গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
তিন বছর ধরে দফায় দফায় মেয়াদ বেড়েই চলেছে। শেষ বারের বর্ধিত সময়সীমা শেষের মুখেই ফের আরও ছ’মাস মেয়াদ বাড়ল রাজ্য সরকারের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের।
রাজ্যের প্রায় ১০ লক্ষ কর্মী যখন কিছুটা আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন, তখনই রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা করল। ফলে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কবে সামনে আসবে, তা নিয়ে তৈরি হল ঘোর অনিশ্চয়তা। আর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে কো-অর্ডিনেশন কমিটি, কনফেডারেশন-সহ সব বিরোধী কর্মী সংগঠন। এমনকি, কমিশনের সমালোচনায় সরব হয়েছে শাসকদল তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠনও। ফলে অস্বস্তি বেড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের।
ষষ্ঠ বেতন কমিশন বসেছিল ২০১৫-র ২৭ নভেম্বর। বেশ কয়েক বার মেয়াদ বৃদ্ধির পর তার সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা ছিল এ বছরের ২৭ নভেম্বর। কিন্তু তার আগেই বুধবার রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হল, কমিশনের মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়িয়ে ২৭ মে পর্যন্ত করা হল।
আর এই শেষ তারিখ ঘিরেই অনিশ্চয়তা বেড়েছে। কারণ ২০১৯-এর লোকসভা ভোট মে-জুন মাসেই হওয়ার কথা। ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গেলে আর কমিশনের সুপারিশ ঘোষণা করতে পারবে না রাজ্য সরকার। কারণ, তাতে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করা হবে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কমিশনের মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়িয়ে দিতে পারে বলেই মনে করছেন কর্মীদের একাংশ। সেটা হলে আরও অনিশ্চিত হবে সুপারিশ। তারপর কবে সেই সুপারিশ প্রকাশ্যে আসবে এবং কবে তা কার্যকর হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আরও পডু়ন: ফুটপাতের খাবারে ভেজাল রুখতে যখন তখন হানা দেব ভ্রাম্যমান ল্যাবরেটরি
কর্মী সংগঠনগুলির বক্তব্য, বেতন কমিশনের মেয়াদ বাড়াতে বাড়াতে যে ভাবে তা সাড়ে তিন বছরে নিয়ে গেল রাজ্য সরকার, তাতে তারা অত্যন্ত হতাশ। মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল যে সংগঠন, আইএনটিইউসি অনুমোদিত সেই কনফেডারেশনের তরফে সব কর্মী সংগঠনকে একযোগে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কনফেডারেশনের তরফে সুবীর সাহা বলেন, ‘‘যে ভাবে দিনের পর দিন বেতন কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তাতে স্পষ্ট যে, সরকারি কর্মীদের দাবিদাওয়ার প্রতি কোনও সহানুভূতি এই সরকারের নেই। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সিদ্ধান্তে সরকারি কর্মী এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও পঞ্চায়েত-পুরসভার কর্মী-সহ মোট ১০ লাখের মতো কর্মী এবং তাঁদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: ইস্তফা দিচ্ছেন গভর্নর উর্জিত? কেন্দ্র-আরবিআই সংঘাতে জল্পনা তুঙ্গে
বাম কর্মী সংগঠন কো অর্ডিনেশন কমিটি কাল বৃহস্পতিবার থেকেই আন্দোলনে নামছে। রাজ্য জুড়ে অফিসে অফিসে টিফিনের সময় ভিক্ষা কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, বিজয়শঙ্কর সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বঞ্চনার শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। কর্মচারীরা খুবই ক্ষুব্ধ। মুখ্যমন্ত্রীকে এর জবাবদিহি করতে হবে। ভবিষ্যতে প্রশাসনকে অচল করে দেওয়ার কর্মসূচি নেব আমরা। এই হুঁশিয়ারি দিচ্ছি।’’
বিজেপি ঘেঁষা সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদের শীর্ষনেতা দেবাশিস শীলও তীব্র আক্রমণ করেছেন রাজ্য সরকারকে। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার আবার প্রমাণ করল যে, তারা কর্মী-বিরোধী। কিছুতেই বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা পড়তে দেওয়া হচ্ছে না। বার বার মেয়াদ বাড়িয়ে তিন বছর ধরে কর্মীদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। আরও ছ’মাসের জন্য সেই বঞ্চনা নিশ্চিত করা হল।’’
বিরোধী সংগঠনগুলোর তরফ থেকে আসা এই সব মন্তব্যের চেয়েও বেশি অস্বস্তিকর হয়ে কিন্তু ধরা দিয়েছে তৃণমূলের নিজস্ব কর্মী সংগঠনের এক প্রবীণ নেতার প্রতিক্রিয়া। রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের মেন্টর গ্রুপের আহ্বায়ক মনোজ চক্রবর্তী এ দিন বলেছেন, ‘‘বেতন কমিশনের মেয়াদ আবার বৃদ্ধি করার এই সিদ্ধান্ত একেবারেই অনভিপ্রেত। যাঁরা বেতন কমিশন চালাচ্ছেন, তাঁরা আদৌ বেতন কমিশনের কাজকর্ম জানেন কি না, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’’
কনফেড়ারেশনের তরফে সুবীর সাহার আহ্বান, ‘‘রাজনৈতিক রং ভুলে সব কর্মী সংগঠনের এক হওয়া উচিত। বামেদের সংগঠন, কংগ্রেস এবং বিজেপির সংগঠন, তৃণমূলের সংগঠন— সবাইকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, একসঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য।’’
বিজেপি ঘেঁষা সরকারি কর্মচারি পরিষদের তরফে দেবাশিস শীল সাড়া দিয়েছেন আহ্বানে। ‘‘সব সংগঠনের উচিত এক হয়ে আন্দোলনে নামা। আমরাও তেমনই মনে করছি,’’—বলছেন দেবাশিসবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy