Advertisement
E-Paper

বালু যেন জেলাতেও ‘পিছিয়ে পড়ছিলেন’ 

শুধু পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারেই নয়, গত বেশ কয়েক মাস ধরেই উত্তর ২৪ পরগনার জেলা রাজনীতিতে জ্যোতিপ্রিয়কে (বালু) কিছুটা নিস্প্রভ মনে হচ্ছিল তৃণমূলেরই একাংশের।

Jyotipriya Mallick

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:৫৯
Share
Save

তবে কি আঁচ কমে আসছিল জ্যোতির?

জেলা জুড়ে যাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এক সময়ে ছিল চোখে পড়ার মতো, তাঁকেই ইদানীং সে ভাবে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের বাইরে দেখা যাচ্ছিল না। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারেও সক্রিয় ভাবে দেখা যায়নি। বরং ভোটের আগে বাগদা-গাইঘাটায় এসে জনসভার মঞ্চে জ্যোতিপ্রিয় কার্যত কোনও বক্তৃতা না করে ব্রাত্য বসু, তাপস রায়দের জায়গা করে দিয়েছিলেন।

শুধু পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারেই নয়, গত বেশ কয়েক মাস ধরেই উত্তর ২৪ পরগনার জেলা রাজনীতিতে জ্যোতিপ্রিয়কে (বালু) কিছুটা নিস্প্রভ মনে হচ্ছিল তৃণমূলেরই একাংশের। এই সময়ে বরং আরও কিছু নেতাকে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছিল। তাঁদের মধ্যে আছেন নৈহাটির বিধায়ক তথা সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, বিধায়ক তাপস রায়, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসুরা। বিশেষ করে পার্থ, নারায়ণ, বিশ্বজিতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ইদানীং বেড়েছে অনেকটাই। এই তালিকার সকলেই দলের অন্দরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।

বাগদা আসনে বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতে পরে তৃণমূলে যান বিশ্বজিৎ। পরে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয় তাঁকে। পঞ্চায়েত ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ বার ২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের সমাবেশের মঞ্চে বিশ্বজিৎ বক্তৃতার সুযোগ পেয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লিতে সম্প্রতি তৃণমূলের যে কর্মসূচি হয়েছে, সেই মঞ্চেও বিশ্বজিৎ বক্তৃতা করেছেন। দিন কয়েক আগে রাজভবনের সামনে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চেও বক্তৃতা করেন। রাজ্যপালের সঙ্গে তৃণমূলের যে প্রতিনিধিদল দেখা করতে গিয়েছিল, সেখানেও ছিলেন তিনি।

২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে অশোকনগর কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছিলেন নারায়ণ গোস্বামী। এ বার জেলা পরিষদের আসনে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি হয়েছেন। তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, শীর্ষ নেতৃত্বের হাত মাথায় আছে বলেই নারায়ণের এই প্রাপ্তিযোগ।

পার্থ ভৌমিক গত বছর সেচমন্ত্রী হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে তাঁর গুরুত্ব বেড়েছে। তৃণমূল কর্মীরা অনেকেই মনে করেন, শীর্ষ নেতৃত্বের ‘গুডবুক’-এ থাকার কারণেই মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন পার্থ।

জেলার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘জ্যোতিপ্রিয় হয়তো বুঝতে পারছিলেন সব কিছু। তাই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর ভূমিকা অনেকটা উপদেষ্টাসুলভ হয়ে উঠেছিল ইদানীং।’’

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে জেলা সংগঠন ভেঙে বনগাঁ, বারাসত, বসিরহাট, ব্যারাকপুর-দমদম— এই চারটি সাংগঠনিক জেলা তৈরি করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেটাও অভিষেকের মস্তিষ্কপ্রসূত বলেই দলের অনেকের ধারণা। এক সময়ে অবিভক্ত জেলা সংগঠনে সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন জ্যোতিপ্রিয়। পরে দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য করা হয় তাঁকে।

উত্তর ২৪ পরগনায় ২০০১ সাল থেকে টানা বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয়। প্রথমে গাইঘাটা এবং পরে হাবড়া থেকে জিতে আসছেন। জেলায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা এখনও নেহাত কম নয়। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে তাঁর গ্রেফতারির পরে জেলা তৃণমূলের অন্দরে ভারসাম্যের কোনও রদবদল হয় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে কর্মীদের মধ্যে।

এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘যতই প্রভাব কমুক, বালুদা আমাদের কাছে বরাবর রাজনৈতিক অভিভাবক ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।’’ পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘দলের নেতা হিসাবে জেলায় বালুদার অনুপস্থিতি নিশ্চিত ভাবেই একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি করবে। কারণ, তিনি ছিলেন জেলায় তৃণমূলের পুরোধা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jyotipriya Mallick TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}