পেগাসাস-কাণ্ডে সংসদ-সহ জাতীয় রাজনীতিতে শোরগোল ফেলেছে তৃণমূল। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্রমশই নিজেকে মোদী-বিরোধী শিবিরের ‘মুখ’ করে তুলছেন। সক্রিয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদের বাদল অধিবেশনে রোজই খবরের শিরোনামে তৃণমূল। তাদের সরকার-বিরোধী সুর এতটাই চ়়ড়া এবং মনোভাব এতটাই জঙ্গি যে, দলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনকে গোটা অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করেছেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। এহ বাহ্য, আগামী সপ্তাহেই দিল্লি যাচ্ছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে দেখা করার জন্য সময় দিয়েছেন। বাংলায় বিপুল জয়ের পর এই প্রথম দিল্লি যাচ্ছেন মমতা। সেখানে বিরোধী শিবিরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও হওয়ার কথা তাঁর। মমতা যাবেন সংসদ ভবনেও। সেখানে দলের সাংসদদের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
কিন্তু সেই সাংসদদের মধ্যে থাকবেন না শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারী। কাঁথি এবং তমলুকের দুই তৃণমূল সাংসদ লোকসভার বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে দিল্লি যাননি। বিধানসভা ভোটের আগে দু’জনকে নিয়েই বিস্তর জল্পনা এবং আলোচনা হয়েছিল। প্রতিনিয়ত তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়ছিল। পক্ষান্তরে, নৈকট্য বাড়ছিল বিজেপি-র। প্রবীণ সাংসদ শিশির যেমন কাঁথিতে অমিত শাহের সভামঞ্চে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অবশ্য তেমনকিছু করেননি। তবে তিনি হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর একটি সরকারি কর্মসূচির মঞ্চে এলাকার সাংসদ হিসেবে হাজির ছিলেন। অমিত-সভায় যোগদানের ছবি ইত্যাদি দেখিয়ে শিশিরের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোঘী আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই লোকসভার স্পিকারকে চিঠি লিখেছে তৃণমূল। লোকসভার স্পিকারের সচিবালয় থেকে শিশিরকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। যদিও দিব্যেন্দুর বিষয়ে তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি বাংলার শাসকদল। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে দিব্যেন্দুর দূরত্ব বেড়েছে বই কমেনি। সংসদের বাদল অধিবেশনে যখন তৃণমূলের সাসংদরা উভয় কক্ষেই সোচ্চার, তখন শিশির-দিব্যেন্দু তার ধারেপাশে নেই।
কোথায় তাঁরা? তাঁরা কি তৃণমূল থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছেন?
এই প্রশ্নের জবাব পেতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল দিব্যেন্দুর সঙ্গে। প্রশ্নের জবাবে তমলুকের সাংসদ জানিয়েছেন, বাবা এবং মায়ের অসুস্থতার জন্য তিনি কাঁথির বাড়িতেই আছেন। দিল্লি যাননি। দিব্যেন্দুর কথায়, ‘‘আমি এবং বাবা (শিশির)— দু’জনেই তৃণমূলে আছি। অন্য কোনও দলে যাইনি। যাওয়ার প্রশ্নও নেই। কিন্তু আমার বাবা অসুস্থ। মায়ের শরীরও ভাল না। তাই আমি ওঁদের এই অবস্থায় ফেলে রেখে এখনও দিল্লি যেতে পারিনি। তবে বাদল অধিবেশন তো ১৩ অগস্ট পর্যন্ত চলবে। তার মধ্যএ আমি দিল্লি গিয়ে অধিবেশনে যোগ দেব।’’ পাশাপাশিই দিব্যেন্দু দাবি করেছেন, কাঁথির সাংসদ শিশির তাঁর অসুস্থতার কথা জানিয়ে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। তবে পাশাপাশিই দিব্যেন্দু জানিয়েছেন, দলের কারও সঙ্গে তাঁর বা তাঁদের তেমন কোনও যোগাযোগ নেই।
ঘটনাচক্রে, শিশিরের পুত্র এবং দিব্যেন্দুর দাদা শুভেন্দু এখন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। যিনি মমতা সরকারের চূড়ান্ত বিরোধিতা করছেন এবং সমস্ত দিক থেকে শাসকদলকে বিড়ম্বনায় ফেলার চেষ্টা করছেন। মুকুল রায়ের দলত্যাগ নিয়ে শুভেন্দু আইনি পথে সক্রিয় হয়েছেন। মুকুলের পিএসি চেয়ারম্যান হওয়া নিয়েও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন শুভেন্দু। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পরিবারের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যে তৃণমূলের কাছে ‘ব্রাত্য’ হবেন, তা অনুমেয়। বস্তুত, ভোটের আগেই পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতির পদ থেকে শিশিরকে সরিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। তাঁকে সরানো হয়েছিল দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকেও। তখন থেকেই অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করেছিল। শিশিরের মতো দিব্যেন্দু কোনও দলীয় বা সরকারি পদে ছিলেন না। কিন্তু তাঁর সঙ্গেও দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।
ভোটের ফলাফলে বিজেপি-র বিপর্যয়ের পর থেকে ওই দুই সাংসদ তৃণমূলে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। সেই আবহেই তাঁরা সংসদের অধিবেশন এড়িয়ে চলছেন কি না, জানতে চাওয়ায় দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘তার কোনও প্রশ্নই নেই। আমরা তো তৃণমূলেই আছি। অন্য কোনও দলে তো যোগ দিইনি। শারীরিক কারণে বাবা দিল্লি যেতে পারছেন না। আমিও তাঁর এবং আমার মায়ের অসুস্থতার কারণে এখনও পর্যন্ত দিল্লি যেতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy