যাদবপুরের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জরুরি ভিত্তিতে কর্ম সমিতির বৈঠক ডাকার জন্য রাজ্য সরকারের অনুমতি চাইছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই চিঠিতে বুধবারই অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত সই করেছেন বলে যাদবপুর সূত্রের খবর। শেষ বার যাদবপুরে কর্মসমিতির বৈঠক বসে সমাবর্তনের আগে, নভেম্বরে। তখনও রাজ্যের অনুমতি নিতে হয়েছিল। এ বার কর্মসমিতির বৈঠকের আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিকতা ফেরাতে জরুরি বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।
তবে গত ১ মার্চ যাদবপুরের শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সভার গোলমালে লালবাজার যে ছাত্রদেরই নিশানা করছে, তা এ দিন নগরপাল মনোজ বর্মা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অনেক ছাত্রকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীরা রোজই দু’জনকে ডেকে কথা বলছেন।” সেই সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কিত পোস্টার প্রসঙ্গেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মনোজের দাবি।
বুধবারই আলিপুর অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সৌপ্তিক চন্দের ২৫ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। কোর্টে সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল জানান, তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির দফতর ভাঙচুরের ঘটনার সময়ে সিসি ক্যামেরায় সৌপ্তিককে দেখা গিয়েছে। কারা জড়িত, জানতে তাঁকে জেরা করা দরকার। মালদহের ছেলে সৌপ্তিকের আজ, বৃহস্পতিবার ক্লাসে কিছু অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ছিল বলে আইনজীবী সুপ্রিয় রক্ষিত কোর্টে জানান। তাঁর বক্তব্য, ওই ছাত্রকে জামিন দেওয়া হোক। অভিযুক্ত ছাত্রেরা কেউ অপরাধী নন। চাইলেই তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারছে পুলিশ। জামিন পেলে তিনি পরীক্ষাও দিতে পারবেন। কিন্তু আর্জি ধোপে টেকেনি। এ দিনই প্রশাসনিক বৈঠকের একটি রিপোর্ট যাদবপুর থানায় পাঠান ভাস্কর। তাতে বলা হয়, যাদবপুর চত্বরে ১০ নম্বর আবাসন ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ ধরপাকড় করলেও সেখানে ভাঙচুর হয়নি।
এ দিনই যাদবপুরে পুলিশ ফাঁড়ি বসাতে লালবাজারের তৎপরতার নিন্দা করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে স্পষ্ট বলা হয়, শিক্ষাঙ্গনে পুলিশ বসানো যাদবপুরের ঐতিহ্য বা ইতিহাসের সঙ্গে খাপ খায় না। ফাঁড়ির পরিকল্পনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাতে আসলে ছাত্রদের উপরে নজরদারিরই অপচেষ্টা বলে জুটা নিন্দা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতাবস্থা ফেরাতে যাদবপুরে ছাত্র সংসদ ভোটের আয়োজনও জরুরি বলে ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী উপাচার্যের তরফে বিকাশ ভবনে চিঠি গিয়েছে। এ বিষয়ে এর আগে শিক্ষাসচিব এবং শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিও এ বারের আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্তর্বর্তী উপাচার্য এ দিন বলেন, “যাদবপুরে স্বাভাবিকতা ফেরাতে সাধ্যমতো যা করণীয়, তা আমরা করছি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)