লকডাউনে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে সুরজ এবং শিল্পী হালদার। —নিজস্ব চিত্র।
লকডাউনে সংসারের হাল ধরতে স্কুল ছেড়ে রোজগারের পথ ধরেছে বোন। একই পথে হেঁটেছে দাদাও। পিঠোপিঠি দুই সন্তানের রোজগারের টাকায় কোনও রকমে টেনেটুনে চলছে বোলপুরের জুরান হালদারের সংসার।
গত বছর লকডাউনের সময় থেকেই স্কুলের পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল নবম শ্রেণির ছাত্রী শিল্পী হালদার। করোনার দাপটে অনলাইনে পড়াশোনা চালু হলেও তাতে যোগ দিতে পারেনি বোলপুরের শৈলবালা স্কুলের ছাত্রীটি। অনলাইনে পড়া চালানোর জন্য স্মার্টফোন কেনার পয়সাই যে নেই তাঁদের! শিল্পীর কথায়, ‘‘করোনার জেরে গত বছর অনলাইনে স্কুলের পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। তবে মোবাইল ছিল না বলে পরীক্ষাও দিতে পারিনি। আজকাল বোলপুরের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করছি।’’
বীরভূম জেলার বোলপুরের সুরিপাড়ায় শিল্পীদের বাড়িতে রোজগেরে বলতে ছিলেন দাদু ও বাবা। লকডাউনের সময় দাদু সখীচরণ হালদারের রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি দাদু মারা গিয়েছেন। যক্ষ্মায় আক্রান্ত বাবা কাজ হারান লকডাউনে। এ অবস্থায় তাঁর একটি হাতও ভেঙে গিয়েছে। ফলে প্রায়শই বিছানায় কাটে তাঁর।
সংসার টানতে স্কুল ছেড়ে রোজগার শুরু করেছে শিল্পীর দাদা সুরজ হালদারও। বোলপুরের নিচুপট্টি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত সে। বোনের থেকে এক বছর দেরিতে স্কুল শুরু করায় শিল্পীর থেকে এক ক্লাস নীচে প়ড়ত সে। তবে এখন সে সোনাঝুরির হাটের ‘পেয়ারা বিক্রেতা সুরজ’। কখনও বোলপুর আদালতের সামনেও পেয়ারার ঠেলা নিয়ে বসে। সুরজ বলে, ‘‘বাড়িতে দাদুর একটা দোকান ছিল। লকডাউনের সময় সে দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হন। দাদু মারা যাওয়ার পর বাবার রোজগারে সংসার চলত। ফলের দোকানে কাজ করতেন বাবা। তবে অসুস্থতার জন্য কাজে যেতে পারেন না। সংসার টানতেই কাজে নেমেছি।’’
কোনও দিন স্কুলে ফেরা হবে কি? উত্তর জানে না সুরজ! তবে নিজের রোজগারে দিদিকে ফের পড়ানোর ইচ্ছে রয়েছে সুরজের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy