মোগলমারি প্রত্নক্ষেত্রে চলছে সংরক্ষণের কাজ। নিজস্ব চিত্র
পশ্চিম মেদিনীপুরের মোগলমারির বৌদ্ধ প্রত্নক্ষেত্র সংস্কার ও সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকারের পুরাতত্ত্ব দফতর। প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো এই প্রত্নক্ষেত্রটিতে প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উদ্যোগে একাধিক বার উৎখননের পরে আদি ও মধ্য মধ্যযুগের বাংলার স্থাপত্য সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে।
সেই ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য প্রথমেই স্থাপত্যটি ঘিরে গজিয়ে ওঠা আগাছার জঙ্গল যেমন পরিষ্কার করা হয়েছে, তেমনই আশেপাশের বড় গাছও কাটা হয়েছে। স্থাপত্যটির অন্তত তিনটি স্তর রয়েছে। অতি প্রাচীন এই তিনটি স্তরের মধ্যে সেই গাছগুলোর শিকড় ঢুকে পড়লে তার ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ হতে পারত। ভেঙে পড়তে পারত কোনও কোনও অংশ। স্থাপত্যটি ঘিরে ইট-মাটির যে স্তূপ কোথাও কোথাও পড়েছিল, তাও পরিষ্কার করা হয়েছে।
প্রত্নক্ষেত্রটিতে একটি মহাবিহার ও একটি বিহার ছিল বলে মত পুরাতত্ত্ববিদদের। দীর্ঘ সময় ধরে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে সেই বিদ্যায়তন। দীর্ঘ দিন ধরে তা মাটির নীচে ছিল। কিন্তু অনেক বছর ধরে চলা উৎখননের ফলে তার অনেক অংশই এখন সোজাসুজি জল-বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। তাতে পুরনো দেওয়ালের ক্ষতি হচ্ছে। দেওয়াল রক্ষা করার জন্য তীব্র গতিতে জলের ঝাপটা দিয়ে তার উপরে পড়া ক্ষতিকর আস্তরণ পরিষ্কার করা হয়েছে, তবে খেয়াল রাখা হয়েছে, যাতে তাতে মূল কাঠামোর কোনও ক্ষতি না হয়।
যে কারণে, মূল স্থাপত্যটির প্রাচীন, দেওয়াল, স্তূপ ও অন্যত্র যে ছোট ছোট আগাছা জন্মেছে, তা অত্যন্ত ধৈর্য ও যত্ন নিয়ে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে মেরে ফেলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থায় আগাছার যে শিকড়গুলি ইটের মধ্যে ঢুকে রয়েছে, সেগুলি আর বার করার দরকার হয়নি, সেগুলি এই প্রক্রিয়াতেই শুকিয়ে ঝরে যাবে। পুরাক্ষেত্রটি এখন খোলা রয়েছে, তাতে আশঙ্কা রয়েছে উইঢিপি তৈরি হতে পারে। সে জন্য মেঝে, দেওয়ালে সূক্ষ্ম ছিদ্র করে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে তা রোখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংরক্ষণ কাজের চূড়ান্ত পর্বে স্থাপত্যটি রক্ষা করতে সর্বত্র প্রয়োজন মতো রাসায়নিক প্রলেপ দেওয়া হবে। রয়েছে হাওয়া-বাতাস খেলার বন্দোবস্ত, সেই সঙ্গে বৃষ্টির জমা জল বার করে দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, ভেঙে পড়া অংশ সারানো। শুধু সারানো নয়, সারানোর পরে সেই অংশটিকে বাকি স্থাপত্যের যে অংশের যে চরিত্র, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলাও। এখানে শুধু সেই প্রাচীন কালে বানানো ইটই নয়, রয়েছে ল্যাটেরাইট ও বালিপাথরও। তাই সে কালে যেমন ভাবে ইট বানানো হত, সে ভাবেই নতুন ইট তৈরি করে ভাঙা অংশ, ফাটা দেওয়াল বোজানো হচ্ছে। যত্ন নিয়ে করা হচ্ছে পাথর দিয়ে তৈরি অংশের সংস্কারও।
এই প্রত্নক্ষেত্রটি রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের সংরক্ষিত। রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের বরিষ্ঠ প্রত্নতত্ত্ববিদ প্রকাশ চন্দ্র মাইতি বলেন, ‘‘আমাদের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণ স্থাপত্যবিদ অঞ্জন মিত্রের নির্দেশনায় সংস্কারের কাজ চলছে।’’ এই কাজটি করছে ক্যালটেক নামে একটি সংস্থা। ঘন জনবসতি ঘেরা এলাকায় এই কাজ করা বেশ শক্ত। এই সংস্থার সঙ্গেই যুক্ত সংরক্ষণ পরামর্শদাতা অঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘এলাকার সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছেন সাহায্য করার জন্য। শুধু সংস্কার ও সংরক্ষণই নয়, আমরা চাই এই প্রত্নক্ষেত্রটিকে শিক্ষামূলক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তুলতে। গোটা এলাকাটি আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে।’’ অঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘আমরা চাইছি, এই পুরাক্ষেত্র সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করতে। তবে এলাকাটি পুরনো বলে খুবই ভঙ্গুর। তাই সেখানে যাতে কারও পা না পড়ে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেখা যাবে, কিন্তু প্রত্নক্ষেত্রে পা দেওয়া যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy