Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Migrants Workers

কেউ ঠেলছেন দূরে, কেউ পরিযায়ীদের দিচ্ছেন ভাত

পরিযায়ীদের ‘দূরে ঠেলার’ প্রবণতা রুখতে তাই সচেতনতা প্রচারে উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০৫:০৪
Share: Save:

কোথাও তাঁদের হাত ধরা হয়েছে, কোথাও ঠেলা হয়েছে দূরে। গত কয়েক দিনে ভিন্-রাজ্য থেকে গ্রামে ফিরে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। এলাকায় ঢুকতে ‘বাধা পেয়ে’ মৃত্যু হয়েছে অসুস্থের, উঠেছে এমন অভিযোগ। আবার পড়শিদের উদ্যোগে নিভৃতবাসে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, এমন শ্রমিকও রয়েছেন। পরিযায়ীদের ‘দূরে ঠেলার’ প্রবণতা রুখতে তাই সচেতনতা প্রচারে উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন।

রাজস্থানের জয়পুর থেকে ফিরে, গ্রামবাসীর একাংশের বাধায় পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার যুবক বিশ্বজিৎ মণ্ডল বাড়িতে ঢুকতে পারেননি বলে অভিযোগ। নানা জায়গায় ঘণ্টা পাঁচেক ঘোরার পরে, অসুস্থ বিশ্বজিৎকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে, মৃত্যু হয় তাঁর। সচেতনতার অভাবেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জেলা প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন। তাঁরা জানান, গ্রামবাসী বাড়িতে ঢুকতে বাধা দিলে, শ্রমিকেরা কাছাকাছি ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রে থাকতে পারেন। মানুষকে সচেতন করতে মোড়ে-মোড়ে ‘ফ্লেক্স’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরাও যাতে এলাকার ফিরে নিভৃতবাসে থাকেন, তা নজরে রাখতে সোমবার থেকে প্রতিটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধরে একটি করে ‘নজরদারি’ কমিটি গড়া হয়েছে।

পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে পরিযায়ী বনাম স্থানীয়—এই ‘বিরোধ’ পৌঁছয় খুনোখুনিতে। মুম্বই ফেরত এক পরিযায়ী গত রবিবার নিভৃতবাসে থাকার বদলে বাইরে ঘোরায় তাঁকে বাধা দেন এক ব্যক্তি। ওই পরিযায়ী শ্রমিক প্রতিবাদীকে বাঁশের বাড়ি মারেন বলে অভিযোগ। মারা যান ‘প্রতিবাদী’। এলাকায় ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে স্থানীয় মানুষ বাঁশ দিয়ে এলাকা ঘিরে দেন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের গোরাবাজারে, নদিয়ার বেথুয়াডহরিতে। একই কারণে হুগলির শ্রীরামপুরে হয়েছে অবরোধ। হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় হাতাহাতি। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর, ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ায় ঝামেলা। পরিযায়ীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর বিরোধ ঠেকাতে গিয়ে বীরভূমের সিউড়িতে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: শহরে এক দিনে আক্রান্ত ১১৬, বদলাচ্ছে কন্টেনমেন্ট নীতি

আরও পড়ুন: ঘরবন্দি থেকে করোনা-জয় পরিবারের

হাতাহাতি না হলেও ‘দূরে ঠেলার অনুভূতি’ টের পেয়েছেন অনেকে। মালদহের কালিয়াচকের মনিরুল শেখের খেদ, ‘‘নিজের জেলায় ফিরছি। অথচ, গ্রামে ঢুকতে আপত্তি করেছেন পড়শিরা!’’ কোচবিহারের এক মহিলা পরিযায়ী শ্রমিকের আক্ষেপ, “এলাকার কেউ আমাদের ধারেকাছে আসছেন না। এ বড় কষ্ট!”

তবে সবার অভিজ্ঞতা এমন নয়। ঝাড়খণ্ড ফেরত সাত ইটভাটার শ্রমিককে সাদরে আশ্রয় দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের পূর্বশোল গ্রামের বাসিন্দারা। বিনপুরের দহিজুড়িতে গ্রামবাসী ও শাসকদলের কর্মীদের উদ্যোগে তামিলনাড়ু ফেরত আট শ্রমিককে নিভৃতবাসে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানে সাত সংখ্যালঘুর সঙ্গে রয়েছেন এক হিন্দুও। উত্তরবঙ্গের বহু জেলায়, বীরভূমের মুরারই ১ ব্লকে, উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায়, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে, মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি, নওদার একাধিক জায়গায়, পুরুলিয়ার ঝালদা ১ ব্লকে নিভৃতবাসে থাকা পরিযায়ীদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন এলাকাবাসী। খাদ্যতালিকায় মাছ, মাংস, ডিম—সবই থাকছে। বিডিও (ঝালদা-১) রাজকুমার বিশ্বাসের উপলব্ধি, ‘‘সকলে এ ভাবে এগিয়ে এলে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই অনেক সহজ হয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy