বক্তা: ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ়, কলকাতা-র প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন। মঙ্গলবার রবীন্দ্র সদনে। ছবি: সুমন বল্লভ
‘বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই ১৪২৬ সনের তাৎপর্য কী?’ জানতে চাইলেন অমর্ত্য সেন। তার পর জানালেন, ‘হজরত মহম্মদের মক্কা ছে়ড়ে মদিনায় চলে যাওয়ার পর কতগুলো বছর কেটে গেল, এটা তারই হিসেব।’ অবশ্য, মিশ্র হিসেব। প্রথম ৯৬৩ বছর গোনা হয়েছিল ইসলামি চান্দ্রমাস অনুসারে, তার পরের বছরগুলো হিন্দু সৌরমাসের হিসেবে।
ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ়, কলকাতা-র প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা করলেন অমর্ত্য সেন। বিষয়, বাঙালি হওয়া। তাঁর বক্তব্যের মাঝপথেই পাশের শ্রোতার স্বগতোক্তি, ‘পশ্চিমবঙ্গের সব বাঙালিকে ধরে এনে এই বক্তৃতাটা শোনানো উচিত!’ কেন, এক বাক্যে সেই প্রশ্নের উত্তর দিলে বলতে হয়, ‘বাঙালি’ পরিচিতির তন্তুর মধ্যে হিন্দু-মুসলিম উভয়েরই বৈশিষ্ট্য এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে এই পরিচিতিকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাঙা অসম্ভব, এই একটা কথা দ্ব্যর্থহীন ভাবে বললেন অধ্যাপক সেন।
হিন্দুঘরে যাবতীয় পূজা-পার্বণে লাগা বাংলা ক্যালেন্ডার যদি তার একটা উদাহরণ হয়, অর্থনীতি তার অন্য দিক। ইংরেজিতে দেওয়া বক্তৃতায় ষোড়শ শতাব্দীর চণ্ডীমঙ্গলের প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক সেন মনে করিয়ে দিলেন, বঙ্গে মুসলমানদের আগমনে হিন্দুরা অসন্তুষ্ট হননি, বরং খুশি হয়েছিলেন, কারণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় বাঘের উৎপাত কমেছিল বহুলাংশে। যে ঢাকার মসলিন এক কালে বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল, এমনকি, অ্যাডাম স্মিথকে দিয়েও বলিয়ে নিয়েছিল বাংলার সমৃদ্ধির কথা, তা তৈরি হয়েছিল হিন্দু-মুসলমানের সহযোগিতায়।
অবশ্য, শুধুই কি হিন্দু-মুসলমানের যৌথতা? আদি সংস্কৃতে শব্দের লিঙ্গভাগ যেখানে প্রবল, সেখানে বাংলা ভাষা, বিশেষত ক্রিয়াপদ, লিঙ্গনিরপেক্ষ কেন? অমর্ত্য জানালেন, বাংলা ভাষা এ পথে গিয়েছে মাগধী প্রাকৃতের বিবর্তনের সূত্রে। আবার, দীর্ঘ এক হাজার বছরের বৌদ্ধ শাসন বাংলার সংস্কৃতিতে এমন সব প্রভাব রেখে গিয়েছে, ভারতের অন্য কোনও অঞ্চলে যার তুলনা মেলা ভার।
চর্যাপদ থেকে শুরু করে মুকুন্দরাম-রবীন্দ্রনাথ পেরিয়ে ভাষা আন্দোলনে আসার দীর্ঘ পথে গ্রহণ-বর্জনে তৈরি হয়েছে যে বাঙালিসত্তা, তা কি ঘৃণার রাজনীতিকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে? অমর্ত্য সেন আশাবাদী, তবে একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিতে ভোলেন না, সেই বাঙালিত্বে পৌঁছনোর আগে হয়তো পেরোতে হবে বহু ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ। ভাষা আন্দোলনে পৌঁছনোর আগে যেমন ছেচল্লিশের দাঙ্গার পাপ বইতে হয়েছে বাঙালিকে।
যে পরিচিতির মজ্জায় এত বৈচিত্র্য আর এত একতা, বাঙালির কাছে কি তার চেয়েও জরুরি কোনও পরিচিতি হতে পারে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy