ফাইল চিত্র।
দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে পেট্রল, ডিজ়েল, রান্নার গ্যাসের আকাশছোঁয়া দামে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ দানা বাঁধা নিয়েও দলের মাথাব্যথা যথেষ্ট। কিন্তু সেই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অন্তত বেশ কিছু ক্ষণের জন্য পাশে সরিয়ে রেখে রবিবার বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে আলোচ্য বিষয় হয়ে রইল পশ্চিমবঙ্গ! এ রাজ্যে ভোট, এমনকি উপনির্বাচন মিটে যাওয়ার পরেও।
এই বিষয়ে এ দিন প্রারম্ভিক বক্তব্যেই সুর চড়ালেন দলের সর্ব ভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। তুললেন রাজনৈতিক সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সময়ে ও পরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মনোভাব দেখিয়ে বিজেপি কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের মদতপুষ্ট সমাজবিরোধীরা।’’ তাঁর দাবি, গণতান্ত্রিক পথে লড়াই চালিয়েই রাজ্যে নতুন অধ্যায় শুরু করবে দল।পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের নিন্দা ও আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর প্রশ্নেও প্রস্তাব আনেন বিজেপি নেতৃত্ব। নড্ডা ছাড়াও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত এবং মণিপুরে দলের রাজ্য সভাপতি এ সারদা দেবী পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা প্রসঙ্গে সরব হন। কর্মসমিতির বৈঠকে তৃণমূলকে লক্ষ্য করে এ ভাবে আক্রমণ শানানো তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত অনেকের।
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় অবশ্য বলেন, “রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা হয়েছে, এটা আমরা স্বীকারই করি না। বিধানসভা ভোটের ফল বেরিয়েছে ২ মে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ৫ মে। তার পর থেকে আর হিংসা হয়নি। বিজেপি যে গল্প চালাবার চেষ্টা করছে, তা অসত্য। মানুষ সেটি বিশ্বাস করেন না। তা ছাড়া, বিজেপির প্ররোচনার রাজনীতিতেই হিংসা হয়েছিল। আমরা কোনও হিংসাকে সমর্থন করি না।’’ একই সঙ্গে তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘ওঁরা মামলা করেছেন। সত্য খুঁজে বার করুন। তৃণমূলের কত লোক মারা গিয়েছেন ও আহত হয়েছেন, তা-ও একই সঙ্গে দেখা হোক।”
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই দল ছাড়তে শুরু করেছেন অনেক বিজেপি নেতা-কর্মী এমনকি জয়ী বিধায়কেরা। সদ্য সমাপ্ত চারটি বিধানসভা উপনির্বাচনেও কার্যত ভরাডুবি হয়েছে দলের। এই পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে আজ বৈঠকের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ তোলেন নড্ডা। বিজেপি সূত্রের মতে, নড্ডা বলেন, ভোটের আগে ও পরে দলের ৫৩ জন কর্মী খুন হয়েছেন। প্রায় এক লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হয়ে বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, হাই কোর্ট এমনকি সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাঁর অভিযোগ, করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব দেখানোর নজির সামনে এসেছে। বিজেপি করার অপরাধে টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দলীয় কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে পরে সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ‘‘টিকা থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা রাজ্য সরকারের অমানবিকতার চরম উদাহরণ।’’ বিজেপির আনা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কর্মীদের হত্যা, মারধর, দোকান-পাঠ লুট করা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের জন্য লজ্জার। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলার বিজেপি কর্মীদের পাশে রয়েছেন। দোষীদের শাস্তি দেওয়ার প্রশ্নেও দল বদ্ধপরিকর।
তৃণমূলের অবশ্য দাবি, অধিকাংশ অভিযোগ মনগড়া। যে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের কথা এত বলা হচ্ছে, তার একাধিক সদস্যের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। এই অপপ্রচারের জবাব মানুষ উপনির্বাচনে দিয়েছেন।
সদ্য সমাপ্ত উপনির্বাচনে চারটি কেন্দ্রের তিনটিতেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বিজেপি প্রার্থীর। এই ভরাডুবি সত্ত্বেও নড্ডার মতে, ‘‘২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে নগণ্য ভোট পেয়েছিল। সেখানে পাঁচ বছরের মধ্যে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে দল।’’ পশ্চিমবঙ্গের মতো ৯-১০ কোটি মানুষের রাজ্যে এক ধাক্কায় ৩৮ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি দলের গ্রহণযোগ্যতার পরিচায়ক বলে দাবি করেছেন ধর্মেন্দ্রও। আর উপনির্বাচনে ভরাডুবি? অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘‘আজ আলাদা করে কোনও আসনের বিশ্লেষণ করা হয়নি।’’
বৈঠকে বাংলার হিংসা প্রসঙ্গে সরব হন যোগী। সূত্রের খবর, তিনি কেন্দ্রকে অবিলম্বে বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা রুখতে কড়া পদক্ষেপের জন্য অনুরোধ করেন। সম্প্রতি ভোটমুখী গোয়ায় ঘাসফুল ফোটাতে তৎপর হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে সেই গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বাংলার রাজনৈতিক অস্থিরতা গোয়ায় আমদানির চেষ্টা করা হচ্ছে।
বৈঠকে তৃণমূলকে আলাদা করে যে ভাবে দফায় দফায় নিশানা করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনীতির অনেকের মতে, কংগ্রেসকে জাতীয় রাজনীতিতে আরও গুরুত্বহীন করতে পরিকল্পিত ভাবেই মমতার দলকে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে গোয়া-ত্রিপুরার মতো রাজ্যে লড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই অভিযোগ উঠেছে, ভোট কাটাকুটি করে বিজেপিকে সুবিধে করে দিতেই মাঠে নেমেছে তৃণমূল। মমতা পাল্টা যুক্তিতে আঞ্চলিক দলগুলিকে শক্তিশালী করার সওয়াল করলেও, অধীর চৌধুরীর মতো কংগ্রেস নেতাদের মতে, গোয়া-ত্রিপুরায় জোট না করে তৃণমূলের লড়ার ‘সিদ্ধান্তে’ আখেরে সুবিধা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy