বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।
নির্বাচন মানেই এখন লাগাতার বিপর্যয়! সন্ত্রাস ও দখলদারির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সদ্য পঞ্চায়েত ভোটে তাদের চেয়ে ভাল ফল করেছে বিজেপি। রাজ্য রাজনীতিতে এমন বেনজির কোণঠাসা অবস্থায় দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করতে বসে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে আলিমুদ্দিনকে। কলকাতা-কেন্দ্রিক নেতাদের বদলে জেলা থেকে আরও মুখ এনে রাজ্য নেতৃত্বে জায়গা দেওয়ার কথাই উঠে আসছে সিপিএমের ভাবনায়।
দলের এমন সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে এ বার থাকছেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শেষ বয়সে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু অশক্ত শরীরেও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে যোগ দিতে আলিমুদ্দিনে আসতেন। কিন্তু বুদ্ধবাবু আড়াই মাস আগে রাজ্য কমিটি থেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন। শরীরের জন্য তাঁর বাইরে আনাগোনা বন্ধ। তার উপরে চোখের সমস্যায় তিনি জেরবার। দলের রাজ্য নেতৃত্বের অনুরোধে, উপদেষ্টা হিসেবে পরামর্শ দিতে তিনি রাজি আছেন। কিন্তু আলিমুদ্দিনে নিয়মিত যাতায়াতের পর্ব তাঁর শেষ। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই বুদ্ধবাবুকে অব্যাহতি দিয়ে সম্পাদকমণ্ডলী গড়ার কাজে হাত দিচ্ছে সিপিএম।
কাল, বুধবার ও পরদিন বৃহস্পতিবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাথমিক পর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠন হওয়ার কথা। বেঙ্গালুরুতে বুধবার কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এইচ ডি কুমারস্বামীর শপথে হাজির থেকে রাতেই কলকাতা আসছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। দিল্লিতে সোমবার দলের নতুন পলিটব্যুরোর সদস্যদের দায়িত্ব বণ্টন হয়েছে। সেই বৈঠকের অবসরে বাংলার নেতৃত্বের সঙ্গে পলিটব্যুরোর নেতাদের যা কথা হয়েছে, তাতেও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে জেলার প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর যুক্তিই উঠে এসেছে। ‘বিশেষ পরিস্থিতি’তে শ্রমিক বা কৃষক ফ্রন্টের ‘কোটা’ প্রথা ভেঙে সাধারণ ভাবে সদস্য বাছাইয়ের কথাও উঠছে।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার ফের সেলিমের ছেলেকে তলব করল সিআইডি
সিপিএমের এখনকার ১৭ জনের সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বুদ্ধবাবু ছাড়াও শ্যামল চক্রবর্তী, মদন ঘোষ, দীপক সরকারের বাদ যাওয়ার কথা। শারীরিক কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি নিলেও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে থেকে যাওয়ার কথা গৌতম দেবের। নতুন মুখ হিসেবে কলকাতা-সহ অন্তত পাঁচটি জেলার নেতারা বিবেচনায় আছেন। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হলে তাঁদের পার্টি কেন্দ্রে কাজ করতে হয়। তবে এ বার বেশি করে ভাবতে হচ্ছে জেলাওয়াড়ি পরিস্থিতি সামলানোর কথা।’’ প্রয়োজন হলে জেলা থেকে আসা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের জেলাতেই নজর দিতে বলবে আলিমুদ্দিন।
নতুন মুখের চেয়েও সিপিএমকে অবশ্য এখন বেশি আতঙ্কে রেখেছে বাম কর্মী-সমর্থকদেরও তৃণমূলকে রুখতে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার প্রবণতা। রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘রাজ্য নেতৃত্ব যে কর্তব্য বেঁধে দিচ্ছেন, সেটা নিচু তলায় পৌঁছনোর পথে কোন অঙ্ক বাধা হচ্ছে— সেটা এ বার গুরুত্ব দিয়ে না ভাবলে সামনে আরও বিপদ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy