সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো প্রকল্পের এখনকার হাল। ছবি: দীপঙ্কর দে।
তখনও যদি এমন হত! আক্ষেপ করছে সিঙ্গুর।
বীরভূমের ডেউচা-পাঁচামির কয়লাখনি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সকলের আস্থা এবং সম্মতি নিয়ে কাজ করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডেউচা যে ফের সিঙ্গুর হবে না, এই আশ্বাসও দিয়েছেন। আর সেই সূত্রেই সিঙ্গুরের বাসিন্দাদের স্মৃতিতে ফিরে আসছে ১৫-১৬ বছর আগের সেই আগুনঝরা দিনগুলি। অনেকেই মনে করছেন, তখনও সহমতের ভিত্তিতে কাজ হলে এ তল্লাটে শিল্প ও কৃষি— দু’টোই হত।
টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য সিঙ্গুরে প্রায় হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। পক্ষে-বিপক্ষে স্পষ্টতই দু’ভাগ হয়ে গিয়েছিলেন সিঙ্গুরের বাসিন্দারা। একদলের পরিচয় হয়েছিল ‘ইচ্ছুক’ (যাঁরা স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিলেন)। অন্য দল ‘অনিচ্ছুক’ (জমি অধিগ্রহণ হলেও যাঁরা সরকারি ক্ষতিপূরণের চেক নেননি)। এখন অবশ্য দু’পক্ষের লোকজনই মনে করছেন, তখন অভাব ছিল শাসক-বিরোধী সহমতেরই। যথারীতি চাপানউতোরও রয়েছে।
মনোহর বাঙালের কথাই ধরা যাক। সিঙ্গুরের এই যুবক সেই সময় টাটাটদের প্রকল্পে চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকল্প না হওয়ায় আর চাকরি হয়নি। এখন মুদিখানা চালান। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘সেই সময় সিঙ্গুরে কিছু হোক, আন্দোলনকারীরা তা চাননি। আলোচনার মানসিকতাও ছিল না। অথচ, এখানে প্রকল্পটা হতে দিলে আমার মতো সিঙ্গুরের অনেক ছেলেরই চাকরি হত।’’
মনোহরের ক্ষোভ, সেই সময়ে বিরোধী তৃণমূলের ভূমিকায়। জেলা সিপিএম নেতৃত্বও মনে করছেন, তখনকার বিরোধী দলনেত্রী (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যদি সহমতের ভিত্তিতে কাজ করার গুরুত্ব বুঝতেন, তা হলে সিঙ্গুরের পরিস্থিতি এমন অন্ধকারময় হত না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘সহমতের বিষয়টি উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বড় দেরি করে বুঝলেন। আরও আগে বুঝলে রাজ্যের মঙ্গল হত।’’
প্রায় একই সুরে সেই সময়ের শাসক সিপিএমকে বিঁধছেন দুধকুমার ধাড়া। সিঙ্গুরের ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে। টাটাদের প্রকল্প এলাকায় তাঁর পরিবারের পাঁচ বিঘা জমি ছিল। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ডেউচা প্রসঙ্গে যে কথা বলেছেন, তাতে আস্থা রাখাই যায়। কারণ, তিনি সেই সময় সিঙ্গুরে দেখেছেন, সহমতের ভিত্তিতে জমি অধিগ্রহণ না হলে কী কঠিন পরিণতি হতে পারে। আমরা বারবার তখন বামেদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম, চাষের জন্য কিছুটা অন্তত জমি ছেড়ে দেওয়া হোক। তা হলে শিল্প-কৃষি দুটোই সম্ভব হত। বামেরা কথা শোনেনি। পরিণতি মানুষ নিজের চোখে দেখেছেন।’’
ডেউচা-র প্রসঙ্গে সামনে আসায় সিঙ্গুরে ফের একসময়ের অধিগৃহীত জমিতে শিল্পের দাবিও উঠছে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো ওই জমি চাষিরা ফিরে পেলেও অনেক জায়গাতেই চাষ হচ্ছে না। ‘ইচ্ছুক’ সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় তাই বলেন, ‘‘দিদিকে অনুরোধ করব, সিঙ্গুরের ওই জমিতে শিল্পই করুন। সিঙ্গুরে বহু বেকার ছেলে স্রেফ বাড়িতে বসে আছেন। কোনও কাজ নেই। শিল্প হলে ছেলেরা কাজ পাবে। প্রকল্প এলাকায় আমাদের জোড়তলা, বেলুতলা আর নিমতলার জমি তো জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। জমি ফিরিয়ে লাভ কী হয়েছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy