মৃত তৃণমূল নেতা আবুল নাসার। —নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব মেদিনীপুরে মন্দারমণির হোটেলে উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল নেতার রহস্যমৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন তাঁর বান্ধবী এবং ওই বান্ধবীর প্রেমিক। আমডাঙার তৃণমূল নেতা আবুল নাসারের সঙ্গে শুক্রবার রাতে হোটেলে ছিলেন তাঁর এক বান্ধবী। তাঁকে আটক করে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পর স্থানীয় হোটেল থেকে পাকড়াও করা হয় এক যুবককে। তিনি ওই বান্ধবীর প্রেমিক বলে জানা যাচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের অনুমান, এই মৃত্যুর নেপথ্যে ত্রিকোণ সম্পর্কের জটিলতা থাকতে পারে। মৃতের মায়ের দায়ের করা লিখিত অভিযোগেও ধৃত যুবকের নাম পাওয়া গিয়েছে। পরিকল্পনা করে ৩৪ বছরের তৃণমূল নেতাকে মন্দারমণিতে নিয়ে এসে খুন করা হয়েছে কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ বলে জানাচ্ছে পুলিশ। আপাতত ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য রবিবারই তাঁদের আদালতে হাজির করানো হবে।
শনিবার সকালে মন্দারমণির একটি হোটেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় আমডাঙার তৃণমূল নেতা আবুলের ঝুলন্ত দেহ। আবুল বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, আবুলকে খুন করা হয়েছে। অন্য দিকে, দেহ উদ্ধারের কিছু ক্ষণের মধ্যে মন্দারমণি কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে আটক হন এক যুবতী। তিনি ওই তৃণমূল নেতার সঙ্গে হোটেলে উঠেছিলেন। তাঁকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, আবুলের সঙ্গে বছর দুয়েক ধরে ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি লাগোয়া কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন হোটেলে তৃণমূল নেতার সঙ্গে তাঁর যাতায়াত ছিল। পাশাপাশি, ধৃত যুবতী স্বীকার করেছেন যে, একাধিক পুরুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। ধৃত যুবক তাঁর প্রেমিক এবং তৃণমূল নেতার ভাল বন্ধু বলে দাবি করেছেন তিনি।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ধৃত যুবক প্রোমোটারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ধৃত যুবতীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ওই তৃণমূল নেতার সূত্রে। তবে মাস কয়েক আগে যুবতীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে যুবতীকে সম্পর্কে থাকতে বাধ্য করছিলেন তৃণমূল নেতা আবুল। এ জন্য কি দু’জনে মিলে আবুলকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন? জানা যাচ্ছে, আবুলকে মন্দারমণি বেড়াতে আসার প্রস্তাব দেন ধৃত যুবকই। প্রথমে তিনি জানিয়েছিলেন, তিন জনে মিলে বেড়াতে যাবেন। পরে আরও এক মহিলা তাঁদের সঙ্গে মন্দারমণি বেড়াতে আসেন বলে খবর। যদিও শনিবার তাঁর খোঁজ পায়নি পুলিশ।
অন্য দিকে, যে হোটেল থেকে ওই তৃণমূল নেতার দেহ পাওয়া গিয়েছে, সেখানকার কর্মীরা জানাচ্ছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বার কয়েক হোটেলের ঘরে যাতায়াত করেন ধৃত মহিলা এবং আবুল। আবুলের ঘরে অনেক রাত পর্যন্ত মদ্যপানের আসর বসে। ঘর থেকে বার কয়েক চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যায় বলে দাবি করেছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক হোটেলকর্মী। মন্দারমণি কোস্টাল থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসছে সম্পর্কের টানাপড়েন থেকে খুনের চক্রান্তের কথা। তবে সেটা নিয়ে এখনও পুলিশ নিশ্চিত নয়। ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘আবুলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে অন্য যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে গড়তে চাইছিলেন ধৃত যুবতী। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আবুল। তাই তাঁকে খুন করে পথের কাঁটা দূর করতে চেয়েছিলেন কি না ওই যুগল, সেটা তদন্তসাপেক্ষ। তৃণমূল নেতার রহস্যমৃত্যু প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) শুভেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘এক মহিলা ও এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। আগামিকাল আদালতে পেশ করে তাঁদের হেফাজতে চাওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy