গ্রামে রাস্তা তৈরিতে কার্যত পুরো জোর দেওয়ার নির্দেশ দিল রাজ্য। ফাইল চিত্র।
এখনও দেখা নেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বকেয়া টাকার। একই অবস্থা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে রাস্তা তৈরিতে কার্যত পুরো জোর দেওয়ার নির্দেশ দিল রাজ্য। সূত্রের খবর, প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সব ঠিকঠাক থাকলে, শীঘ্রই দু’তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হতে চলেছে। তাতে গ্রামীণ সব রাস্তার কাজ (রাস্তা সংস্কার ও নতুন রাস্তা) করে ফেলতে হবে। এ কাজে এক-একটি জেলা হাতে পাবে দেড়-দু’মাস!
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, নির্ধারিত সূচি মানলে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মধ্যে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। সরকারি ভাবে ভোটের নির্ঘণ্ট এখনও চূড়ান্ত না হলেও, প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এই অবস্থায় মানুষের যা অন্যতম বড় চাহিদা, সেই রাস্তাঘাট করা বা সারানো না গেলে ভোটের আগে পরিকাঠামো তৈরিতে ইতিবাচক ছাপ রাখা সম্ভব নয়। তাই অর্থকষ্টের মধ্যেও জোর পড়েছে রাস্তায়।
সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহেই অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কথা। এ নিয়ে সম্প্রতি বৈঠকও করেছেন শীর্ষকর্তারা। জেলাগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চূড়ান্ত নির্দেশিকা প্রকাশের থেকে ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলতে হবে। সেই সময়সীমা মানতে হলে এপ্রিলের প্রথমসপ্তাহের মধ্যে সব কাজ শেষ করে ফেলা দরকার। সরকারি এক কর্তার কথায়, “প্রকল্প চিহ্নিতই রয়েছে। দ্রুত সরকারি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কাজ শুরু হয়ে গেলে ভোট ঘোষণা হওয়ার পরেও তা আটকাবে না। ভোটের আগে কাজ শেষ করা গেলে ইতিবাচক প্রচারের সুযোগও থাকবে সরকারের কাছে।”
পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব কাজগুলো আমরা শেষ করতে চাই। বেশির ভাগই নতুন রাস্তা হবে। মানুষের খুব সুবিধা হবে।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারি সমীক্ষায় ধরা পড়েছিল, গ্রামীণ রাস্তা নিয়েই মানুষের চাহিদা-দাবি-ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি। আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ (৬০%) না আসায় রাজ্য নিজের টাকার অংশ (৪০%) কাজে লাগাতে পারছে না। কেন্দ্রের টাকা কবে মিলবে, তা-ও কার্যত অজানা। এই পরিস্থিতিতে ভোটের আগে উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরি করে ফেলাও কার্যত অসম্ভব। তা উপভোক্তা তথা গ্রামীণ ভোটারদের মধ্যে উষ্মা তৈরি করতে পারে। সেই কারণে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও রাস্তা-খাতে বিপুল বরাদ্দ করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, আগেই বেশ কয়েকটি দফতরের থেকে কিছু করে বরাদ্দ নিয়ে তা দেওয়া হয়েছিল পঞ্চায়েত দফতরকে। তা ছাড়া, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বিপুল অর্থ খরচের অপেক্ষায় রয়েছে। নবান্ন ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, অর্থ কমিশনের অনির্ধারিত (আন-টায়েড) খাতের অন্তত ৫০% অর্থ বরাদ্দ করতেই হবে রাস্তা তৈরির কাজে। পাশাপাশি, যে সব প্রকল্পে কেন্দ্রের ভাগের টাকা পাওয়া যায়নি, সেগুলিতে রাজ্যের ভাগের টাকাও হাতে রয়েছে। সব মিলিয়ে রাস্তার কাজে এই অর্থ বরাদ্দ করতে রাজ্যকে তেমন বেগ পেতে হবে না বলেই সরকারি সূত্রের খবর। এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “শীঘ্রই টাকা জোগাড়ের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।”
পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কথায়, “এতে রাজ্যের নিজস্ব তহবিল, আরআইডিএফ (গ্রামীণ উন্নয়ন তহবিল)-এর ঋণ এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অর্থ রয়েছে।”
তবে এত অল্প সময়ে কী ভাবে রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের অন্দরে। আধিকারিকদের অনেকের বক্তব্য, অর্থ কমিশনের কাজগুলি মার্চের মধ্যে শেষ করার চাপ রয়েছে জেলাগুলির উপর। নতুন দায়িত্ব তা আরও বাড়াবে সন্দেহ নেই। কারণ, ‘সময়সাপেক্ষ’ দরপত্র (টেন্ডার) প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ঠিকাদারকে দিতে হবে কাজের বরাত। রাস্তার গুণমানও ঠিক রাখতে নিয়মিত নজরদারি চালাতে হবে। সে ক্ষেত্রে ৪৫-৬০ দিন নেহাতই কম। এক আধিকারিকের কথায়, “প্রথম ডাকেই টেন্ডার প্রক্রিয়া যাতে সম্পূর্ণ করা যায়, সে দিকে জোর দিতে বলা হয়েছে। না হলে এত কাজ শেষ করা মুশকিল। গত ডিসেম্বর থেকে আবাস এবং পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বিপুল কাজের দায়িত্ব বিরামহীন ভাবে সামলাচ্ছেন জেলা-কর্তা ও আধিকারিকেরা। নতুন কাজের বিপুল চাপ কী ভাবে তাঁরা সামলাবেন, তাই এখন দেখার।”
প্রদীপের বক্তব্য, “বেশির ভাগ টেন্ডার হয়ে রয়েছে। কাজ শুরু করা হবে দ্রুত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy