কচুরিপানা।—ছবি সংগৃহীত।
তিনি সাঁতার জানতেন না। ভেবেছিলেন গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা সহজ হবে। কিন্তু হল না।
কচুরিপানায় জড়িয়ে উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহর থেকে ভাসতে ভাসতে বছর কুড়ির যুবতী চলে এসেছিলেন প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে, উল্টো দিকে হুগলির চন্দননগরের রানিঘাটের কাছে। সোমবার সকালে ওই ঘাটের কাছে নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে নেমে শেখ রাজু নামে এক মৎস্যজীবী কচুরিপানায় জড়ানো যুবতীকে দেখে ভেবেছিলেন মৃতদেহ। পরক্ষণেই ঘাটকর্মীদের চিৎকারে তাঁর খেয়াল হয়, মৃতদেহ তো নয়, এক যুবতী ভেসে যাচ্ছেন। তাঁর হাত নড়ছে!
শেখ রাজু নৌকায় পিছু নেন। পিছু নেন অন্য মৎস্যজীবীরাও। কাছেই চন্দননগরের জোড়াঘাটের কাছে যুবতীকে বাঁচাতে রাজু নৌকা থেকে দড়ি ছোড়েন। মহিলা ধরতে পারেননি। তখন নৌকাটি একেবারে তাঁর কাছে নিয়ে গিয়ে নিজেই দড়ি দিয়ে যুবতীকে বেঁধে ঘাটে টেনে নিয়ে আসেন। তত ক্ষণে সেখানে চলে আসেন রানিঘাটের কর্মীরাও। সকলে মিলে যুবতীকে ঘাটে তুলে দেখেন, তিনি অচৈতন্য। পুলিশ আসে। যুবতীকে চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পারিবারিক বিবাদের জেরে আত্মহত্যা করতে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন বছর কুড়ির যুবতী। হাসপাতালে পুলিশের কাছে নিজের আত্মহত্যার চেষ্টা কথা জানিয়েছেন যুবতী। মেয়েকে ফিরে পেয়ে যুবতীর মা বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে রাগারাগি করে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। আত্মহত্যার চেষ্টা করবে, ভাবিনি। ঘাটকর্মী এবং মাঝিভাইদের নজরে না এলে মেয়েকে জীবিত ফিরে পেতাম না। ওঁদের ধন্যবাদ।’’ দুপুরেই মা ও পরিবারের অন্যেরা যুবতীকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তাঁরা হালিশহরের হাজিনগরের বাসিন্দা। ওই যুবতী হালিশহরের একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
যুবতীর জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার পরে বছর তেইশের শেখ রাজু বা ঘাটকর্মী গোপালচন্দ্র মল্লিকের মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, ‘প্রায় ১০ কিলোমিটার গঙ্গায় কী করে ভেসে থাকলেন ওই যুবতী? কারণ, যুবতীর মা জানিয়ে গিয়েছেন, মেয়ে সাঁতার জানেন না। কেউ কেউ মনে করছেন, এ যাত্রায় কচুরিপানায় জড়িয়ে যাওয়ায় বেঁচে গিয়েছেন ওই যুবতী।
শেখ রাজু চন্দননগরের জেলেপাড়ার বাসিন্দা। প্রতিদিন ভোরে নৌকা নিয়ে গঙ্গায় মাছ ধরাই তাঁর জীবিকা। গোপাল ফেরি পরিষেবায় যুক্ত। জীবিকার তাগিদে নদীকে ঘিরেই তাঁদের দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে। নদীর বুকে কত মৃতদেহ যে তাঁরা ভেসে যেতে দেখেছেন, তাঁর ইয়ত্তা নেই। পুলিশের নির্দেশে অনেক মৃতদেহ জল থেকে তুলতেও হয়েছে তাঁদের। এ বার তাঁরা প্রাণ বাঁচালেন।
শেখ রাজু বলেন, ‘‘উনি যে প্রাণে বেঁচে গেলেন, এটাই আনন্দ।’’ ঘাটকর্মী গোপাল বলেন, ‘‘লঞ্চ ছাড়ার সময় একটি মৃতদেহ ভেসে যাচ্ছে মনে করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি, হাত নড়ছে। কী করে এতদূর পর্যন্ত ভেসে রইলেন, এটাই অবাক করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy