রক্তের সম্পর্ক। তার স্বপক্ষে নথিও জমা পড়ছে হাসপাতালে। ফলে কিডনি প্রতিস্থাপনে আপাতদৃষ্টিতে সন্দেহের কিছু থাকছে না। কিন্তু, পাচারকারীরা নথিতে সামান্য বদল করে দিচ্ছে। যিনি কিডনি দাতা, তাঁর ছবি বদল করে নথিতে বসানো হচ্ছে কিডনি বিক্রেতার ছবি।
কিডনি পাচারের তদন্তে নেমে এমন তথ্য পেয়ে তাজ্জব ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। ইএম বাইপাস লাগোয়া এক বেসরকারি হাসপাতালে পাচার চক্রের বিক্রেতাদের থেকে কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। সেখানকার নথিতেই এমন প্রমাণ মিলেছে।
তদন্তকারীদের অনুমান, যাঁদের শরীরে কিডনি বসছে, নথি-জালিয়াতি কাণ্ড তাঁদের অজানা নয়। ব্যারাকপুরের ডিসি (জোন ১) কে কান্নন বলেন, ‘‘ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পাওয়া সব নথি যাচাই করা হচ্ছে। যাঁদের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, পুলিশ পাঠিয়ে তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’
কী ভাবে নথি জালিয়াতি হত, তা-ও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। মালদহের চাঁচলের বাসিন্দা আনসারুল হকের কিডনি নেওয়া হয়েছিল সপ্তাহ দুই আগে। তাতে হাসপাতাল থেকে যে নথি মিলেছে, সেখানে সচিত্র পরিচয়পত্রে আনসারুলের ছবি আছে। কিন্তু সেখানে নাম রয়েছে বিহারের এক ব্যক্তির, যিনি আদতে কিডনি দাতা। পুলিশ জেনেছে, যাঁর দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে, তিনিও বিহারেরই। ফলে পুলিশ মনে করছে, এই রহস্য ভেদ করতে বিহারে যাওয়া ছাড়া গতি নেই।
পুলিশ সূত্রে খবর, নথি জালিয়াতি করত চক্রের পাণ্ডা আক্রম। যাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন, তাঁর আত্মীয়ের সচিত্র পরিচয়পত্র জোগাড় করা হত। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকদের কাছে হাজির করানো হত সেই আত্মীয়কে। কিন্তু, কিডনি বদলের সময়ে নির্দিষ্ট ব্লাড গ্রুপের কিডনি বিক্রেতাকে তৈরি রাখা হত। রোগীর আত্মীয় সাজিয়ে তাকেই হাজির করা হত হাসপাতালে। আত্মীয়ের নথি এক রেখে শুধু ছবি বদলে তৈরি হত জাল নথি।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, কিডনি বিক্রেতাদের একাধিক ছবি তোলা হয়েছিল নৈহাটিরই এক স্টুডিয়োয়। সেই স্টুডিয়োর কম্পিউটারে তাদের ছবি মিলেছে। পুলিশ জেনেছে, সেই ছবি পাঠানো হত আক্রমকে। সে-ই নথি জালিয়াতির সময়ে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতার ছবি ব্যবহার করত।
কলকাতা ও শহরতলিতে আক্রমের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে। এই ঘটনায় ধৃতদের আজ, সোমবার ফের ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হবে। নৈহাটি থানার একটি দলও দু’-এক দিনের মধ্যে ভিন্ রাজ্যে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy