বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি— এই তিন ভাষাতেই পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ করার নতুন প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠাচ্ছে রাজ্য। শুক্রবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিন ভাষাতেই বাংলা নামটা নেওয়া হয়েছে। এ বার এই প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, আগের প্রস্তাবটি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে দরবার করেছেন। মুখ্যসচিবও উদ্যোগী হয়েছেন। তবু বছর খানেক ধরে কেন্দ্র ফেলেই রেখেছিল বিষয়টি। অবশেষে কেন্দ্র চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তিন ভাষাতেই যে কোনও একটি নামের প্রস্তাব পাঠাক রাজ্য সরকার। সেই মতো এ দিন মন্ত্রিসভা ‘বাংলা’ নামটাই চূড়ান্ত করেছে।
গত বছরের ২ অগষ্ট রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে নাম বদলের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ঠিক হয়, পশ্চিমবঙ্গের নাম হবে বাংলায় ‘বাংলা’, ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ এবং হিন্দিতে ‘বঙ্গাল’। সেই সিদ্ধান্ত বিধানসভায় প্রস্তাব এনে পাশও করিয়ে নেওয়া হয়। যদিও বিরোধীরা সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করেনি। সিপিএমের পক্ষ থেকে তিন ভাষায় একটিই নাম রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিজেপি নাম পরিবর্তনেরই বিরোধিতা করে। কংগ্রেসও নাম বদলের বিরোধিতা করে বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় প্রস্তাব পাশ হতে অসুবিধা হয়নি। নাম পরিবর্তনের সেই প্রস্তাব নিয়ম মেনে পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। কারণ, রাজ্যের নাম পরিবর্তন করতে হলে কেন্দ্রকে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তার পর রাজ্যের নতুন নাম নথিভুক্ত হবে।
আরও পড়ুন:বিজেপিতে যেতে হলে এখনই যান: কড়া মমতা
বিধানসভায় রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব পাশ হওয়ার দিন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছিলেন, ‘‘আমি তো ইংরেজিতে নিজের নাম গু়ডম্যান চক্রবর্তী লিখি না! বেচারামবাবুও নিজেকে সেল্সম্যান মান্না বলেন না! নাম যখন বদলাচ্ছেই, সব ভাষায় একটাই নাম হোক।’’ সুজনবাবু এ দিন বলেন, ‘‘সেই যুক্তিই মেনে নেওয়া হচ্ছে! কিন্তু বিধানসভায় এক রকম প্রস্তাব পাশ হল। তার পরে মন্ত্রিসভায় সেটা বদলে যেতে পারে কী করে? এটা তো অগণতান্ত্রিক।’’ পার্থবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার নতুন সিদ্ধান্ত ফের বিধানসভায় পাশ করিয়ে তবেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হবে।
কেন নাম পরিবর্তন চেয়েছে রাজ্য? নবান্নের বক্তব্য, গত বছরের জুলাইয়ে আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে দিল্লি গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের নাম ডব্লিউ (ওয়েস্ট বেঙ্গল) দিয়ে শুরু হওয়ায় রীতি অনুযায়ী সেখানে একেবারে শেষ দিকে বলার সুযোগ পান মুখ্যমন্ত্রী। এতে বিরক্ত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা দিন বসে অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের বক্তৃতা শুনতে হলেও তিনি বলার জন্য বেশি সময় পাননি। সে সময়ে অনেকে সভা ছেড়ে চলেও গিয়েছিলেন। তার পরে কলকাতায় ফিরেই নাম বদলের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এর আগে রাজ্যের নাম বদল চেয়ে দু’বার প্রস্তাব গিয়েছিল। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের নাম ইংরেজিতে ওয়েষ্ট বেঙ্গলের পরিবর্তে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ রাখার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। ২০১১-তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু দু’টি প্রস্তাবই কার্যকর করেনি কেন্দ্র। রাজ্যের পরিবর্তিত প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্র এ বার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy