ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে জ়িনত। —প্রতীকী চিত্র।
‘বাঘবন্দি খেলা’ চলছেই ঝাড়গ্রামে। বাঘিনির গলায় রেডিয়ো কলারে ট্র্যাকার রয়েছে। ড্রোনেও নজরদারি চলছে। গতিবিধি জানতে যে খুব বেশি বেগ পেতে হচ্ছে বনকর্মীদের, তা-ও নয়। কিন্তু এখনও কোনও ভাবেই ওড়িশা থেকে আসা বাঘিনি জ়িনতকে বাগে আনতে পারল না বন দফতর!
ওড়িশার সিমলিপালের জঙ্গল থেকে ঝাড়খণ্ড ঘুরে শুক্রবার ঝাড়গ্রামে ঢুকে পড়ে জ়িনত। শনিবার সকালে খবর পাওয়া যায়, কটাচুয়ার জঙ্গল থেকে কাঁকড়াঝোড় ও ময়ূরঝর্ণার জঙ্গলে ঢুকেছে সেই বাঘিনি। সেখানে বনকর্মীরা তাকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও হদিস পাননি। তার পর থেকেই জ়িনতের অবস্থান জানতে পারছিলেন না বনকর্মীরা। বন দফতর সূত্রে খবর, বাঘিনির হদিস পেতে জিপিএস ট্র্যাকার হাতে নিয়ে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সন্ধান চালিয়েছেন তাঁরা। অবশেষে বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত জুয়ারধরা গ্রামে জ়িনতের গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, ‘‘কাঁকরাঝোড় জঙ্গলে বাঘিনির গতিবিধি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। জঙ্গল লাগোয়া আট-ন’টি গ্ৰামে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সুন্দরবন থেকে একটি টিম আনা হয়েছে। বাঘিনিকে ধরার সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’’
প্রশ্ন উঠছে, গলায় ট্র্যাকার থাকা সত্ত্বেও জ়িনত কী ভাবে ওই বিস্তীর্ণ এলাকার জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে? কেন তাকে বাগে আনতে পারছেন না বনকর্মীরা? বনকর্মীদেরই একাংশের বক্তব্য, বাঘিনির গলায় থাকা ট্র্যাকার থেকে তার গতিবিধি সম্পর্কে জানা যাচ্ছে ঠিকই। সেই মতো জায়গায় জায়গায় খাঁচা ফেলে রেখে গরু-ছাপ টোপ দেওয়াও হচ্ছে। কিন্তু কোনও ফাঁদেই পা দিচ্ছে না জ়িনত। তার অবস্থান জানতে পারা মাত্র সেখানে বনকর্মীরা পৌঁছেও যাচ্ছেন। কিন্তু যত ক্ষণে তাঁরা পৌঁছচ্ছেন,তত ক্ষণে সেখান থেকে চলে যাচ্ছে জ়িনত। ‘ট্র্যাঙ্কুলাইজ’ (কাবু) করার জন্য তার দেখা পাওয়া জরুরি। সেটা এখনও হয়ে ওঠেনি বলে খবর বন দফতর সূত্রে।
এ ছাড়াও আরও একটি কারণের উল্লেখ করেছেন বাঘ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুন্ডু। তাঁর মত, ঝাড়গ্রাম-ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল এলাকা মূলত শ্যাডো জ়োন। অর্থাৎ সেখানে রেডিয়ো সিগন্যাল পেতে সমস্যা হয়। সেই কারণেও হয়তো বাঘিনির সঠিক অবস্থান জানতে পারছেন না বনকর্মীরা। জয়দীপ বলেন, ‘‘বাঘ উদ্ধার করার জন্য এ রাজ্যে দক্ষ বনকর্মী রয়েছেন। কিন্তু যে এলাকায় জ়িনত রয়েছে, সেই জায়গাটা শ্যাডো জ়োন। ওই বাঘিনি ওড়িশা থেকে বেরিয়ে এসে ঝাড়খণ্ড হয়ে ঝাড়গ্রামে ঢুকেছে। ওড়িশার বনকর্মীরা কেন ব্যর্থ হলেন? ঝাড়খণ্ডের বনকর্মীরা কেন বাঘিনিকে বাগে আনতে পারলেন না? আমার আশা, এ রাজ্যের বনকর্মীরা বাঘিনিটিকে উদ্ধার করবেন।’’
গত ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে তিন বছরের জ়িনতকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে (টাইগার রিজ়ার্ভ, সংক্ষেপে বা এসটিআর) আনা হয়েছিল। কয়েক দিন ঘেরাটোপে রেখে পর্যবেক্ষণের পরে রেডিয়ো কলার পরিয়ে ২৪ নভেম্বর তাকে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হয়েছিল। বন দফতর সূত্রে খবর, সেখান থেকেই ঝাড়খণ্ডের দিকে হাঁটা দেয় জ়িনত। সিমলিপাল থেকে গুরবান্দা হয়ে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে পৌঁছে গিয়েছিল সে। সেখানে জামশেদপুর বন বিভাগের চাকুলিয়া রেঞ্জের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল তাকে। এর পর চাকুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবাঁন্ধি এলাকা থেকে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার অন্তর্গত কাটুচুয়া জঙ্গলে ঢুকে পড়ে জ়িনত।
ঝাড়গ্রামে এখন পর্যটনের ভরা মরসুম। যেখানে জ়িনত রয়েছে বলে খবর, তার আশপাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে সাতটি হোমস্টে। ফলে, বাড়তি সতর্ক বন দফতর। ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলছেন, ‘‘সন্ধ্যার পরে যদি একান্তই বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে তা হলে রেঞ্জ অফিসার ও বিট অফিসারকে জানালে বন দফতরের গাড়ি এসকর্ট করবে।’’ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা বন দফতরের নজরদারি ও গাড়ি থাকছে। পড়শি রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বন দফতর জানিয়েছে, জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় মাইকি প্রচার করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তাঁরা যাতে জঙ্গলে না যান। অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করা হচ্ছে। আর বেরোতে হলে দল বেঁধে বেরোনোর পরামর্শ দিচ্ছেন বনকর্মীরা। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের উদ্দেশে তাঁদের অনুরোধ, বাঘিনি সংক্রান্ত কোনও খবর পেলেই যেন থানা অথবা বন দফতরে তাঁরা জানান। এ ছাড়া বাঘিনি সম্পর্কে কোনও গুজব ছড়াতেও নিষেধ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy