কোথায় গেল পাচারের গরু? আর কোথায়ই বা গেল ২৫ লক্ষ টাকা?
প্রশ্ন করছেন স্বরূপনগরের ব্যবসায়ী ইউনুস আলি মণ্ডল। অন্তরালে থেকে সম্প্রতি হোয়াটস অ্যাপ বার্তায় যাঁকে ‘আন্তর্জাতিক গরু পাচারকারী’ বলেছেন প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ। বলেছেন, ইউনুসকে সামনে রেখে মিথ্যা মামলায় তাঁকে ফাঁসাতে খড়্গহস্ত হয়েছে রাজ্য সরকার।
ইউনুসের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, ‘‘পাচারের গরু কি কোনও দিন আটকেছেন ভারতী? যদি আটকে থাকেন, তবে সিজার লিস্ট কোথায়?’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘এত দিন তো ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন উনি (ভারতী)। তা হলে আমার মতো আন্তর্জাতিক গরু পাচারকারীকে সামনে পেয়েও গ্রেফতার করলেন না কেন?’’
মোবাইল-বার্তায় ভারতী দাবি করেছেন, ইউনুস জাল টাকার কারবারেও জড়িত। এ সব বলে ভারতী তাঁর সামাজিক সম্মানহানি করতে চাইছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ইউনুস। তাঁর কথায়, ‘‘তদন্ত করে দেখা হোক আমি পাচারকারী, নাকি ভারতী আমার ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।’’
কোন টাকার কথা বলছেন ইউনুস? তিনি জানান, ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁর একটি গাড়ি খড়্গপুরের সাহাদাতপুরে দুর্ঘটনায় পড়ে। গা়ড়িতে ছিল তাঁর ব্যবসার নগদ ৪৫ লক্ষ নগদ টাকা। দুর্ঘটনায় জখম হন ইউনুসের দাদা ও গাড়ির চালক। পুলিশ এসে গাড়ি ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। বলা হয়, তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের সঙ্গে আলোচনা করে সে সব ফেরত দেওয়া হবে।
ইউনুস আলি মণ্ডল
ইউনুসের অভিযোগ, এরপর থেকেই গাড়ি ও টাকার জন্য তাঁকে ঘোরাতে থাকে পুলিশ। ভারতীদেবীর সঙ্গে দেখা করলে তিনিও ধমক-ধামক দেন। কোথা থেকে এত
টাকা এল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরে বলেন, তাঁর দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে টাকা ফেরত মিলবে।
কিন্তু একটা সময়ের পরে ভারতীদেবী বা সুজিত কেউই তাঁর ফোন ধরতেন না বলে অভিযোগ ইউনুসের। নবান্নের প্রশাসনিক কর্তা এবং ডিজির দ্বারস্থ হন ওই ব্যবসায়ী। সে কথা জানতে পেরে ভারতীদেবী ও তাঁর বাহিনী নানা ভাবে ইউনুসকে বিড়ম্বনায় ফেলতে উঠেপ়ড়ে লাগেন বলে অভিযোগ। খড়্গপুরে ইউনুসের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ধরা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ তল্লাশিতেও আসে তাঁর স্বরূপনগরের বাড়িতে। ইউনুস জানিয়েছেন, টাকা না পেয়ে এক সময়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। ভারতী পরে প্রস্তাব দেন, অভিযোগ তুলে নিলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। মামলা করার পর দিনই ২০ লক্ষ টাকা এবং দুর্ঘটনায় পড়া গাড়িটি ফেরতও দেওয়া হয়। ইউনুসের দাবি, মামলা তুললে বাকি ২৫ লক্ষ টাকাও দেওয়া হবে বলে কথা দেন ভারতী। সেই ভরসায় মামলা তুলে নিলেও বাকি ২৫ লক্ষ আর ঘরে ফেরেনি বলে অভিযোগ ইউনুসের।
স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া বাজারে গাড়ির টায়ারের দোকান আছে ইউনুসের। বিদেশে ফল পাঠানোর ব্যবসাও আছে। সীমান্ত বাণিজ্যে তাঁর ৭টি ট্রাক খাটে। হঠাৎগঞ্জে গরু কেনাবেচার হাটেও দু’টি ট্রাক ব্যবহার হয় তাঁর। ইউনুসের দাবি, তিনি আইন মেনেই সব ব্যবসা করেন। পুলিশের খাতায় কোনও অপরাধের রেকর্ডও নেই। ভারতীকে তাঁর বার্তা, ‘‘সাহস থাকলে আসুন, আমরা দু’জনেই ন্যায়ালয়ে মুখোমুখি হই। আমি অন্যায় করলে সাজা হোক। আপনি অন্যায় করলে তা-ও মাথা পেতে নিন।’’
ইউনুসের উত্তর পেতে সম্ভবত ভারতীর পরবর্তী মোবাইল বার্তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy