অনলাইনে ইলিশ বিক্রির তোড়জোর শুরু করেছেন কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীরা। সরকারি ঠান্ডাঘরে ইলিশ মজুত করে তা ছাড়া হবে বাজারের চাহিদা মতো। এ ব্যাপারে শীঘ্রই সরকারের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। এই প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছে মৎস্য দফতর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।
এখন গুগল করলে অনলাইনে অনেক বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ইলিশ কেনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তাতে ভাল মাছ পাওয়া যাবে কিনা, সেই ঝুঁকি থেকেই যায়। সরকারি সংস্থার মাধ্যমে যদি তা বিক্রি হয়, তা হলে গুণগত মান বজায় থাকবে এবং দামও সাধ্যের মধ্যে থাকবে বলে আশা করা যায়। কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীরা এ বার সেই পথেই হাঁটতে চলেছেন। সম্প্রতি গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার বার্ষিক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে গিয়েছে। দু’মাসের সেই নিষেধাজ্ঞা উঠলেই অনলাইনে ইলিশ বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কাকদ্বীপের দু’টি প্রধান মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা সতীনাথ পাত্র এবং বিজন মাইতি বলেন, ‘‘মৎস্যজীবীরা চাইছেন, ইলিশের দাম ওঠাপড়ার হাত থেকে মুক্তি। আমরা চিন্তাভাবনা করেছি, যেহেতু কাকদ্বীপে একটি ঠান্ডাঘর তৈরি হয়েছে, তাই অনলাইনে ইলিশ বিক্রি করলে ক্রেতা এবং মৎস্যজীবী উভয়েরই সুবিধা।’’ ইতিমধ্যেই অনলাইন ইলিশ বিক্রির ব্যাপারে কয়েকটি প্রাথমিক বৈঠক করেছেন তাঁরা।
ইলিশের মরসুমে ‘অভাবী বিক্রি’ করতে বাধ্য হন বহু মৎস্যজীবী। নামখানা এবং কাকদ্বীপ বন্দর দিয়েই জেলার সিংহভাগ ইলিশ আসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নগেন্দ্র বাজারে। ইলিশের ভরা মরসুমে রোজ প্রায় দু’শো-আড়াইশো টন ইলিশ ওঠে। গত বছর বেশি উৎপাদনের জন্য দাম তলানিতে চলে এসেছিল। একশো টাকারও কম দরে বিক্রি হয়েছে প্রমাণ সাইজের ইলিশ। কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীরা ট্রলার মালিকদের সঙ্গে কমিশন-ভিত্তিতে কাজ করেন। তাই ট্রলার মালিকদের সমস্যা না হলেও দাম পড়ে গেলে দাদনের টাকা তুলতেই হিমসিম খান প্রান্তিক মৎস্যজীবীরা।
মৎস্যজীবীদের বক্তব্য, ‘অভাবী বিক্রি’র লাভ পুরোপুরি ঘরে তোলেন ডায়মন্ড হারবারের বড় বড় আড়তদাড়, ফড়ে এবং মজুতদারেরা। ইলিশের মরসুমে কম দামে ইলিশ গুদামজাত করে তা পরে ধীরেসুস্থে বিক্রি করে কোটি টাকা মুনাফা ঘরে তোলেন তাঁরা। কিন্তু মৎস্যজীবীরা রয়ে যাচ্ছেন অন্ধকারেই।
এ বার দর ওঠাপড়ার বাজার নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে চান মৎস্যজীবীরা। কিন্তু সমস্যা রয়েছে ইলিশ বাজারজাত করা নিয়ে। অনলাইনে বুকিং হওয়ার পরে তা ক্রেতার দোড়গোড়ায় কী ভাবে পৌঁছনো যাবে, তা নিয়েও রয়েছে চিন্তা। সেই পরিকাঠামো মৎস্যজীবীদের নেই। এ ব্যাপারে সরকারের দ্বারস্থ হবে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি। তারা জানিয়েছে, কাকদ্বীপে ঠান্ডাঘরের বিষয়টি আর কিছু দিনেই চূড়ান্ত হলে এ ব্যাপারে পরিকল্পনা শুরু করবেন তাঁরা।
কিন্তু দু’মাস আগেও অনলাইনে ইলিশ বিক্রির কথা ভাবতে পারতেন না তারা। তখন কাকদ্বীপে কোনও ঠান্ডাঘর ছিল না। কিছু দিন আগেই উদ্বোধন হয়েছে দেড়শো টনের সরকারি ঠান্ডাঘর। ডায়মন্ড হারবারের সহ মৎস্য অধিকর্তা সুরজিৎ বাগ বলেন, ‘‘ঠান্ডাঘর মৎস্যজীবীদের জন্যই চালু করা হয়েছে। তাঁরা যদি অনলাইনে বিক্রি করেন, তা হলে তো ভাল কথা। ওঁদের প্রস্তাব এলেই আমরা বেনফিস বা রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy