২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Education

Tutopia: বাংলার বুকে এক অভাবনীয় বাস্তবতার নামই টিউটোপিয়া

প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ লাখ বাংলা মাধ্যমের ছাত্র-ছাত্রীর পিছিয়ে পড়া, তাদের সমস্যা, যন্ত্রণার কথা জেনে বুঝেও তার সমাধানের কোনো চেষ্টা করা হয় না – এই সত্যিটা আমাদের এক ভয়ানক অন্ধকার দিক

টিউটোপিয়া - বাংলায় শিক্ষার আধুনিক অ্যাপ

টিউটোপিয়া - বাংলায় শিক্ষার আধুনিক অ্যাপ

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২২ ০৯:৩৮
Share: Save:

কথায় বলে, “truth lies in minority” – কিন্তু, এই বাংলায় এক নির্মম সত্যি লুকিয়ে রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যেই। পশ্চিমবঙ্গে ইংরাজি মাধ্যমের ICSE ও CBSE বোর্ড থেকে প্রতি বছর মাত্র ৭০ থেকে ৮০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী ক্লাস টেনের পরীক্ষা দেয়। অভিভাবকদের বিশ্বাস, ইংরাজি মাধ্যমে পড়ার কারণেই এই বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ একেবারে তৈরি। তাই এদের নিয়েই যত স্বপ্ন, যত উচ্চাশা। এই ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছার পাশাপাশি, উল্টোদিকে একটা প্রশ্নও থাকুক – প্রতি বছর কতজন ছেলেমেয়ে বাংলা মাধ্যমে মাধ্যমিক দেয়? – ১০ থেকে ১২ লাখ। আমরা শুরুতেই ধরে নিই, বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা ইংরাজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পারবে না। কেন? কারণ, ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে পড়লেই ইংরাজিতে চোস্ত, স্মার্ট, আপ-টু-ডেট, পাশাপাশি পড়াশুনাতে স্টুডেন্ট পেয়ে যায় একটা গ্লোবাল এক্সপোজার। ভবিষ্যতে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য এগুলো কতটা মাইলেজ দিতে পারে, তা যেকোনো বাবামা-ই জানেন। কিন্তু, বাংলা মাধ্যমের ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাবার অবকাশ বা বাড়তি উৎসাহ কারোরই প্রায় নেই বললেই চলে। যাদের নিয়ে উচ্চাশা, স্বপ্ন থাকে না, তাদের জন্য থেকে যায় – শুধু অযত্ন আর অবহেলা।

প্রতি বছর এই ১০ থেকে ১২ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর পিছিয়ে পড়া, তাদের সমস্যা, যন্ত্রণার কথা জেনে বুঝেও তার সমাধানের কোনো চেষ্টা করা হয় না – এই সত্যিটা আমাদের এক ভয়ানক অন্ধকার দিক।

তাহলে কি বাংলা মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে, ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে পারবে না?

টিউটোপিয়ার ডিরেক্টর সুব্রত রায় এই প্রসঙ্গে বললেন – “বাংলা মাধ্যমে ভাল পড়াশোনা করতে পারব কি পারব না, এটা অপশনাল নয়, নিজের মাতৃভাষায় পড়াশুনা করা আমাদের জন্মগত অধিকার। যে ভাষার অক্ষর, শব্দগুলো আমাদের গলা, মুখের মাংসপেশির সাথে জড়িয়ে আছে ছোটো থেকে, সেই ভাষাতেই যদি পড়াশোনা করতে না পারি, বুঝতে হবে – আমরা একটা পরাধীন জীবন কাটাই।“

কে দেবে এই অবহেলা, পিছিয়ে পড়া থেকে স্বাধীনতা?

সুব্রত রায় জানালেন – “এই সব প্রশ্ন, আশঙ্কার একটাই উত্তর – টিউটোপিয়া। আমি নিজে বাংলা মাধ্যমের ছাত্র। জীবনের প্রতি পদে ধাক্কা খেতে খেতে ভেবেছি – কোনওদিন যদি সুযোগ পাই, বাংলা মাধ্যমের ছেলেমেয়েদের চলার পথের এই পাঁচিলগুলো ভাঙার একটা চেষ্টা করব। আজ, বিগত এক বছর ধরে ঝাঁপ দিয়েছি সেই লক্ষ্যেই। আর আমার সেই লক্ষ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিদিন অক্সিজেন জুগিয়ে চলেছেন প্রায় ৬০০-রও বেশি জ্ঞানীগুণী মানুষজন ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

টিউটোপিয়া লার্নিং অ্যাপ পাওয়া যাচ্ছে, গুগুল প্লে স্টোর এবং অ্যাপেল স্টোরে। ফোনে ডাউনলোড করে নেওয়া যায় সহজেই। অ্যাপ খুললেই দেখা যাবে, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাস অনুযায়ী ক্লাস ৮ থেকে ক্লাস ১১-এর, সব বিষয়ের জন্য গল্পের ছলে তৈরি করা আছে ভিডিও।সঙ্গে প্রাসঙ্গিক অ্যানিমেশন ও গ্রাফিক্স জুড়ে মনোগ্রাহী উপস্থাপন করা হয়েছে সব বিষয়কে। আছে নোটস্ এবং পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও। এরপরেও কোনো বিষয় না-বোঝা থেকে গেলে, রয়েছে ডাউট ক্লিয়ারিং সেকশন – যেখানে যেকোনো সময় শিক্ষকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে বুঝে নেওয়ার সুযোগ আছে। এর সাথে আছে লাইভ ক্লাসের সুযোগও - যেখানে সরাসরি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে যেকোনো বিষয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে আরও পরিষ্কার করে বুঝে নেওয়া যায়। অ্যাপ দেখিয়ে দেবে, সারাদিনে একজন স্টুডেন্ট কোন সাবজেক্ট কতক্ষণ পড়ল।

প্রশ্ন ওঠে, অতিমারি পরিস্থিতি কি সোনায় সোহাগা টিউটোপিয়ার জন্য? সুব্রত রায়ের উত্তর – “আচ্ছা, বলুন তো – অতিমারির আগে কি ছেলেমেয়েরা ভালবেসে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছিল? আমার কিন্তু মনে হয় না। সুতরাং সমস্যাটা কোভিড-কালের নয়। এটা বহুকালের পুরনো সমস্যা – বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করতে ভালবাসে না। আমরা চেষ্টা করেছি পড়াশোনাকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে, যাতে ছেলেমেয়েরা নিজের থেকেই ভালোবেসে পড়াশোনা করে। সুতরাং অতিমারির সাথে এর আলাদা করে কোনো যোগ আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে হ্যাঁ, মোবাইল যে শুধুমাত্র কমিউনিকেশন ডিভাইস না, বা ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের কাছে গেমিং বা হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক করার ডিভাইস না, শিক্ষাক্ষেত্রেও যে এর এত সুন্দরভাবে ব্যবহার হতে পারে, সেটা হয়ত কোভিড না হলে, আমাদের জানতে অনেক দেরি হতো।

এটা সত্যিই যে, বহু বছর অভিভাবকরা এটা ভাবতেই ভুলে গেছেন যে, বাংলা মাধ্যমে পড়েও তাদের ছেলেমেয়েরা জীবনে বড় কিছু করতে পারে। আর ঠিক এই চিন্তা-চেতনাতেই চাকা ঘুড়িয়ে দেওয়ার ধনুক-ভাঙা পণ করেছে টিউটোপিয়া।

টিউটোপিয়া কার সাথে প্রতিযোগিতায়? এই প্রশ্নের উত্তরে স্থির দৃষ্টিতে সুব্রত রায় বললেন – “ছেলেমেয়েদের পড়াশুনায় অন্যমনস্কতা, হীনমন্যতা, অনাগ্রহ – এই হল টিউটোপিয়ার প্রতিযোগীদের তালিকা।

এ সবের বিরুদ্ধে টিউটোপিয়া যুদ্ধে নেমেছে। লড়াই করছে বিনিদ্র প্রহরীর মতো। যুদ্ধজয়ের খবরও আসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই ৯ লক্ষেরও বেশি ফোনে ডাউনলোড হয়েছে টিউটোপিয়া। এসেছে ২১ হাজার রিভিউ। প্লে-স্টোরে রেটিং ৫ এর মধ্যে ৪.৮।

কথা হচ্ছিল, পশ্চিম মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত এলাকার একজন গৃহশিক্ষকের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি বললেন – “আমি দীর্ঘদিন ধরে ছেলেমেয়েদের পড়াই। আমি অনুভব করছি, টিউটোপিয়ার আবিস্কার বাংলার সমাজকে দাঁড় করিয়েছে এক যুগ-সন্ধিক্ষণে। একটা ইতিহাস তৈরির কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। (একটু দূরে, টিউটোপিয়ার একটা হোর্ডিং দেখিয়ে বললেন) ‘দেখুন কি লেখা আছে – ‘দুনিয়া যেভাবে পড়ে আজ বাংলার ঘরে ঘরে’ – কখনও ভাবা গেছিলো এমনটা?”

বাংলার বুকে সেই অভাবনীয় বাস্তবতার নামই – টিউটোপিয়া।

অন্য বিষয়গুলি:

Education Tutopia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy