পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে উত্তুরে বাতাস কাঁপুনি ধরালেও মহানগরে শীত এখনই আসছে না। ফাইল চিত্র।
হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় উত্তরবঙ্গের তরাইয়ে শীত একটু আগেভাগেই হাজির হয়। কিন্তু এ বার শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছে পুরুলিয়া, বীরভূম!
রবিবার পুরুলিয়ার এবং বীরভূমের শ্রীনিকেতনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৪.৫ এবং ১৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৫.৪, ১৬.৪ এবং ১৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হাওয়া অফিসের খবর, তরাইয়ের জেলাগুলিকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ছে পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়ার মতো দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিও।
গত এক দশকের তথ্য বলছে, বীরভূমের ক্ষেত্রে নভেম্বরের অন্তত তৃতীয় সপ্তাহের আগে তাপমাত্রা এত নীচে নামতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ সময়েই নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের আগে বীরভূমে এমন পারদ পতন দেখা যায় না। তা হলে এ বার কেন? আবহবিদদের একাংশের মতে, এ বার উত্তর ভারতে আগেভাগেই প্রবল তুষারপাত হয়েছে। তার উপর দিয়ে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে আসছে। সেই হাওয়াই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে ঢুকে তরতরিয়ে তাপমাত্রা নামাচ্ছে।
তাপমাত্রার নিরিখে পিছিয়ে নেই কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকাগুলিও। এ দিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কলকাতার অদূরে ব্যারাকপুরে রাতের তাপমাত্রা নেমেছে ১৭.২ ডিগ্রিতে। আবহবিদদের মতে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের আগে কলকাতায় তাপমাত্রা সে ভাবে নামে না। গত এক দশকের হিসেবে স্পষ্ট, বেশির ভাগ সময়েই সব থেকে কম ১৭-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। তবে গত বছর ২৪ নভেম্বর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ১৪ ডিগ্রিতে। সেটাই এক দশকে নভেম্বরের সর্বনিম্ন। তবে হাওয়া অফিসের খবর, ১৮৮৩ সালের ২২ নভেম্বর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ১০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেটাই এ যাবৎকালের সব থেকে কম।
প্রসঙ্গত, এ বার উত্তর ভারতের শীতের আগেভাগে হাজিরার সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরের জলের উষ্ণতা কম থাকার (লা নিনা পরিস্থিতি) সম্পর্ক রয়েছে বলে আবহবিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন। বিভিন্ন আবহাওয়া এবং পরিবেশ গবেষণা সংস্থা এ-ও জানিয়েছে যে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই পর্বে উত্তর ভারতে এ বছর রেকর্ড সৃষ্টিকারী শীত পড়বে। প্রবল হবে শৈত্যপ্রবাহ। তার জেরে জনজীবন বিপর্যস্তও হতে পারে। বাতাস অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়ায় বাড়তে পারে দূষণের মাত্রাও। কারণ, তাতে বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন কণা কার্যত জমাট বেধে থাকবে।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই মনে হচ্ছে, শীতকাল বুঝি এসেই গেল। কেউ বা ‘শীতকাল কবে আসবে...’ বলে কবিতার লাইন আউড়ে উঠছেন। তবে আবহবিদদের বক্তব্য, পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে উত্তুরে বাতাস কাঁপুনি ধরালেও মহানগরে শীত এখনই আসছে না। কোনও বাঁধাধরা নির্ঘণ্ট না থাকলেও মহানগরে শীত থিতু হতে গেলে রাতের তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছতে হবে। এ ছাড়াও, আবহাওয়ার আরও কিছু বৈশিষ্ট্য খতিয়ে দেখে তবেই শীতের ঘণ্টা বাজায় হাওয়া অফিস।
এ দিন আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রাজ্যের উত্তর এবং দক্ষিণ, দু প্রান্তেই সমতল এলাকায় আগামী দিন তিনেক পরিস্থিতি এমনই থাকবে। তার পর থেকে ফের ধাপে ধাপে কমবে রাতের তাপমাত্রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy