Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

সংরক্ষণে গাফিলতি, আঙুল জোড়া লাগবে কি

বালুরঘাটের হাসপাতালে আঙুল বাদ যাওয়া সদ্যোজাত শিশুকন্যাটিকে নিয়ে আপাতত লড়াই চালাচ্ছেন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। কিন্তু কাটা আঙুল জোড়া লাগবে কি না, সে প্রশ্নে তাঁরা সন্দিহান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৪:৩৬
Share: Save:

বালুরঘাটের হাসপাতালে আঙুল বাদ যাওয়া সদ্যোজাত শিশুকন্যাটিকে নিয়ে আপাতত লড়াই চালাচ্ছেন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। কিন্তু কাটা আঙুল জোড়া লাগবে কি না, সে প্রশ্নে তাঁরা সন্দিহান। কারণ দুর্ঘটনার পর থেকেই আঙুলটির সংরক্ষণ যথাযথ হয়নি বলে তাঁদের অনুমান। তাঁদের মতে, এ ক্ষেত্রে সংরক্ষণের প্রক্রিয়াই হল সবচেয়ে জরুরি।

ঠিক কতটা জরুরি, তার প্রমাণ দিচ্ছে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি কল্যাণীর এক তরুণ। গত রবিবার চোখের সামনে নিজের ডান হাতের তর্জনিটা কেটে গিয়ে ছিটকে পড়তে দেখেছিলেন তিনি। অ্যাকাউন্টেন্সির প্রথম বর্ষের ছাত্র দেবব্রত কর্মকার গত রবিবার দুপুরে নিজের বাড়ির সামনে বসে মোটরবাইক সাফ করছিলেন। বাইকের চেন পরিষ্কার করার সময় ডান হাতের তর্জনি চেনে জড়িয়ে যায়। তার পর তা কেটে ছিটকে পড়ে অদূরে। নিজের মোটরবাইকের পাশে বসে ফ্যালফ্যাল করে সে দিকে তাকিয়ে ছিলেন ১৯ বছরের তরুণ। কিন্তু মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য। তার পরেই দ্রুত মনস্থির করেন তিনি।

তাঁর কথায়, ‘‘আমি কয়েক মুহূর্ত স্তম্ভিত হয়ে বসেছিলাম। তার পর বাড়ির দোতলায় গিয়ে বাবা-মাকে ডেকে আনলাম। নীচে নেমে কাটা আঙুলটা কাপড়ে মুড়ে প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরলাম। তার পর একটা ফ্লাস্কের মধ্যে বরফ দিয়ে সেখানে আঙুলটি ভরে নিয়ে এলাম কলকাতায়। তার আগে স্থানীয় একটা নার্সিংহোমে গিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ জড়িয়ে নিয়েছিলাম।’’ কী ভাবে এই প্রক্রিয়াটি জানলেন? তিনি জানান, এক প্রতিবেশী তাঁকে এ ভাবেই আঙুল সংরক্ষণ করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

সল্টলেকের কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালে সেই রাতেই তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকদের দক্ষতার কারণে তো বটেই, পাশাপাশি নিজের তৎপরতার জন্যও কাটা আঙুল জুড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চলেছেন তিনি। চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমন তৎপরতাই সবচেয়ে মূল্যবান। প্লাস্টিক সার্জন ভি এস রাঠৌর বলেন, ‘‘মাথা ঠান্ডা রেখে যে ভাবে আঙুলটি সংরক্ষণ করে এনেছিলেন ওঁরা, সেটা খুবই প্রশংসনীয়। মনে রাখতে হবে, কাটা অংশটিকে সরাসরি বরফের মধ্যে না রেখে প্লাস্টিকে বা কাপড়ে মুড়ে বরফের মধ্যে রাখা দরকার। সব চেয়ে ভাল হয়, যদি ছ’ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রোপচার করা যায়। তবে কব্জির নীচের অংশ হলে ১২ ঘণ্টা পর্যন্তও তা রাখা যায়।’’

সংরক্ষণ যথাযথ হলে যে অস্ত্রোপচার করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব তা জানিয়েছেন প্লাস্টিক সার্জন মণীশমুকুল ঘোষও। বছরখানেক আগে এক শিশুকন্যার বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল জুড়েছিলেন তিনি। আরামবাগের গোঘাটের বাসিন্দা অবন্তিকা হাজরা নামে এক বছরের ওই মেয়েটির মা বঁটিতে আলু কাটছিলেন। খেলতে খেলতে বঁটিতে হাত লেগে গোটা বুড়ো আঙুলটাই গোড়া থেকে কেটে এক হাত দূরে ছিটকে পড়ে। দৃশ্য দেখে মা অজ্ঞান হয়ে যান। প্রতিবেশীরা এসে একটি কলাপাতায় আঙুলটিকে মুড়ে গ্রামের এক ডাক্তারের কাছে ছোটেন। তিনি কাটা আঙুলটি প্লাস্টিকে মুড়ে বরফ দিয়ে পাঠিয়ে দেন আরামবাগ শহরে এক অর্থোপেডিকের কাছে। তিনি আবার কাটা আঙুলটি প্লাস্টিকে মুড়ে স্যালাইন জলে ডুবিয়ে দেন। তার পর অন্য একটি প্লাস্টিকের প্যাকেটে বরফ রেখে তার মধ্যে আঙুল সমেত প্লাস্টিকটি রাখেন। সেই ভাবেই শিশুটিকে নিয়ে পরিবারের লোক আসেন কলকাতায়। মিন্টো পার্কের কাছে এক নার্সিংহোমে সেই রাতেই অস্ত্রোপচার করেছিলেন মণীশবাবু। এখন সেই শিশুর জোড়া দেওয়া আঙুল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মণীশবাবুর কথায়, ‘‘সংরক্ষণই সব চেয়ে জরুরি। শিলিগুড়ির এক বাসিন্দার তিনটি আঙুল কেটে গিয়েছিল। তিনি বিমানে কলকাতা আসেন। ২৫ ঘণ্টা পরে অস্ত্রোপচার করে আঙুল জোড়া দেওয়া গিয়েছিল। এখন তিনিও স্বাভাবিক জীবনে।’’ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনেকেই কাটা অঙ্গ সরাসরি বরফের মধ্যে রাখেন। সেটা ক্ষতিকর। পরিষ্কার কাপড় স্যালাইন জল বা সাধারণ পরিষ্কার জলে ভিজিয়ে তাতে কাটা অঙ্গ মুড়ে প্লাস্টিকের মধ্যে ভরে প্লাস্টিকের মুখ আটকে দেওয়া উচিত। তার পরে অন্য প্লাস্টিকের প্যাকেট বা পাত্রে বরফ রেখে সেখানে প্লাস্টিক মোড়া আঙুলটি রাখলে বেশ কিছু ঘণ্টা তা ঠিক রাখা সম্ভব। বালুরঘাটের সদ্যোজাতের কাটা আঙুলটি নার্স ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তার পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে যাওয়া, সেখান থেকে ফিরে আসা। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে কলকাতায় রওনা হওয়া— আগাগোড়াই নিয়ম মানা হয়নি। কিন্তু কেন? সেই প্রশ্নটাই তুলছেন প্লাস্টিক সার্জনদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, আরামবাগের ডাক্তাররা যদি পারেন, তা হলে বালুরঘাট বা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের মতো সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের কেন সংরক্ষণের এই জ্ঞানটুকু থাকবে না?


আরামবাগের শিশুকন্যার মতোই জোড়া লেগেছে কল্যাণীর

দেবব্রত কর্মকারের (ডান দিকে) কাটা আঙুলও। — নিজস্ব চিত্র

ওই একরত্তি শিশুকে এ বার তার খেসারত দিতে হবে কি না, সেই নিয়েই আশঙ্কায় রয়েছেন চিকিৎসকেরা।

ওর অস্ত্রোপচার কি সম্ভব? এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানান, এ ব্যাপারে তাঁরা এখনই মন্তব্য করবেন না। আজ শিশুটিকে দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তবে তাঁর অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে শিশু বা তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy