Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

ছেলেকে নিয়ে জঙ্গল পেরিয়ে ব্লাডব্যাঙ্কে পৌঁছলেন মহিলা

গাড়ি ভাড়া করার সামর্থ্য নেই। অগত্যা উনিশ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে, জঙ্গল-পথে নিয়ে এসেছেন তাকে। ভিতরে রক্ত দেওয়া হচ্ছে।

ছেলেকে নিয়ে ব্লাডব্যাঙ্কের পথে আন্না মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

ছেলেকে নিয়ে ব্লাডব্যাঙ্কের পথে আন্না মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

তারাশঙ্কর গুপ্ত
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৫:০৬
Share: Save:

দিনের আলো পড়ে এসেছে। অন্ধকার গাঢ় হয়ে উঠছে ঘনিয়ে আসা মেঘে। শেষ বিকেলে বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লাডব্যাঙ্কের বাইরে শুকনো মুখে বসেছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের শীর্ণকায় মহিলা। ছেলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। বাস চলছে না। গাড়ি ভাড়া করার সামর্থ্য নেই। অগত্যা উনিশ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে, জঙ্গল-পথে নিয়ে এসেছেন তাকে। ভিতরে রক্ত দেওয়া হচ্ছে।

শুনে থ হয়ে যান ‘বড়জোড়া ব্লক ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্য প্রণব মণ্ডল। ব্যস্ত হয়ে পড়েন গাড়ির ব্যবস্থা করতে। তাঁকে থামিয়ে দিয়ে সেই মা বলেছিলেন, ‘‘মাসে দু’বার রক্ত দিতে হয় ছেলেটাকে। কত বার সাহায্য নেব?’’ তবে শেষ পর্যন্ত অনেক অনুরোধে ওই সংগঠনের জোগাড় করা গাড়িতেই সাইকেল তুলে ছেলেকে নিয়ে সে রাতে গঙ্গাজলঘাটির কাপিষ্ঠা পঞ্চায়েতের বাড়িতে ফিরেছিলেন আন্না মণ্ডল।

আন্নার স্বামী কালীপদ মণ্ডল পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায় একটি দোকানে কাজ করেন। ‘লকডাউন’-এ কোনও রকমে মাথা গুঁজে রয়েছেন কাজের জায়গায়। তাঁর পাঠানো টাকায় সংসার চলে। কালীপদ যা পাঠাতে পেরেছিলেন, শেষ হয়ে গিয়েছে। পনেরো বছরের ছেলে আর বছর সাতেকের মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে রয়েছেন আন্না। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছেলের কষ্ট বাড়লেই ছুটতে হয় ব্লাডব্যাঙ্কে, বাড়ি থেকে বাসে যার দূরত্ব তিরিশ কিলোমিটার।

আরও পড়ুন: ‘প্রচেষ্টা’-চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে

আন্না বলছিলেন, ‘‘ছেলে-মেয়েকে দু’বেলা আলুসেদ্ধ আর ভাত দিতেই হিমশিম খাচ্ছি। গাড়ি ভাড়া করার কথা ভাবতেই পারি না।’’ অতএব, সাইকেল। তাঁর কথায়, ‘‘আগে বড়জোর এক-আধ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছি। তা-ও রোজ নয়। কিন্তু রক্ত না পেলে ছেলেটার কী হবে ভেবে বাধ্য হয়েই এটা করছি।’’

আন্নার বাড়ি থেকে শর্টকাটে ব্লাডব্যাঙ্কে পৌঁছতেও উনিশ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে হয়। মাঝের দশ কিলোমিটার সাহারজোড়া জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। গভীর সেই বনে ‘রেসিডেন্ট’ হাতির আস্তানা। ২২ মার্চ, ‘জনতা কার্ফু’র দিন প্রথম বার সাইকেলে ছেলেকে নিয়ে ব্লাডব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন আন্না। তার পরে আরও দু’বার যাওয়া হয়ে গিয়েছে। দশম শ্রেণির ছাত্র আন্নার ছেলে বলে, ‘‘প্রথম বার সাইকেলে জঙ্গল পেরনোর সময়ে ভয় করছিল। মা সাহস দেন। তাতে ভয় বেশিক্ষণ ছিল না।’’

আরও পড়ুন: লকডাউনেও কি পিকে সক্রিয় রাজ্যে

ভয় জয় করেছেন। কিন্তু রক্ত জল করেও ছেলের কিছু ওষুধ পাচ্ছেন না আন্না। বাঁকুড়া সদর থেকে আনতে হয় সে সব। আন্নার অনুরোধে রক্তদাতাদের সংগঠনের সদস্যেরা এখন সে সব ওষুধের সন্ধান করছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Blood Bank Thalassemia Barjora
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy