সময়ের আগেই গরম পড়েছে। তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছে আবহাওয়া দফতর। এখন এমনিতেই গলদঘর্ম অবস্থা। তার উপর গরমের সময় চোখে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বেড়ে যায়। বিশেষ করে কনজাঙ্কটিভাইটিসের সংক্রমণ ঘটে এই সময়ে। মূলত ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে এই অসুখ হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে ফুলের রেণু থেকে অ্যালার্জিও এই অসুখের কারণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অসুখটিকে তাচ্ছিল্য করেন সাধারণ মানুষ। আর তাতেই আরও বেড়ে যায় সমস্যা।
ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ক্ষতিকর ছত্রাকদের চোখরাঙানিতেই চোখের মণির চারপাশে লাল রং ধরে। সেই সঙ্গে অনবরত জল পড়া, জ্বালা-যন্ত্রণা, পিচুটি, চুলকানি— সব মিলিয়ে বড় কষ্টকর ব্যাপার! চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই রোগেরই নাম কনজাঙ্কটিভাইটিস। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথমে এক চোখে সমস্যা শুরু হয়। পরে অন্য চোখেও সংক্রমণ ঘটে। চোখের সাদা অংশ ও মণির চারপাশই আক্রান্ত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ এই রোগটিকে হালকা ভাবে নেন। কিন্তু ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে এই রোগ দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। ক্ষতি হতে পারে কর্নিয়ারও, এমনটাই জানিয়েছেন চক্ষুরোগ চিকিৎসক সৌমেন মণ্ডল। তিনি জানান, কনজাঙ্কটিভাইটিস ভাইরাল রোগ, তাই একে আটকানোর তেমন কোনও উপায় নেই। বার বার হাত ধুলে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে ঝুঁকি খানিকটা এড়ানো যায়। তবে একেবারেই এই রোগ হবে না, তা বলা যায় না। এই রোগ না হওয়ার কোনও ওষুধ কিংবা ভ্যাকসিন নেই। তাই সাবধানতাই একমাত্র পথ।
আরও পড়ুন:
কনজাঙ্কটিভাইটিস থেকে বাঁচতে
স্ট্যাফাইলোকক্কাস নিউমোনি ও হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে গরমের সময়ে কনজাঙ্কটিভাইটিসের সমস্যা বেশি হয়। এই সময়টাতেও ওই ব্যাক্টেরিয়াদের বাড়বাড়ন্ত হয় বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাঁর পরামর্শ, বাড়িতে কারও কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে, তাঁর ব্যবহার করা কোনও জিনিসপত্র, যেমন তোয়ালে, রুমাল, বিছানার চাদর ব্যবহার না করাই ভাল। আক্রান্তের থেকে দূরেই রাখতে হবে শিশুদের।
অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণেও কনজাঙ্কটিভাইটিস হয়। কর্নিয়ায় ছোট ছোট দানা তৈরি হয়। যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে, আঠালো তরল বার হয়, পিচুটি জমে যায় চোখে। সে ক্ষেত্রে নিজে থেকে আইড্রপ না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে চোখে বার বার জলের ঝাপটা দিতে পারেন। দিনে চার থেকে পাঁচ বার ঈষদুষ্ণ গরম জলে এক চিমটে নুন দিয়ে সেই জলে তুলো ভিজিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে পারেন। তুলো চোখের উপর রেখে গরম ভাপও নিতে পারেন। এতে আরাম পাওয়া যায়।
রোগ হলেই তো বাড়িতে বসে থাকা যায় না, কাজে বেরোতেই হয়। তাই বাইরে গেলে রোদচশমা পরা খুব জরুরি। আর বার বার চোখে হাত দেবেন না। সঙ্গে সব সময় পরিষ্কার রুমাল বা তুলো রাখতে হবে, সেটি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করে নিতে হবে।
কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।