যাম্ব্রোক্সোল, অ্যাসিব্রোফাইলিন, ওরিনডাজোল এবং ফ্লুকোনাজোলের সঙ্গে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মিশ্রণও নিষিদ্ধ করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এ ছাড়া, আরও বেশ কয়েকটি কম্পোজিশন রয়েছে নিষিদ্ধ তালিকায়।
১১১৩
ওমেপ্রাজোল— হজমের ওষুধ হিসাবে ওমেপ্রাজোল খেতে অভ্যস্ত অনেকেই। অথচ এই ওমেপ্রাজোলের সঙ্গেই প্যারাসিটামল এবং ডাইকোফ্লোনাকের কম্পোজিশন নিষিদ্ধ করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এ ছাড়া, র্যান্টিডাইনের সঙ্গে ওমেপ্রাজোল, ড্রোটাভেরাইনের সঙ্গে ওমেপ্রাজোল এবং ওনডানসেট্রনের সঙ্গে ওমেপ্রাজোলের কম্পোজিশনেও ওষুধ উৎপাদন করা এবং বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র।
১২১৩
র্যানিটিডাইন— অম্লনাশক হিসাবে র্যানিটিডাইন গোত্রের ওষুধ প্রায়শই ব্যবহার করা হয়। র্যানটাক ওডি বা জ্যানট্যাক জাতীয় ওষুধ অম্বল বা অজীর্ণ রোগ প্রতিরোধে বহুল ব্যবহৃত। র্যানিটিডাইনের সঙ্গে বিভিন্ন ওষুধের অন্তত ১১টি কম্পোজিশনের উৎপাদন এবং বিক্রিতে রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্যে প্যারাসিটামল, ডাইসাইক্লোমাইন, মেফেনামিক অ্যাসিডের সঙ্গে কম্পোজিশন রয়েছে। এ ছাড়া ম্যাগালড্রেট, প্যানক্রিয়াটিন, ডম্পেরিডোন, ম্যাগালড্রেট এবং সিমেথিকোনের সঙ্গে, ডম্পেরিডোন এবং সিমেথিকোনের সঙ্গে, ম্যাগালড্রেটের সঙ্গে, লেভোসেট্রিজাইনের সঙ্গে, ডাইসাইক্লোমাইন এবং ক্লিডিনিয়াম ব্রোমাইডের সঙ্গে, ওমেপ্রাজোলের সঙ্গে, নিমেস্যুলাইড এবং ডাইসাইক্লোমাইনের সঙ্গে, ড্রোটাভেরাইনের সঙ্গে কম্পোজিশন এবং আরও বেশ কয়েকটি কম্পোজিশনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
১৩১৩
এমনই আরও অনেক ওষুধের কম্পোজিশন, যার উৎপাদন এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক, তার বিশদ তালিকা পাওয়া যাবে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অরগানাইজেশনের ওয়েবসাইটে। তাতে নজর রেখে বিপজ্জনক ওষুধ থেকে আগাম সতর্ক থাকা যেতে পারে।