(বাঁ দিকে) প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এবং অধুনা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মামলা প্রথম নয়। এর আগেও কলকাতা হাই কোর্টে কোনও নির্দেশ নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিদের ঐক্যমতে আসতে না পারার নজির রয়েছে। ২০২৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার ক্ষেত্রে হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ নিয়ে প্রায় অনুরূপ জটিলতা তৈরি হয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চে। দুই বিচারপতি ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। মামলা গিয়েছিল তৃতীয় বেঞ্চে। বুধবার পার্থদের জামিনের আবেদনের ক্ষেত্রেও একই নজির তৈরি হল। পার্থ-সহ পাঁচ মামলাকারীর জামিন প্রসঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা একমত হতে পারলেন না।
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সংরক্ষিত (ওবিসি) প্রার্থীদের পাশের নম্বর কত হবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল বছরখানেক আগে। হাই কোর্টে সে সময় বিচারপতি ছিলেন অভিজিৎ (বর্তমানে তমলুকের বিজেপি সাংসদ)। তাঁর সিঙ্গল বেঞ্চ টেটে ওবিসি প্রার্থীদের পাশ নম্বর নিয়ে যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চে। তৎকালীন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের বেঞ্চ এ বিষয়ে একমত হতে না পারায় মামলাটি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে চলে যায়। সেখান থেকে তৃতীয় বেঞ্চে মামলা পাঠানো হয়েছিল।
নম্বর নিয়ে কী জটিলতা ছিল? শেষ পর্যন্ত কী সমাধান হয়েছিল?
টেট পাশের জন্য সংরক্ষিত প্রার্থীদের ন্যূনতম প্রাপ্ত নম্বর ৫৫ শতাংশ। ১৫০ নম্বরের পরীক্ষায় ৮২.৫ পেলে এই ৫৫ শতাংশ হয়। জাতীয় শিক্ষক শিক্ষণ পর্ষদের (এনসিটিই) নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীরা ৮২ নম্বর পেলেই এ ক্ষেত্রে তাঁদের উত্তীর্ণ বলে ধরা হত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের যুক্তি, ১৫০-এর মধ্যে ৮২ নম্বর আসলে ৫৪.৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ, নিয়ম অনুযায়ী ৫৫ শতাংশ হচ্ছে না। ১ নম্বর বেশি হলে তবে তা শতাংশের বিচারে হত ৫৫.৩৪। সে ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশের নিয়ম প্রযোজ্য হত। পাশের নম্বর নিয়ে এই জটিলতার কারণেই এনসিটিই ৮২ নম্বরকে পাশ হিসাবে ধরার কথা স্পষ্ট করে দিয়েছিল বলে দাবি। এই সংক্রান্ত একটি মামলায় হাই কোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরীক্ষার্থী ৮২ পেলে টেট উত্তীর্ণ হিসাবে গণ্য করা হবে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যান কয়েক জন।
বিচারপতি তালুকদার এ ক্ষেত্রে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়কেই মান্যতা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিচারপতি ভট্টাচার্য তা মানতে পারেননি। তাঁর মত ছিল, ৮২.৫ যদি পাশ নম্বর (৫৫ শতাংশ) হিসাবে নির্ধারিত হয়, তবে আধ নম্বর বাড়িয়েই ধরা উচিত। নম্বরের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যেতে নারাজ ছিলেন বিচারপতি ভট্টাচার্য।
ডিভিশন বেঞ্চে নম্বরের এই জটিলতার পর মামলাটি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে যায়। সেখান থেকে প্রধান বিচারপতি তা তৃতীয় বেঞ্চে পাঠান। বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের বেঞ্চে শুনানির পর অভিজিতের প্রথম নির্দেশই বহাল রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ, সংরক্ষিত প্রার্থীরা ৮২ পেলেই তাঁদের টেট উত্তীর্ণ হিসাবে গণ্য করা হবে বলে জানিয়েছিল তৃতীয় বেঞ্চ।
নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের করা মামলায় জামিন চেয়ে পার্থদের আবেদনের ক্ষেত্রেও একমত হতে পারেননি হাই কোর্টের দুই বিচারপতি। পার্থ-সহ মোট ন’জন জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের জামিন মঞ্জুর করেছেন বুধবার। কিন্তু ওই বেঞ্চেরই বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায় তাঁর সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তিনি চার জনের জামিন মঞ্জুর করলেও পার্থ-সহ বাকি পাঁচ জনের ক্ষেত্রে জামিনের বিরোধিতা করেন। দুই বিচারপতি কৌশিক ঘোষ, শেখ আলি ইমাম, সুব্রত সামন্ত রায় এবং চন্দন ওরফে রঞ্জন মণ্ডলের জামিনের ক্ষেত্রে একমত হয়েছেন। পার্থ ছাড়াও সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিন্হার জামিন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে মামলাটি গিয়েছে। তিনি তৃতীয় বেঞ্চে এই মামলা পাঠাবেন এবং সেখানেই পার্থদের জামিন সংক্রান্ত জটিলতার ফয়সালা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy