ভূপতিনগরে এনআইএ-র গাড়িতে ভাঙচুর। — নিজস্ব চিত্র।
এলাকা শান্ত নয়। হামেশাই সংঘর্ষ বাধে তৃণমূল-বিজেপির। কখনও কখনও হয় বোমাবাজিও। পূর্ব মেদিনীপুরের সেই ভূপতিনগরেই শনিবার কাকভোরে আক্রান্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।
কিন্তু এখন তো আদর্শ নির্বাচন বিধি রয়েছে, জেলায় রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তা-ও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা এমন মারমুখী হল কী ভাবে? আর সাতসকালের ঘটনায় রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতারই বা হল না কেন? ভূপতিনগরের ঘটনায় ঘুরছে এমনই সব প্রশ্ন। যদিও পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য তার কোনও সদুত্তর দেননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘মামলা রুজু করে তদন্ত হচ্ছে।’’
ভগবানপুর-২ ব্লকের অর্জুননগর পঞ্চায়েত এলাকা উত্তেজনাপ্রবণ। এই পঞ্চায়েতের মধ্যেই পড়ে নাড়ুয়াবিলা গ্রাম। ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর গ্রামের তৃণমূল নেতা রাজকুমার মান্নার বাড়িতে বিস্ফোরণে তিন জনের মৃত্যু হয়। মারা যান রাজকুমারও। তার পরই তৃণমূলের নাড়ুয়াবিলা বুথ সভাপতি হন মনোব্রত জানা। এনআইএ-র হাতে তিনি গ্রেফতার হতেই অশান্তির সূত্রপাত। স্থানীয় সূত্রের খবর, বিস্ফোরণের ওই গ্রামে গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে তৃণমূলের শক্তি বেড়েছে। মনোব্রতও দাপুটে নেতা। তাঁর বাড়ির দেওয়ালে কাঁথি লোকসভায় এ বারের তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিকের প্রচার লিখন হয়েছে।
ভূপতিনগর বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে এনআইএ গত মার্চেই মনোব্রত-সহ এলাকার ৮ জন তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতায় ডেকেছিল। তবে দু’দফায় নোটিস পাঠালেও তাঁরা কেউই যাননি। তৃণমূলের তরফে গ্রেফতারের আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে দাবি, সমান্তরাল ভাবে ওই এলাকায় এনআইএ’র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টাও শুরু করেছিল তৃণমূল। এ দিন যাঁরা এনআইএ আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, সেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশও মানছেন, নেতৃত্বের কথা মতোই বিক্ষোভ হচ্ছে।
বিজেপির স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতির দাবি, ‘‘এখানে লোকসভার প্রার্থী উত্তম বারিক তৃণমূলের বিধায়ক, জেলা সভাধিপতিও। তাঁর কথা মতোই হয়তো এ সব হয়েছে।’’ উত্তম অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ‘‘দিনভর প্রচারে ব্যস্ত। কী হয়েছে জানি না। তবে আমাদের নির্দোষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই স্থানীয়েরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।’’
বিজেপির আরও দাবি, এ দিনের হামলার পিছনে ব্লক তৃণমূল সভাপতি অম্বিকেশ মান্না এবং স্থানীয় বাসুদেববেড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দীপঙ্কর খাটুয়াও আছেন। দীপঙ্করের মোবাইল বন্ধ ছিল। আর অম্বিকেশ বলছেন, ‘‘বিস্ফোরণে আমাদের কেউ জড়িত নয়। তা-ও বিজেপি নেতাদের কথায় এনআইএ আমাদের নেতাদের যে ভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতিবাদ হয়েছে। হামলার অভিযোগ ঠিক নয়।’’
মুখ্যমন্ত্রী আবার এ দিন উত্তরবঙ্গের সভা থেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কেন ওরা মাঝরাতে অভিযানে গেল? পুলিশের অনুমতি নিয়েছিল এনআইএ?’’ পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘পুরনো একটি মামলার তদন্তে এনআইএ ভূপতিনগরে এসেছিল। একটি দল যখন ভূপতিনগর থানায় এসে আমাদের সহযোগিতা চেয়েছিল, তখন সব রকম সহযোগিতা করা হয়।’’ হামলার পরে এনআইএ’র দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে সকালে সেই অভিযোগ হলেও রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং ডিজি-র কাছে রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। এ দিন পরে ভূপতিনগরে যান জেলার পুলিশ সুপার। পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকও সেরেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy