প্রতীকী ছবি।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সঙ্গে জড়িত কোচবিহারের বাসিন্দা অর্পিতাশ্রী নারায়ণ দাস। নিয়মিত শিলিগুড়ি হয়ে কলকাতা যাতায়াত করেন তিনি। গত রবিবার কলকাতা ফেরার জন্য অনলাইনে বিমানের টিকিট কাটতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠে তাঁর।
তিনি বলেন, ‘‘৪৫ মিনিটের সফরের জন্য একটা টিকিট ১২ হাজার টাকা। দর দেখে বিমানের দিকে পা মাড়ায়নি। পদাতিক এক্সপ্রেসে টিকিট কেটে ফিরলাম।’’
প্রায়ই একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক রতন বণিকেরও। গত সপ্তাহে স্ত্রী’র চিকিৎসার জন্য কলকাতা যান। পেশায় আইনজীবী রতনবাবুর সোমবারই জরুরি কাজে শিলিগুড়ি ফেরার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘দু’দিন ধরে বিমানের টিকিট কাটার চেষ্টা করি। দু’টি টিকিটের জন্য ২২-২৪ হাজার টাকা লাগছিল। বাধ্য হয়ে একটি ট্রেনের তৎকাল টিকিট কেটে দু’জনে এসেছি।’’
বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন কলকাতায় ৯টি এবং দিল্লিতে ১১টি বিমান যাতায়াত করে। এ ছাড়াও মুম্বই, গুয়াহাটি, বেঙ্গালুরু এবং চেন্নাই যাওয়ার বিমানও রয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের বিমানবন্দরের যাত্রী সংখ্যা ২৩ লক্ষ ছাড়িয়েছে। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এএআই) তরফে আইএলএস পরিষেবা চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮ ঘণ্টার বিমানবন্দর এখন ১৬ ঘণ্টার করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য গত ১ এপ্রিল থেকে বিমানের তেলে’র ভ্যাটে পুরো ছাড়ের ঘোষণা করেছে। তার পরেও কীভাবে লাগামহীন ভাবে বিমান ভাড়া বাড়ছে সেই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ যাত্রী থেকে ব্যবসায়ী সকলেই।
পরিকাঠামো বেড়েছে কিন্তু টিকিটের দামের নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। আগামী কয়েকদিন কলকাতা যাওয়ার বিমানের টিকিট ১০-১৪ হাজার টাকার নীচে মিলছে না। দিল্লির ক্ষেত্রে তা ৯-১৩ হাজারের মধ্যে ঘোরফেরা করছে। সাধারণত বছরের অন্য সময়ে এই টিকিট ৩-৬ হাজার টাকার মধ্যে থাকে। কেন এভাবে ওঠানামা করে টিকিটের দাম? বিমান সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, ‘ডায়নামিক এয়ারফেয়ার’এর জন্য এমনটা হয়। গোটা দেশে বিমানের টিকিট বিক্রি এখন অনলাইন প্রক্রিয়ায় চলে। সেক্ষেত্রে চাহিদা বাড়লেই দাম বাড়ে। এটাই ডায়নামিক ব্যবস্থা।
এএআই-র অফিসারেরা জানিয়েছেন, গত বছর অগস্টে বাগডোগরা থেকে যাতায়াতের বিমান ভাড়া রেকর্ড ছুঁয়েছিল। বন্যার জেরে উত্তর দিনাজপুরে তেলতা’তে রেল সেতু বসে যাওয়ায় উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ বন্ধ হয়। এক পিঠের টিকিট ২২-২৬ হাজারেও বিক্রি হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের টাকা খরচ করতে হয়।
এ বছর মে মাস থেকে পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড়ে উপচে পড়তেই এই দাম বাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে মনে করেন পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার বা ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশনের পক্ষেই এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বহু পর্যটক বাধ্য হয়ে ঘোরার দিন কমিয়ে ট্রেনে টিকিট কাটছেন।
ব্যবসায়ী সংগঠন সিআইআই-র নর্থবেঙ্গলের চেয়ারম্যান কমল কিশোর তিওয়ারি বলেন, ‘‘ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ যাত্রী সবাইকে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এটা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy