পুরুলিয়ার প্রশাসনিক আধিকারিকদের ঘিরে ধরেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অনিরুদ্ধ ঘোষ (নীল সোয়েটার পরিহিত)। নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় ঠাঁই পাননি বেশির ভাগ যোগ্য ব্যক্তি। অথচ যাঁরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল বা পাকা বাড়ির মালিক, এমন অযোগ্যদের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। এমনই অভিযোগ করলেন পুরুলিয়া জেলার শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। প্রায় একই অভিযোগ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রানিগঞ্জের বাসিন্দাদের। তাঁদের অনেকের দাবি, এই যোজনার আওতায় বাড়ি তৈরির টাকা পাচ্ছেন না তাঁরা। শুক্রবার দুই জেলাতেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দুই জেলায় কার্যত অস্বস্তিতে শাসকদল তৃণমূল।
এই যোজনার আওতায় যোগ্যরা ঘর না পেলে ভবিষ্যতে ভোট বয়কটেরও হুমকি দেন পুরুলিয়ার বহু বাসিন্দা। যদিও তাঁদের আশ্বস্ত করে প্রশাসনের দাবি, একমাত্র যোগ্যরাই ঘর পাবেন। অন্য দিকে, এ নিয়ে ক্ষুব্ধদের আশ্বস্ত করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এ নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল।
পুরুলিয়া-২ ব্লকের ঘোঙ্গা পঞ্চায়েতের শ্যামপুর গ্রামের বহু বাসিন্দার দাবি, আবাস যোজনার তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের অনেকেরই পাকা বাড়ি রয়েছে। এমনকি, তাঁদের আর্থিক অবস্থাও যথেষ্ট ভাল। অথচ যে সমস্ত কাঁচা বাড়ির মালিকেরা নিজের সামর্থ্যে পাকা বাড়ি তৈরি করতে পারছেন না, তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এ নিয়ে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন গ্রামবাসীরা। আবাস যোজনার তালিকা সংশোধন করে যোগ্য ব্যক্তিদের বাড়ি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
শুক্রবার রানিগঞ্জ ব্লক অফিসে কার্যত অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় মহিলারা। আবাস যোজনায় কারা বাড়ি পাবেন, তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে কার্যত বিক্ষোভের মুখে পড়ে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। বিক্ষোভকারী স্থানীয় মহিলাদের দাবি, আবাস যোজনায় তাঁরা বাড়ি তৈরির অর্থ পাচ্ছেন না।
আবাস যোজনার আওতায় যাঁদের বাড়ি তৈরি করা হবে, তার তালিকা প্রতিটি পঞ্চায়েতে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকার ভিত্তিতে একটি করে কমিটি গঠন করে প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শন করছেন ব্লক অফিসের আধিকারিকেরা। শুক্রবার পরিদর্শনের সময় রানিগঞ্জের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের নেতা বিনোদ নুনিয়াকে কার্যত ঘিরে ধরেন বিক্ষোভকারী মহিলারা। যদিও বিনোদের দাবি, তালিকায় যাঁদের নাম নেই, তাঁরা কী ভাবে বাড়ি পাবেন, তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, তালিকা অনুযায়ী যাঁরা বাড়ি পাবেন, সে তথ্যও দেন কিনি। বিনোদের মতে, বিক্ষোভ নয়, মহিলারা ওই তথ্য জানার জন্য এসেছিলেন।
আবাস যোজনা নিয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় শাসকদলকে বিঁধেছেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা। তাঁর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক মাস দুয়েক আগে নাটক শুরু করেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন। বিডিও হন বা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কে বাড়ি পাবেন এবং তালিকায় কার কার নাম রয়েছে, তাঁরা সবই জানেন। তৃণমূলের নেতাদের চার তলা বাড়ি থাকলেও তাঁদের নামে গরিব আবাস যোজনার বাড়ি হয়ে যাচ্ছে। পঞ্চায়েতে সদস্যদেরও নাম তালিকায় থাকছে।’’ কয়েক দিন আগেই এ নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন তিনি। এ বার বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অগ্নিমিত্রা।
বিভিন্ন জেলার মতো পুরুলিয়ায় গত দিন তিনেক ধরে আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবাস যোজনার সমীক্ষা করছেন। সমীক্ষা শুরুর দিন থেকেই এই জেলার বেশির ভাগ ব্লকে তালিকা নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত সিংহের কথায়, ‘‘আমার বাড়ির অবস্থা ভাল নয়। কিন্তু ঘর পাইনি। অথচ যাঁদের অবস্থা ভাল, তাঁদের নাম রয়েছে তালিকায়। আমরা তৃণমূল করি না। তাই হয়তো আমাদের নাম কেটে দেওয়া হয়। যোগ্য ব্যক্তি অর্থাৎ গরিব মানুষজন ঘর না পেলে আমরা ভোট বয়কট করব।’’ সমলা রায় নামে আর এক মহিলা বলেন, ‘‘সামর্থ্য নেই বলে আমরা বাড়ি তৈরি করতে পারছি না। ত্রিপল ঢাকা দিয়ে থাকি।’’ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন পুরুলিয়া ২ নম্বর ব্লকের বিডিও দেবজিৎ রায়। তিনি বলেন, ‘‘তালিকায় কারা যোগ্য বা অযোগ্য, সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। অযোগ্যরা নন, যোগ্যরাই ঘর পাবেন। তবে নতুন নাম সংযোজনের বিষয়টি এখনই আমাদের হাতে নেই।’’ পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘আবাস যোজনার কাজ খতিয়ে দেখছেন জেলার বিডিও, ওসি, মহকুমাশাসকেরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করা হচ্ছে। আরও সমীক্ষা হবে। তবে সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ যদিও পুরুলিয়ার যুক্তিবাদী সমিতির জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো বলেন, ‘‘এখনও যদি ঠিকমতো সমীক্ষা চালানো হয়, তা হলে আরও ৫০ শতাংশ ঘর বাদ যাবে। খসড়া তালিকা দেখার জন্য আমরা মুখিয়ে রয়েছি। সেখানে যদি যোগ্যরা ঠাঁই না পান, তা হলে আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy