Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
WBBSE

ভুল নয়, বানানের হেরফেরে কাটা হবে না নম্বর

মাধ্যমিকের উত্তরপত্র দেখার ক্ষেত্রে বানান নিয়ে পর্ষদের সাম্প্রতিক এক নির্দেশিকা ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছিল।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

মধুমিতা দত্ত ও আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০৩:৩৯
Share: Save:

দেশের রাজধানীর বানান কেউ লেখে ‘দিল্লি’, কেউ কেউ এখনও লেখে ‘দিল্লী’। এই যে বানানভেদ, বানানের এই যে হেরফের— এই সব ক্ষেত্রেই মাধ্যমিকে নম্বর কাটতে বারণ করা হয়েছে বলে বুধবার জানান মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বানান ভুল করলে নম্বর কাটা যাবে না, এ কথা বলা হয়নি।

মাধ্যমিকের উত্তরপত্র দেখার ক্ষেত্রে বানান নিয়ে পর্ষদের সাম্প্রতিক এক নির্দেশিকা ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতেই পর্ষদ-সভাপতি এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বানান হেরফের হলে নম্বর কাটা চলবে না। বানান ভুল করলে নম্বর না-কাটার কথা কোথাও বলা হয়নি।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, এখন নানা ধরনের বানান বিধি রয়েছে। দেখা গিয়েছে, পরীক্ষার্থীরা অনেক সময় এক শব্দের দু’রকম বানান লেখে। বিধিভেদে দু’রকম বানানই সিদ্ধ। সে-ক্ষেত্রে দু’টিতেই নম্বর দেওয়া উচিত। তার পরেই দেশের রাজধানীর বানানের উদাহরণ দিয়ে পর্ষদ-প্রধান বলেন, ‘‘কেউ ‘দিল্লি’ লিখলে তাকে যেমন নম্বর দিতে হবে, কেউ ‘দিল্লী’ লিখলে তাকেও বঞ্চিত করা যাবে না। কেননা দু’রকম বানানেরই চল আছে। নম্বর কাটব কী করে? বানানের হেরফের বলতে এটাই বোঝানো হয়েছে।’’

গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত বাংলার শিক্ষিকা সুদেষ্ণা মৈত্র জানান, তাঁরা যখন খাতা দেখতেন, লেখার উপরেই জোর দিতে বলা হত। যদি দেখা যেত, পরীক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার বোধটা ঠিক আছে, তা হলে এক-আধটা বানান ভুল করলেও তাকে নম্বর দেওয়া হত। গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল আগে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনেই ছিল, পরে সিবিএসই বোর্ডের অধীনে চলে যায়। সুদেষ্ণাদেবী জানান, তিনি দুই বোর্ডেরই খাতা দেখেছেন। দুই ক্ষেত্রেই দেখেছেন, প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। তখন বলা হত, একটি প্রশ্নে চারটি বানান ভুল হলে এক নম্বর কাটা যাবে। তিনি বলেন, ‘‘যত দূর জানি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বাংলা আকাদেমির বানান বিধি অনুসরণ করে। আর ‘প্রপার নাউনের’ (নামবাচক বিশেষ্য বা ব্যক্তিনাম) বানান তো যে যেমন লেখে, তেমনই লিখতে হবে।’’

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘‘সংস্কৃত থেকে বাংলায় আসা অধিকাংশ শব্দের বানান নিয়ে কোনও সঙ্কট নেই। ণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধানে ভুল করার সুযোগও নেই। বানান নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে অন্য উৎস থেকে আসা শব্দ আর ক্রিয়াপদের কিছু রূপে।’’ তাঁর মতে, পর্ষদ বানানের হেরফেরের কথা বলছে। কিন্তু শিক্ষার তো একটা ‘স্ট্যান্ডার্ড সিস্টেম’ (আদর্শ বিধি) তৈরি করতে হবে। বানান তো শিখতেই হবে। ‘‘একলব্য স্কুলের পড়ুয়াদের এমন সঙ্কট হতে পারে। কারণ তারা বাড়িতে যে-ভাষায় কথা বলে, স্কুলে সেই ভাষায় কথা বলে না। তাই তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু পর্ষদের ক্ষেত্রে তো এমন ঘটনা ঘটছে না,’’ বলেন বিশ্বজিৎবাবু।

কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনের বক্তব্য, বানানের ‘হেরফের’ বলতে অধিকাংশ শিক্ষক বানানের ঠিক-ভুলটাই বোঝেন। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বানানের হেরফের বলতে কী বোঝাতে চাইছে, নির্দেশিকায় তা স্পষ্ট করে দিলে ভাল হত। তা হলে এই বিতর্ক হত না। কয়েক জন শিক্ষক-নেতার মতে, আসলে বানান নিয়ে যে-বিতর্ক শুরু হয়েছে, তার অবসান ঘটাতে পর্ষদ এখন নিজেরা যুক্তি সাজাচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

WBBSE Madhyamik Exam Spelling Mistake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy