Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

বাঁকুড়ায় ১০০ দিনে কাজের আবেদন পলিটেকনিকের ছাত্রীর

প্রিয়া নন্দী নামে বছর উনিশের ওই তরুণীর বাড়ি বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের কাকাটিয়া গ্রামে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তারাশঙ্কর গুপ্ত
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২০ ০৫:৫৯
Share: Save:

লকডাউনের জেরে ঠিকা ইলেকট্রিশিয়ান বাবা আটকে রয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশে। তাঁর কাছে এবং বাড়িতে টাকাপয়সা নেই। নেই ডিজিটাল রেশন কার্ড। রেশন থেকে চাল-ডাল পাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের দেওয়া ‘ফুড কুপন’ও মেলেনি। এত দিন চেয়েচিন্তে চলছিল। এ বার ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ চেয়ে পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হলেন কলকাতার একটি পলিটেকনিক কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। প্রিয়া নন্দী নামে বছর উনিশের ওই তরুণীর বাড়ি বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের কাকাটিয়া গ্রামে।

সংশ্লিষ্ট বীরসিংহ পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের কাবেরী ঘোষ বলেন, ‘‘প্রিয়ার পরিবার কার্ড বা কুপন কেন পায়নি, তা জানতে ব্লক খাদ্য দফতরে যোগাযোগ করব। তবে আমরা চাই, ও পড়াশোনা চালিয়ে যাক।’’ জেলা খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ডিজিটাল রেশন কার্ডের আবেদন করার সময় আবেদনকারীকে বার-কোড দেওয়া স্লিপ দেওয়া হয়। কী কারণে ওই পরিবারটি কার্ড বা কুপন পায়নি, তা ওই স্লিপ নিয়ে ব্লক খাদ্য দফতরে গেলে বোঝা যাবে।’’

কম্পিউটার সায়েন্সের পডুয়া প্রিয়া জানান, তাঁর বাবা স্বপন নন্দী অন্ধ্রের বিজয়ওয়াড়ায় ইলেকট্রিশিয়ান। বিভিন্ন ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতেন। বাড়িতে রয়েছেন মা এবং তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী বোন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বাবার রোজগারে চলে সংসার। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় লকডাউন ঘোষণার পরে। বিজয়ওয়াড়া থেকে স্বপনবাবু ফোনে বলেন, ‘‘ঠিকাদার সংস্থার ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করে মাসে ১৪ হাজার টাকা পেতাম। এ ছাড়া, বাড়ি বাড়ি ইলেকট্রিকের বাড়তি কাজ করে সংসারের এবং মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতাম। দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছি। কলকাতায় মাসে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয় মেয়ের জন্য। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ার পরেই আমার চাকরি যায়। বাড়িতে কোনও টাকাই পাঠাতে পারিনি। ওরা চেয়েচিন্তে দিন চালাচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: কলকাতার বাইরে রাজ্যের কন্টেনমেন্ট জোন কী কী, দেখে নিন

পরিবারটির দাবি, লকডাউন হওয়ার পরের কয়েকটা দিন জমানো টাকায় চলেছে। পড়শিদের সাহায্যে চলে আরও কিছু দিন। তার পর থেকে আধপেটা খেয়ে দিন কাটছে। প্রিয়ার কথায়, ‘‘লোকের মুখাপেক্ষী হয়ে দান নেওয়ার চেয়ে খেটে খাওয়া অনেক ভাল। সরকার কাজ দিলে যে-টাকা

পাব, তাতে খাবার তো জুটবে। তাই ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ চেয়েছি।’’ প্রিয়ার মা রীতাদেবী বলেন, ‘‘ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য দৌড়োদৌড়ি করার কেউ নেই। জমিজমাও নেই। মেয়ে দু’টোর মুখের দিকে তাকাতে পারি না!’’

মঙ্গলবার সকালে লাগোয়া বীরসিংহ গ্রামের বাসিন্দা সমাজকর্মী গুরুদাস ঘোষের বাড়ি যান প্রিয়া। গুরুদাসবাবু বলেন, ‘‘জব-কার্ড নেই। তাই ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করবে বলে দরখাস্ত লিখতে সাহায্য চায় মেয়েটি।’’ প্রিয়াকে নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে যান গুরুদাসবাবু। কাবেরীদেবীর হাতে প্রিয়া আবেদনপত্র জমা দেন। বলেন, ‘‘সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই। ১০০ দিনের কাজ দিন।’’

আরও পড়ুন: রাজ্য জুড়ে নজর রাখছেন ৬০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী, ফেসবুকে হিসাব দিলেন মমতা

কাবেরীদেবী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের কিছু বাসিন্দা এখনও ডিজিটাল রেশন কার্ড বা কুপন পাননি। ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ পাওয়ার জন্য ৪-এর ক ফর্ম পূরণ করতে হয়। প্রিয়াকে সেটা এই মুহূর্তে পূরণ করানো না-হলেও, মেয়েটির পাশে পঞ্চায়েত রয়েছে।’’ পঞ্চায়েতের তরফে এ দিনই প্রিয়ার পরিবারকে চাল-ডাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

এ দিন বহু চেষ্টাতেও ব্লক খাদ্য আধিকারিক স্বপন জানার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব আসেনি মেসেজের। তবে বিডিও (পাত্রসায়র) প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দেখছি, ওই পরিবারটির জন্য কী করা যায়।’’


(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy