রাধামোহন সিংহ ও পূর্ণেন্দু বসু
কৃষির উন্নতিতে আগ্রহ নেই, পশ্চিমবঙ্গ সরকার শুধু আন্দোলনই করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ। তাঁর দাবি, কৃষির উন্নতির লক্ষ্যে কেন্দ্রের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পশ্চিমবঙ্গ খরচ করতে না পারায় বরাদ্দ ফেরত গিয়েছে। এতে আদতে ক্ষতি হচ্ছে কৃষকদেরই। গত দু’বছরে অন্য সব রাজ্যের কৃষি দফতরের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হলেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
মঙ্গলবার দিল্লিতে বসে ভিডিও কনফারেন্সে দশটি শহরের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী। কেন পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়নি, আনন্দবাজারের সেই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার দফতর থেকে চার-পাঁচ বার সময় চেয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার হয়তো আন্দোলন নিয়ে এতই ব্যস্ত যে, আমার সঙ্গে বসার সময় পাচ্ছে না!’’ সেই সঙ্গেই তাঁর পরামর্শ, ‘‘রাজ্য সরকারকে কৃষির ক্ষেত্রে মনোযোগী হতে হবে। আন্দোলন নয়, কৃষির প্রতি মন দিন। কৃষি মজবুত হলে কৃষকের ভাল হবে, বাংলাও মজবুত হবে।’’
রাজ্য সরকার অবশ্য কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর অভিযোগ মানতে নারাজ। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই ওই সব কথা বলেছেন।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর মাথায় রাখা উচিত ছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত চার বছর পর পর কেন্দ্রের কাছ থেকেই কৃষিকর্মণ পুরস্কার পেয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক এই পুরস্কার দেয় সেই সব রাজ্যকে, যারা খাদ্যশস্য উৎপাদনে সেরা।
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর দাবি, গত চার বছরে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশনের মোট ২৮ কোটি ২২ লক্ষ টাকা পশ্চিমবঙ্গ খরচ করতে পারেনি বলে ফেরত চলে গিয়েছে। তিনি হিসেব দিয়ে জানান, ২০১২-’১৩ সালে আট কোটি, ২০১৩-’১৪য় ১৩ কোটি, ২০১৪-’১৫-য় চার কোটি ১৭ লক্ষ ও ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে সাড়ে তিন কোটি। শেষ বছরে কিন্তু প্রকল্পের বরাদ্দও পশ্চিমবঙ্গের জন্য এক লাফে অনেকটা কমে গিয়েছিল। ২০১৪-’১৫-তে যেখানে ৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা
হয়েছিল, পরের বছরে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৩ কোটিতে।
তথ্য হিসেবে এটাকে অস্বীকার না করলেও রাজ্য কৃষি দফতরের যুক্তি, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশনের টাকা ফেরত যাওয়ার সঙ্গে খরচ করতে না পারার সম্পর্ক নেই। তাদের বক্তব্য, ওই প্রকল্পে কেন্দ্র এ রাজ্যের ৬ কোটি ১ লক্ষ মানুষকে ন্যূনতম মূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার বরাদ্দ পাঠাচ্ছে। কিন্তু তার সঙ্গে যে মাপকাঠি পাঠাচ্ছে, তাতে ৫ কোটি ৬৩ লক্ষ মানুষ প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। ফলে বাকি টাকা তো ফেরত যাবেই। ক্ষুদ্র সেচের জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা রাজ্য খরচ করছে না বলে যে দাবি এ দিন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী করেছেন, রাজ্য সরকার সেটাও মানতে নারাজ। রাধামোহন সিংহের বক্তব্য, তিন বছর ধরে ক্ষুদ্র সেচ খাতে দেওয়া কেন্দ্রের টাকা বিহার ও উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও খরচ করতে পারেনি। কিন্তু কত টাকা বরাদ্দ হয়েছিল এবং কত ফিরে গিয়েছে, তা মন্ত্রী এ দিন জানাননি।
কৃষি ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘এই দাবি মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিচাই (সেচ) যোজনায় এ বছর আমাদের পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরা আগামী পাঁচ বছরের জন্য মোট ১৫০০ কোটি টাকা চেয়েছি। সেই জায়গায় আপাতত বরাদ্দ হয়েছে ৬ কোটি। তা-ও হাতে আসেনি।’’
মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর চাষের জমির স্বাস্থ্য কার্ড অর্থাৎ মাটির চরিত্র কেমন, তাতে কী কী উপাদানের ঘাটতি, তা মেটাতে কী ধরনের সার কতটা ব্যবহার করতে হবে, কত বার সেচ প্রয়োজন— তার পরামর্শ-সহ একটি কার্ড কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থ কেন্দ্রই দেয়। কিন্তু কাজটা করতে হয় রাজ্যকে। গত বছর পশ্চিমবঙ্গে ১৩ লক্ষ কৃষককে ওই কার্ড দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল। রাধামোহন জানান, গত বছর পশ্চিমবঙ্গের মাত্র সাড়ে পাঁচ লক্ষ কৃষককে ওই কার্ড দেওয়া গিয়েছে। মন্ত্রীর এই বক্তব্য অবশ্য মানছে রাজ্য সরকার। প্রদীপবাবুর যুক্তি, ‘‘পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা ছিল। যথেষ্ট সংখ্যক পরীক্ষাগার, প্রশিক্ষিত লোকজন ছিল না। এ সব কেন্দ্র জানে। এখন আর সমস্যা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy