Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Kolkata Doctor Rape and Murder

আরজি কর আন্দোলন না দলের অভিযান, দুয়ের টানাটানি রাজ্য বিজেপিতে, সিদ্ধান্ত হল না রবিতেও

শ্যামবাজারের পরে ধর্মতলা। দুই ধর্নার পাশাপাশি আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে একের পর এক কর্মসূচির মধ্যেই রয়েছে রাজ্য বিজেপি। এরই মধ্যে সোমবার দেশ জুড়ে শুরু হচ্ছে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:১৭
Share: Save:

সোমবার থেকে গোটা দেশে শুরু হচ্ছে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান। প্রতি ছ’বছর অন্তর নতুন করে বিজেপি সদস্য সংগ্রহ অভিযান করে। ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সদস্য করে শুরু হবে এ বারের অভিযান। সব রাজ্যেই একই ভাবে চলবে অভিযান। কিন্তু বাংলায় কী হবে? রাজ্যে আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে পথে নামা বিজেপি এখনই সাংগঠনিক অভিযান শুরু করবে কি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই রবিবার দলের সল্টলেকের রাজ্য দফতরে বৈঠকে বসেন রাজ্য নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়ে গেলেও দলের সব স্তরে এখনই সদস্য সংগ্রহ অভিযান হবে না। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে পরে দলকে কবে অভিযানে নামানো হবে সেই সিদ্ধান্ত হবে।

প্রসঙ্গত, এ বার বাংলায় বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্য দলের প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। রবিবার রাজ্যের সব নেতাদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে শমীকও হাজির থাকলেও ঠিক কবে থেকে অভিযান শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে চাননি তিনি। এ নিয়ে এখনই কোনও কথা বলতে নারাজ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তবে শমীক বলেন, ‘‘আন্দোলন আর অভিযান সমান্তরাল ভাবে চলবে।’’

আন্দোলন বনাম অভিযানের এই দ্বন্দ্বে রাজ্য বিজেপির পাশে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে দলকে বেশি করে আন্দোলনে থাকার পক্ষেই কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে জেলায় জেলায় অভিযানের প্রস্তুতিও রাখতে হবে। সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধে অভিযান শুরু করা যায় কি না তা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে রাজ্য দলকে।

প্রথমে শ্যামবাজারে ও এখন ধর্মতলায় আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে ধর্না কর্মসূচিতে রয়েছে বিজেপি। এরই মধ্যে এক দিন স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করে। সে দিন সুকান্ত ছাড়াও পথে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানের দিন দল পথে নামবে না বলে জানিয়েছিল। যদিও মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে পুলিশের দমনপীড়নের অভিযোগে লালবাজার অভিযান করেন সুকান্ত-সহ রাজ্য নেতারা। এর পরে দলের মহিলা মোর্চা সল্টলেকে মিছিল করে রাজ্য মহিলা কমিশনে প্রতীকী তালা ঝোলায়। একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে চলা রাজ্য বিজেপি গোটা দেশে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর দিনেও পথেই থাকতে চায়। আগেই দলের পক্ষে সোমবার জেলায় জেলায় জেলশাসকের দফতর ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই কর্মসূচি সফল করতে দলের সব সাংসদ, বিধায়কদের নিজের নিজের জেলায় থাকতে বলা হয়েছে। তাই কলকাতা ধর্না চললেও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত সোমবার বালুরঘাটে থাকবেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।

আপাতত সদস্য সংগ্রহ অভিযান পুরদমে চালু না করলেও চিন্তায় রয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে যে আন্দোলনের ছবি তাতে অরাজনৈতিক ভাবে সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন। সমাজের বিশিষ্ট জনেরা পথে নামলেও সেটা অরাজনৈতিক কোনও মঞ্চের ডাকেই। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি অবশ্য এই আন্দোলনের রাশ নিজেদের হাতে নিতে মরিয়া হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত বিজেপি অসফল। কারণ, সাধারণ মানুষই রাজনৈতিক দলকে এই আন্দোলনে ‘অনুপ্রবেশকারী’ মনে করছে। সিপিএম-সহ অন্যান্য বিরোধী দলের কর্মীরা ‘পতাকাহীন’ আন্দোলনে সামিল হলেও বিজেপি সেটা চায় না। সাধারণের আন্দোলনকে সমর্থন দিলেও দলীয় পতাকা নিয়েই দল অন্দোলনে থাকুক চান দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে দলের নীচুতলার কর্মীরা যে সাধারণের মিছিলেই পা মেলাচ্ছেন তা টের পেয়েছেন রাজ্য নেতারাও।

তা নিয়ে দলের আপত্তি না থাকলেও আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভের ডিভিডেন্ড বিজেপি পাবে কি না সেই চিন্তাও রয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের যে নির্দেশ তাতে, এই বিক্ষোভের আবহ জিইয়ে রাখতে হবে। তার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও সঙ্গ দিতে তৈরি। গত শুক্রবার বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল হাজির ছিলেন ধর্মতলার ধর্নায়। রবিবার যোগ দেন ত্রিপুরা থেকে ভোটে জিতে দ্বিতীয় মোদী মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া প্রতিমা ভৌমিক আসেন ধর্মতলায়।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও সেপ্টেম্বরের পরে অক্টোবর নিয়েই চিন্তা রাজ্য বিজেপির। কারণ, ২ অক্টোবর মহালয়ার দিন থেকেই রাজ্যে পুজোর আবহ তৈরি হয়ে যাবে। সেপ্টেম্বরেও গণেশ চতুর্থী এবং বিশ্বকর্মা পুজো রয়েছে। সেই সময়ে কর্মীদের তো বটেই নেতাদেরও কতটা পথে নামানো যাবে তা নিয়েও চিন্তা রয়েছে। তবে সুকান্তের দাবি, ‘‘আমাদের কোনও চিন্তা নেই। যাবতীয় চিন্তা এখন তৃণমূল আর মুখ্যমন্ত্রীর। বিজেপি পথেই থাকবে। আর আগে থেকেই বলে রাখছি, পুজোটা ওদের আনন্দে কাটবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE