Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
হাইকোর্টে সওয়াল

পাড়ুই হত্যায় অনুব্রত-যোগ ওড়াল রাজ্য

পাড়ুই থানার পুলিশ তাঁর কোনও দোষ খুঁজে পায়নি। কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) নিম্ন আদালতে যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতেও তাঁর নাম ছিল না। এ বার হাইকোর্টে সরকার পক্ষ জানিয়ে দিল, সাগর ঘোষ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

পাড়ুই থানার পুলিশ তাঁর কোনও দোষ খুঁজে পায়নি। কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) নিম্ন আদালতে যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতেও তাঁর নাম ছিল না। এ বার হাইকোর্টে সরকার পক্ষ জানিয়ে দিল, সাগর ঘোষ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সরকারি কৌঁসুলি মনজিৎ সিংহ মঙ্গলবার হাইকোর্টে বিচারপতি হরিশ টন্ডনের এজলাসে বলেন, ২০১৩-র ১৭ জুলাই অনুব্রত প্রকাশ্য সভায় যে মন্তব্য করেছিলেন, তাকে তাঁরা কোনও ভাবেই সমর্থন করেন না। তবে ওই মন্তব্যের সঙ্গে সাগর ঘোষ খুনের সম্পর্ক রয়েছে এমনটাও মনে করছেন না তাঁরা।

গত বছর ১৭ জুলাই, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে দলীয় কর্মীদের সামনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে অনুব্রত হুমকি দিয়েছিলেন, প্রতিরোধ হলে নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। পুলিশ বাধা দিলে তাদের বোমা মারার নির্দেশও কর্মীদের দিয়েছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। তার পরেই, ২১ জুলাই বীরভূমের পাড়ুইয়ে কসবা গ্রামের বাঁধ নবগ্রামে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মী সাগর ঘোষ, যাঁর ছেলে হৃদয় ঘোষ নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। পুত্রবধূ শিবানীদেবীর অভিযোগ ছিল, শ্বশুরমশাইকে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে পুলিশ জবরদস্তি তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে। সেখানে কয়েক জনের নাম লিখে সেই সব ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে আসল অপরাধীদের আড়াল করেছে।

পরে হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ সাগর-হত্যার যে এফআইআর নেয়, যাতে অনুব্রত মণ্ডলের পাশাপাশি বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীরও নাম আছে। অনুব্রত-বিকাশ এখনও অধরা।

সাগর-হত্যার সিবিআই তদন্ত চেয়ে শিবানীদেবী যে আলাদা মামলা করেছেন, বিচারপতি টন্ডনের আদালতে এ দিন তারই শুনানি ছিল। শুনানির শুরুতে সরকারি কৌঁসুলি বিচারপতিকে জানান, সাগর ঘোষ হত্যাকাণ্ডে পুলিশ ইতিমধ্যেই নিম্ন আদালতে আট জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে। অনুব্রত মণ্ডলের নাম সরাসরি না-করে তিনি বলেন, চার্জশিটে এক জনের নাম কেন উল্লেখ করা হয়নি, তার ব্যাখ্যা তিনি দেবেন। সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, পাড়ুইয়ের ঘটনার পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক গোলমাল ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল তাতে যুক্ত নন, তাঁর উস্কানিমূলক বক্তব্যের সঙ্গে ওই খুনের কোনও যোগসূত্র নেই। এবং সেই কারণেই চার্জশিটে অনুব্রতের নাম নেই।

বিচারপতি টন্ডন বলেন, এক বা একাধিক লোকের নাম নিয়ে চিন্তা নয়। যাঁরা জামিনে মুক্ত অথবা যাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করছে না, তাঁরাই মূল অভিযুক্ত হলে সেটা চিন্তার কথা। “অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে কোনও সংশয় নেই তো?” ফের সরকারি কৌঁসুলির কাছে জানতে চান বিচারপতি। জবাব আসে, “না। কোনও সংশয় নেই।” সরকারি কৌঁসুলির বক্তব্য: সাগরবাবুর স্ত্রী-সহ সাত জন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে সকলেই মূল অভিযুক্ত সুব্রত রায় ও ভগীরথ ঘোষের নাম বলেছেন। শুধু শিবানী ঘোষ গোপন জবানবন্দিতে অনুব্রতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

শিবানীদেবীর আবেদন পড়ে বিচারপতি টন্ডন সরকারি কৌঁসুলিকে প্রশ্ন করেন, “পুলিশ কারও মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে বলে যদি অভিযোগ ওঠে, তা হলে কি প্রশাসনের দায়িত্ব নয় তদন্ত করে দেখা? অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে প্রশাসন কি কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে?” সরকারি কৌঁসুলি বলেন, “রাজ্য পুলিশের ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসার তদন্ত করেছেন। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করে তাঁর বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।”

বিচারপতির এ বার প্রশ্ন, “অভিযোগকারী মহিলা ভদ্রলোককে (অনুব্রত মণ্ডলকে) শনাক্ত করতে পেরেছিলেন?” সরকারি কৌঁসুলির উত্তর: উনি সর্বজন পরিচিত। তাঁকে শনাক্ত করতে অসুবিধা হয়নি।

বিচারপতির প্রশ্ন: খুনের ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়েছে কি? না-হলে সিবিআই তদন্ত কেন হবে না?

উত্তর: কোনও মামলার চার্জশিট পেশ হয়ে গেলে আদালতের আর ওই মামলার তদন্ত তত্ত্বাবধান করার প্রয়োজন হয় না।

বিচারপতি অবশ্য নিজের যুক্তিতে অটল থাকেন। বলেন, “আদালতের বিচার্য বিষয় হল, তদন্ত ঠিকঠাক হয়েছে কি না দেখা। সঠিক তদন্ত না-হলে অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানো যায় কি না বিচার করা।” অন্য দিকে সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, পাড়ুই তদন্ত স্বচ্ছ ভাবে, ঠিক মতোই হয়েছে। সরকার পক্ষের এই ব্যাখ্যায় অবশ্য বিচারপতি সন্তুষ্ট হননি। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে না কেন, তার ব্যাখ্যা এখনও তিনি পাননি!

এই সময় উঠে দাঁড়ান জিপি অশোকবাবু। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সারদা-কাণ্ড, মদন তামাঙ্গ হত্যা-সহ অন্তত সাতটি বড় মামলার দায়িত্ব সিবিআই পেলেও কিছু করতে পেরেছে কি? “ওদের পরিকাঠামো নেই। তাই পাড়ুই-মামলার তদন্তভার অযথা সিবিআই-কে দেওয়ার দরকার নেই।” যুক্তি পেশ করেন জিপি।

শুনানি শেষে বিচারপতি টন্ডন জানিয়ে দেন, পাড়ুই মামলায় সিবিআই তদন্তের আবেদন সম্পর্কে রাজ্যকে দশ দিনের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে। পরবর্তী শুনানি হবে ১৯ অগস্ট।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE