শারীরিক কার্যকলাপের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি। কেবল শরীর নয়, মনকেও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে এই ভিটামিন। ভিটামিন ডি-র মাত্রা কম থাকলে বিষণ্ণতা থেকে শুরু করে ক্যানসার, নানাবিধ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর এই ভিটামিনের মূল উৎস, সৌরালোক। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলেই দেহে এই ভিটামিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ভারতের মতো ক্রান্তীয় দেশে রোদের অভাব না থাকলেও ভিটামিন ডি-র ঘাটতি প্রবল।
দেশে ভিটামিন ডি-র ঘাটতির হার অঞ্চলভেদে ৪০ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত। কখনও কখনও সেটি ৮০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই। ভিটামিন ডি-র ঘাটতি নিয়ে দুশ্চিন্তা দেশ জুড়ে। একাধিক গবেষণায় এর কারণ হিসাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে খাদ্যাভ্যাস, গায়ের গাঢ় রং এবং বায়ু দূষণকে। অন্দরমুখী জীবনযাত্রা, অর্থাৎ রোদ এড়িয়ে চলার অভ্যাসও এর নেপথ্যে রয়েছে। তাই সূর্যালোক ছাড়াও অন্য স্বাস্থ্যকর উপায়ে ভিটামিন ডি-র মাত্রা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি পাচ্ছেন কি না, তা নিশ্চিত করার ৬টি উপায়:
শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা বাড়ানো
ভিটামিন ডি সঠিক ভাবে রক্তে সরবরাহের জন্য ম্যাগনেশিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘ম্যাগনেশিয়াম ভিটামিন ডি-র সক্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে হাড় মজবুত হয়। ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি ভিটামিন ডি-র ঘাটতিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।’ তাই শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রার দিকে নজর রাখতে হবে।

ভিটামিন ডি-র মাত্রা বাড়াতে কী খাবেন? ছবি: সংগৃহীত।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
দুগ্ধজাত খাবার থেকে ভিটামিন ডি পেতে পারে শরীর। দুধ এবং দইয়ের মতো পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ বেশি থাকে, কারণ এই ভিটামিনটি চর্বিতে দ্রবণীয়। এ ছাড়াও কমলালেবুর রস, স্যামন মাছ, সার্ডিন মাছ, কড লিভার অয়েলও ভিটামিন ডি-র ভাল উৎস।
খাবারের সঙ্গে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট
ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন। অর্থাৎ লিপিডে মিশে থাকতে পারে এটি। সাধারণত তেলের ফর্মুলেশনে দেওয়া হয় সাপ্লিমেন্ট, যাতে শরীরে খুব সহজেই শোষিত হতে পারে। এমন খাবারের সঙ্গে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত, যেগুলির মধ্যে স্বাস্থ্যকর চর্বি রয়েছে। যেমন অ্যাভোকাডো, বীজ, বাদাম, সার্ডিন এবং স্যামন মাছ। কিছু গবেষণায় জানা গিয়েছে, দিনের সবচেয়ে বড় মিলের সঙ্গে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খেলে সবচেয়ে ভাল ফল মেলে।
ভিটামিন কে-র ঘাটতি মেটানো
ভিটামিন ডি হাড়ের কার্যকারিতার সঙ্গে জড়িত। তবে ভিটামিন ডি একা নয়, ভিটামিন কে-ও চর্বিতে মিশে থাকা ভিটামিন, এবং এটিও হাড়ের স্বাস্থ্যরক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করে। হাড়ের ভিতরে ক্যালশিয়াম প্রবেশ করতে পারছে কি না, সে দিকে নজর রাখে ভিটামিন কে। ভিটামিন ডি-র সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে ভিটামিন কে। তাই এই দুই ভিটামিন যদি শরীরে একসঙ্গে প্রবেশ করে, তাতে উপকার বেশি। এমনকি হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
আরও পড়ুন:
সকালে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা
সকাল ১০টার আগে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি বৃদ্ধি পায়। আবহাওয়া, ত্বকের রং এবং সানস্ক্রিনের ব্যবহার, এইগুলি মাথায় রেখে সূর্যের আলো গ্রহণ করলে ভিটামিন ডি-র ঘাটতিও মেটে, অন্য সমস্যার ঝুঁকিও থাকে না।
নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা
ভিটামিন ডি-র অভাব আছে কি না, তা জানার একমাত্র উপায় হল রক্ত পরীক্ষা। নিয়মিত ভিটামিন ডি-র পরীক্ষা করালে বোঝা যাবে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না। যে হেতু এই দেশে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি খুবই সাধারণ শারীরিক সমস্যার মধ্যে পড়ে, তাই পরীক্ষা করিয়ে চটজলদি পদক্ষেপ করা জরুরি।