মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
১০ দফা দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বৃহস্পতিবার তাঁদের ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচির ত্রয়োদশতম দিন ছিল। এই আবহেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে জরুরি বৈঠক সারলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যসচিবকে বিকেলে ডেকে পাঠানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠক। নবান্ন সূত্রে খবর, হাসপাতালের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজকর্মের কেমন অগ্রগতি হয়েছে, সেই বিষয়েই আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। কতদূর কাজ এগিয়েছে, তা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকের পরই শুক্রবার রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিকে নিয়ে নবান্নে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদেরও থাকতে বলা হয়েছে।
জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির সিংহভাগই হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত। রাজ্য সরকারেরও তরফেও জুনিয়র ডাক্তারদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে। ‘প্যানিক বাটন’ থেকে শুরু করে মহিলা পুলিশকর্মী-সহ একাধিক বিষয়ে মুখ্যসচিব গত সেপ্টেম্বরে চিঠি পাঠিয়েছিলেন স্বাস্থ্যসচিবকে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কতদূর বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মুখ্যমন্ত্রী কেন নীরব, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। এই আবহেই বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যসচিবকে নিয়ে বৈঠক সারলেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্ন সূত্রে খবর, সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলির নিরাপত্তার বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন মমতা। সরকার যে পদক্ষেপগুলির কথা বলেছিল, সেগুলি কত দূর এগিয়েছে— সেই বিষয়ে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা, সিসিটিভি বসানো, পর্যাপ্ত শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা-সহ হাসপাতালের পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে আরও কী কী কাজ হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান। এই কাজগুলি কী ভাবে আরও দ্রুত শেষ করা যায়, সে বিষয়টি নিয়েও দুই আমলাকে প্রশ্ন করেন তিনি। নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোগত কাজে আরও গতি আনারও পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, এর পরেই শুক্রবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যসচিব। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদেরও বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। যাঁরা সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারবেন না, তাঁদের ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো অনশন করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। শুক্রবার বিকেলেই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে। এখনও পাঁচ জুনিয়র ডাক্তার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ধর্মতলা ও শিলিগুড়ি মিলিয়ে বর্তমানে ‘আমরণ অনশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন আট জন জুনিয়র ডাক্তার। তাঁদের শরীর ক্রমে ভাঙছে। দুর্বল বোধ করছেন প্রত্যেকেই। মূত্রে কিটোন বডির মাত্রা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন অনিকেত। জট কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেরও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। অনিকেতের কথায়, “প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা উচিত। আমাদের ১০ দফা দাবির যৌক্তিকতাকে মেনে অতি দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করা উচিত।”
নির্যাতিতার বিচার, হাসপাতালের নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামোগত বিষয়ে ১০ দফা দাবি নিয়ে সরকারকে চাপে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বৃহস্পতিবার থেকে ‘গণস্বাক্ষর সংগ্রহ’ শুরু করেছেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। এ দিন দুপুরে ধর্মতলার অনশনমঞ্চ থেকে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
তবে এই কর্মসূচি ঘিরেও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক তাঁরা জানান, ‘গণস্বাক্ষর সংগ্রহ’ করার লক্ষ্যে তিনটি ম্যাটাডর গিয়েছিল উল্টোডাঙা, শ্যামবাজার এবং শিয়ালদহ চত্বরে। সেই ম্যাটাডরগুলির বিরুদ্ধে পুলিশ ‘মামলা দিয়ে সক্রিয়তা’ দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ জুনিয়র ডাক্তারদের।
আগামী দিনে নাগরিক সমাজের হাত ধরে ‘গণস্বাক্ষর সংগ্রহ’ কর্মসূচিকে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দিতে চান জুনিয়র ডাক্তারেরা। জেলাগুলিতে ১০ দফা দাবির সমর্থনে ‘গণস্বাক্ষর সংগ্রহ’ কর্মসূচির বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় স্তরে নাগরিক সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তাঁরা।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে শুরু থেকেই পাশে থেকেছেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। এ বার সিনিয়রদের নিয়ে যৌথ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে চাইছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আলোচনায় বসেছিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্ট-এর প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবারের অনলাইন বৈঠকের পর শুক্রবার ফের একদফা বৈঠকে বসবেন জুনিয়র এবং সিনিয়র ডাক্তারেরা। শুক্রবারের বৈঠক হবে সশরীরেই। সূত্রের খবর, অনলাইন মাধ্যমে বৈঠক হওয়ায় আলোচনায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সেই কারণেই শুক্রে ফের সশরীরে বৈঠক ডাকা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy