রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল-বাড়ির সামনে চায়ের ভাঁড়টা ছুড়ে ফেললেন এক সিপিএম কর্মী। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ চলছে। আক্ষেপের সুরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মাওবাদীদের ফেলে দেওয়া লাশ কুড়িয়ে পার্টিটা এগিয়েছে! এখন তৃণমূলের হাতে পড়ে পড়ে মার খাব? কোথায় গেল সেই লোকগুলো?’’
রাস্তায় পাওয়া সেই প্রশ্নটাই ফেলা গেল ‘সেই লোকগুলো’র এক জনের কাছে। পরিবর্তনের ঝ়ড়ে ২০১১ সালে রথী-মহারথীরা যখন ধরাশায়ী, তখনও গড়বেতা থেকে জিতে এসেছিলেন। গত বার দল আর প্রার্থী করেনি। জেলায় যাওয়াও এখন বন্ধ। বারাসত আদালতে যেতে হয় মামলার জন্য হাজিরা দিতে। বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রী। প্রশ্নটা শুনে সুশান্ত ঘোষ বলছেন, ‘‘যাঁরা এখন সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন, তাঁদের কাছে জবাবটা নেওয়াই ভাল! আমি তো দলের এক কর্মী মাত্র।’’
পঞ্চায়েত ভোটের মরসুমে রাজ্য জু়ড়ে অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল, আরাবুল ইসলাম, শেখ সুফিয়ান, রবীন্দ্রনাথ ঘোষদের দাপটে বিরোধীরা যখন কোণঠাসা, নীরবে-নিভৃতে তখন দিন কেটে যাচ্ছে পুরনো জমানার ‘দাপুটে’দের। বহু কালের চর্চা, এঁদের কথায় একত্রে জল খাওয়ানোর জন্য ঘাটও নাকি উঠে যেতে পারত বাঘ-গরু ধরে আনতে! সুশান্তবাবুকে অবশ্য মাওবাদীদের সন্ত্রাসের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। আরামবাগের অনিল বসু, হলদিয়ার লক্ষ্মণ শেঠ, খেজুরির হিমাংশু দাস, শাসনের মজি়দ মাস্টার, নাটাবাড়ির তমসের আলিদের তা হয়নি। তাঁদের এলাকায় কারও দাঁত ফোটানোর জো তাঁরা রাখতেন না বলে তৎকালীন বিরোধীদের অভিযোগ ছিল। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন ঘিরে বেলাগাম অশান্তির সময়েও কেউ কেউ বলছেন, কেষ্ট-কাহিনি বদলায়নি! পুরনোদের দেখানো পথেই বহু দূর এগিয়ে গিয়েছেন এ যুগের কেষ্টরা!
আরও পড়ুন: সশস্ত্র বাইক মিছিল দাপিয়ে বেড়ালো বোলপুরে, পুলিশের দেখাই নেই
কেমন আছেন সে যুগের সে সব ‘ত্রাসে’র মুখ? হাসতেই হাসতেই আরামবাগের প্রাক্তন সাংসদ অনিলবাবুর জবাব, ‘‘এই তো কাঁচা মুণ্ডু চিবিয়ে বেঁচে আছি!’’ সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কয়েক বছর পরেও তাঁর মুখে ‘আমাদের পার্টি’। আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের জন্য প্রকাশ কারাটদের দলিলে সংশোধনী দিতে চান। আপনাদের জন্যই তো আজ এই হাল? আবার হাসছেন অনিলবাবু, ‘‘যারা এটা বলে শান্তি পাচ্ছে, পাক!’’ কী করে মোকাবিলা হবে এই আক্রমণের? প্রাক্তন সাংসদের জবাব, ‘‘নবান্নে গিয়ে ফিশফ্রাই খেয়ে এলে কিছুই হবে না! পারলে রাস্তায় নামো, অবরোধ করো, বন্ধ ডাকো! স্থানীয় কমিটিগুলো তো সব তৃণমূলের কাছে বন্ধক দিয়ে বসে আছে!’’
পূর্ব মেদিনীপুরে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশ সুপারের কাছে গিয়েছিলেন হিমাংশুবাবু। পুলিশ সুপারও তাঁকে বলেছেন, ৩৪ বছরে আপনারা যা করেছিলেন, তা-ই হচ্ছে! খেজুরি পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি বলছেন, ‘‘কিছু অন্যায় হয়েছিল। কিন্তু বলুন, এই জিনিস দেখেছিলেন কখনও? আগে টিভি চ্যানেল ছিল না। কিন্তু পুরনো কাগজ খুলে এখনকার ছবির সঙ্গে একটু মিলিয়ে দেখুন না!’’ পরিবর্তনের জমানায় এলাকাছাড়া হয়ে, ৩০টা মামলা মোকাবিলা করেও দলের পতাকাটা ছাড়েননি বলে সিপিএম এ বার তাঁকে রাজ্য কমিটিতে নিয়েছে।
মজিদের হাল অবশ্য করুণ। বারাসতের বাসা আর দলের দফতরে ঘুরেফিরে থাকেন। যে চোখের ইশারা ছাড়া শাসনে মাছিও গলত না, সেই চোখেই অসহায় ভাবে দেখতে হয় শাসকের দাপট কাকে বলে!
কে বলতে পারে, এক দিন এ ভাবেই দেখতে হবে না কেষ্ট, আরাবুলদেরও?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy