স্ত্রীর সঙ্গে মদনমোহন পাল। ব্যারাকপুরের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
সাড়ে চার বছরের সময়টাকে দ্রুত ভুলে যেতে চান ব্যারাকপুর দেবপুকুরের মদনমোহন পাল। তিনি বলেন, ‘‘ওই সময়টা আমার কাছে চার যুগেরও বেশি।’’
মদনমোহন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এজেন্টকে পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রেখেই শেষ হয়েছে বিচার প্রক্রিয়া। শেষ পর্যন্ত সোমবার ব্যারাকপুর আদালত তাঁকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে।
দমদম সংশোধনাগারে ছিলেন মদনমোহন। সোমবার বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার প্রাতর্ভ্রমণ সেরেছেন নিজের এলাকায়। দুপুরে বাড়িতেই পাওয়া গেল এককালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশনড অফিসার মদনমোহনকে।
গ্রেফতার হওয়া দিনটার কথা তিনি এখন দ্রুত ভুলে যেতে চান। ওই প্রাক্তন সেনা অফিসার বললেন, ‘‘সে দিন সন্ধ্যায় আচমকা এক দল পুলিশ কিছু না বলেই ঘরে ঢুকে পড়ল। সঙ্গে প্রচুর লোক।’’ তাঁর দাবি, গ্রেফতারি বা তল্লাশির কোনও পরোয়ানা তাঁকে দেখানো হয়নি। মদনমোহন বললেন, ‘‘বাড়ির কম্পিউটারটা আর কিছু কাগজ নিয়ে আমাকে থানায় নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করা হল। শুরু হল এক লড়াই।’’
সেই লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে মদনমোহনের স্ত্রীর। তিনি বললেন, ‘‘স্বামী গ্রেফতার হওয়ার পরে আমাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। বড় মেয়ের বি-টেক শেষ হতে তখন মাত্র তিন মাস বাকি। বাড়ির কম্পিউটারে ওর প্রোজেক্টগুলো ছিল। সব গেল। কোর্সটা শেষ করতে পারল না।
ছোট মেয়েও তখনও পড়াশোনা করে।’’ তিনি জানান, মদনমোহন গ্রেফতার হতেই তাঁর পেনশন বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সব লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। মেয়েদের টিউশনির টাকায় সংসার চালাতে হত। টাকা দিতে না পারায় উকিল জোগাড় করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত লিগ্যাল এড সার্ভিস থেকে উকিল পান তিনি। তবে পরে চাকরি পেয়ে বড় মেয়ে বি-টেক শেষ করেন। বর্তমানে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের ছোট মেয়েও।
নিজের সেনা জীবনের কথা বলতে গিয়ে গলা কেঁপে ওঠে মদনমোহনের। বলেন, ‘‘সারা দেশ ঘুরেছি। জীবন বাজি রেখে দেশের সেবা করেছি। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণনের হাত থেকে পুরস্কার পেয়েছি। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল— সকলকেই গার্ড অফ অনার দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।’’ গলা বুজে আসে তাঁর। বলেন, ‘‘জেলে যাওয়ার পরেও অনেক দিন বিশ্বাস করতে পারিনি। আরও অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে এই ক’বছরে। তবে সে কথা অন্য দিন বলব। আপাতত শান্তিতে ঘুমোতে চাই।’’
এখনও কি সম্পূর্ণ শান্তি এসেছে? সিআইডি সূত্রে খবর, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবে। তখনই ফের শুরু হবে মদনমোহনের নতুন লড়াই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy