Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কেন্দ্রকে চিঠি ত্রিপাঠীর, টেট তবু তিমিরেই

আদালতের স্থগিতাদেশ আর লোকসভা ভোটের জোড়া ধাক্কায় জলে পড়ে গিয়েছিল টেট। কেন্দ্র ছাড় দিতে রাজি না-হওয়ায় তা এখন গভীরতর জলে। এমনকী খোদ রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী কেন্দ্রকে চিঠি লেখা সত্ত্বেও তার উদ্ধারের আশা দেখা যাচ্ছে না। আবেদন করে বসে আছেন প্রায় ২৫ লক্ষ প্রার্থী। পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ এবং ৩০ মার্চ। কিন্তু স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা ‘টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট’ বা টেট কবে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩১
Share: Save:

আদালতের স্থগিতাদেশ আর লোকসভা ভোটের জোড়া ধাক্কায় জলে পড়ে গিয়েছিল টেট। কেন্দ্র ছাড় দিতে রাজি না-হওয়ায় তা এখন গভীরতর জলে। এমনকী খোদ রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী কেন্দ্রকে চিঠি লেখা সত্ত্বেও তার উদ্ধারের আশা দেখা যাচ্ছে না।

আবেদন করে বসে আছেন প্রায় ২৫ লক্ষ প্রার্থী। পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ এবং ৩০ মার্চ। কিন্তু স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা ‘টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট’ বা টেট কবে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল না। কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরা আর ওই নিয়োগ-পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য ফের আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে এই সমস্যার সমাধানে রাজ্যপালেরও দ্বারস্থ হয়েছে তারা।

সরকারি সূত্রের খবর, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরাও যাতে পরীক্ষা দিতে পারেন, সেই আবেদন জানিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, অন্যান্য রাজ্যে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের টেট-এ বসার ক্ষেত্রে কেন্দ্র যে-ছাড় দিয়েছে, আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গেও তা দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। সরকার ও রাজ্যপালের জোড়া তৎপরতা সত্ত্বেও আবেদন খারিজ এবং পাল্টা আবেদনের চক্রেই ঘুরপাক খাচ্ছে এ রাজ্যে টেট-এর ভবিষ্যৎ।

প্রশিক্ষণ না-থাকলে এ বছর ৩১ মার্চের পরে কেউ শিক্ষক-পদের পরীক্ষায় বসতে পারবেন না বলে কেন্দ্রীয় সরকার আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। তার আগেই প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) স্তরের শিক্ষকতার পরীক্ষা (টেট) নেওয়ার দিন স্থির হয়ে গিয়েছিল। উচ্চ প্রাথমিকের টেট গত ২৯ মার্চ এবং প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের টেট হওয়ার কথা ছিল গত ৩০ মার্চ। কিন্তু লোকসভা নির্বাচন সামনে এসে পড়ায় প্রাথমিকের টেট নির্ধারিত দিনে হয়নি। আর মামলার জেরে আদালত স্থগিতাদেশ জারি করায় আটকে যায় উচ্চ প্রাথমিকের টেট।

প্রাথমিকের টেট-এ বসার জন্য প্রায় ২০ লক্ষ এবং উচ্চ প্রাথমিকের টেট-এর জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। স্কুলশিক্ষা দফতরের খবর, প্রাথমিকে শূন্য পদের সংখ্যা ৩০ হাজারের কিছু কম। উচ্চ প্রাথমিকে তা ১৫ হাজারের মতো। আবেদনকারী প্রার্থীদের অধিকাংশই প্রশিক্ষণহীন। এই পরিস্থিতিতেই কেন্দ্রের কাছে রাজ্য আবেদন জানায়, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসার জন্য আরও এক বছর ছাড় দেওয়া হোক। এই নিয়ে রাজ্যের তরফে বহু বার দিল্লিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শিক্ষা দফতরের কর্তারা দিল্লি গিয়ে দরবারও করেছেন। বরফ গলেনি।

কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কয়েক মাস আগে কলকাতায় এসে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার মেয়াদ বাড়ানো হবে না। রাজ্যে শূন্য শিক্ষক-পদের তুলনায় প্রশিক্ষিত প্রার্থী কম বলে ছাড়ের সময়সীমা বাড়ানো হোক রাজ্যের এই যুক্তিকেও আমল দেয়নি দিল্লি।

পার্থবাবু বৃহস্পতিবার বলেন, “স্মৃতি সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তখনও তাঁর কাছে আবেদন জানানো হয়, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার সময়সীমা যেন বাড়িয়ে দেওয়া হয়।” শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, নির্বাচন এবং আদালতের স্থগিতাদেশের জেরে টেট নিতে না-পারার দায় রাজ্যের নয়। তাই কেন্দ্রের কাছে ছাড়ের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে তদ্বির করেছেন রাজ্যের শিক্ষাসচিব, শিক্ষামন্ত্রী নিজে, খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। পার্থবাবু বলেন, “কেন্দ্রের বর্তমান মত অনুযায়ী প্রশিক্ষিত প্রার্থী ছাড়া কেউ পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। এ কথা জেনে ফের চিঠি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে। রাজ্যপালকেও আমরা সমস্যাটার কথা জানিয়েছি। উনি বলেছেন, বিষয়টি দেখবেন।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE