Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Mandarmani

মন্দারমণিতে বুলডোজ়ার রোখার মমতা-সিদ্ধান্তের নেপথ্যে দুই কারণ, ‘স্থায়ী সমাধান’ খুঁজছে প্রশাসন

২০২২ সালের মে মাসে পরিবেশ আদালত রায় দিয়েছিল, মন্দারমণির ১৪৪টি হোটেল উপকূলবর্তী এলাকার পরিবেশের নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি। তাই সেগুলি ভেঙে ফেলতে হবে।

CM Mamata Banerjee has stopped the demolition of illegal construction in Mandarmani for two reasons

বেআইনি হোটেল ভাঙার জেলা প্রশাসনের নির্দেশ রুখে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩০
Share: Save:

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি গত ১১ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছিলেন, বেআইনি ভাবে নির্মিত মন্দারমণির ১৪৪টি হোটেল এবং রিসর্ট ভেঙে দেওয়া হবে। যে ‘আতঙ্কে’ গত সপ্তাহের শেষে মন্দারমণিতে পর্যটকের মন্দা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসনের বুলডোজ়ার চালানোর সেই সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার নবান্ন থেকে রুখে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেন? প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য— এর কারণ দু’টি।

২০২২ সালের মে মাসে পরিবেশ আদালত রায় দিয়েছিল, মন্দারমণির ১৪৪টি হোটেল উপকূলবর্তী এলাকার পরিবেশের নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি। তাই সেগুলি ভেঙে ফেলতে হবে। হিসেব কষলে দেখা যাচ্ছে, সেই নির্দেশের আড়াই বছর পর তা কার্যকর করার নির্দেশিকা জারি করেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। কিন্তু নবান্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী এতে ক্ষুব্ধ। বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি ওই ঘটনায় ‘স্তম্ভিত’! কারণ, জেলা প্রশাসন নবান্নের সঙ্গে ‘সমন্বয়’ না করেই ওই নির্দেশিকা জারি করেছিল। যদিও প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ জেলাশাসককে মানতেই হত। না হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনের নির্দেশ কার্যকর না করার মামলা হত। তাই তাঁকে ওই কাজ করতে হয়েছে। আবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতাকেও বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান, জীবিকার প্রশ্ন ভাবতে হত। তিনি সেটাই করেছেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘এটাকে পূর্ব মেদিনীপুর বনাম নবান্নের সংঘাত হিসাবে দেখলে হবে না। বরং ‘বোঝাপড়া’ হিসাবেই দেখা উচিত।’’ অর্থাৎ, জেলাশাসক তাঁর কাজ করলেন। আবার মুখ্যমন্ত্রীও ‘অভিভাবক’ হিসাবে সহানুভূতির সঙ্গে তাঁর ভূমিকা পালন করে পরিস্থিতির সামাল দিলেন। পুরো ঘটনায় শ্যাম এবং কুল— উভয়ই রক্ষিত হল।

এটা যদি হয় ‘প্রশাসনিক কৌশল’, তা হলে এর পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। ‘আগ্রাসী’ হয়ে প্রশাসন যদি এত হোটেল ভাঙতে শুরু করত, তা হলে তা সরাসরি চার লক্ষের বেশি মানুষের রুটিরুজিতে প্রভাব ফেলত। বুলডোজ়ারের ধাক্কায় কর্মহীন হয়ে পড়তেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। এর ‘রাজনৈতিক অভিঘাত’ অবশ্যম্ভাবী। বিশেষত, ঘটনাস্থল যখন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, ‘‘মন্দারমণিতে এই কাণ্ড যদি হত, তা হলে তার সরাসরি রাজনৈতিক ফয়দা তুলত বিজেপি। আরও ভাল করে বললে, ফয়দা তুলতেন শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভা ভোটের দেড় বছর আগে সেই ঝুঁকি কেন নিতে যাব?’’

উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি আসনই জিতেছে বিজেপি। মন্দারমণি পড়ে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে। সেখানকার বিজেপি সাংসদ শুভেন্দুরই ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। ফলে ভবিষ্যৎ আঁচ করেই নবান্নকে বুলডোজ়ার থামাতে হয়েছে বলে শাসকদলের অনেকের অভিমত। তবে শাসকদলের অন্দরে বিপরীত ভাবনাও রয়েছে। সেই অংশের বক্তব্য, নির্দেশিকা যখন আড়াই বছর আগে দেওয়া হয়েছিল, তখন তৃতীয় বারের জন্য মমতার নেতৃত্বে ক্ষমতায় চলে এসেছে তৃণমূল। ২০২১ সালের সেই ভোটে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে মমতা নবান্নে ফিরেছিলেন। সেই বিপুল জয়ের এক বছর পরে পরিবেশ আদালত মন্দারমণি নিয়ে রায় দিয়েছিল। সেই সময়ে ওই সমস্ত হোটেল এবং রিসর্টের সঙ্গে জড়িতদের জন্য ‘বিকল্প’ আয় এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তার পরে ভাঙচুরের পদক্ষেপ নেওয়া যেত।

প্রসঙ্গত, মন্দারমণিতে যে ‘সমস্যা’ তৈরি হয়েছে, তার স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসন এখন নীল নকশার সন্ধান করছে। প্রাথমিক একটি ভাবনাও প্রশাসনিক স্তরে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও তা এখনও চূড়ান্ত নয়। নবান্নের অনুমোদন সাপেক্ষে তা নিয়ে এগোনো হতে পারে।

পরিবেশ আদালতের মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছে হোটেল মালিকদের সংগঠন। বুধবার সেই মামলার একপ্রস্ত শুনানি হয়েছে। বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে শুক্রবার ফের মন্দারমণি মামলাটি ওঠার কথা। তার আগে মঙ্গলবার মমতা এবং মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ হোটেল মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত করেছেন যে, কোনও নির্মাণ ভাঙা হবে না।

তা হলে কি বেআইনি নির্মাণ থেকে যাবে? এই প্রশ্নেই স্থায়ী সমাধানে পৌঁছতে চাইছে জেলা প্রশাসন। এক প্রশাসনিক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘বাম আমলে যাঁরা পাট্টা পেয়েছিলেন, সেই পাট্টাদারেরাও লিখিত-পড়িত করে হোটেল মালিকদের জমি দিয়েছেন। কিন্তু পাট্টার জমি ও ভাবে বিক্রি করা যায় না।’’ এই ‘জটিলতা’ থেকেই প্রশাসন মুক্তির পথ খুঁজছে বলে ওই আধিকারিক জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, পাট্টার জমিতে যে নির্মাণ হয়েছে, সেগুলিতে ‘লিজ় প্রথা’ চালু করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। তবে জেলা প্রশাসনের মূল চিন্তার বিষয় এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘কোস্টাল রেগুলেটেড জ়োন’ সংক্রান্ত যে নিয়ম রয়েছে, তা কী ভাবে বলবৎ করা যায়, তা নিয়ে। সে বিষয়েও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy