Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হোলিকা দহনের দাপটে পিছু হটছে নেড়া পোড়া

‘বুড়ি পোড়ানো’ বা ‘নেড়া পোড়া’র বদলে বঙ্গজীবনে দোলেই জাঁকিয়ে বসেছে ‘হোলিকা দহন’। যার পৌরাণিক গল্প কমবেশি শোনা থাকলেও এত দিন শহর কলকাতায় বসে যা তেমন চাক্ষুষ করা যেত না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, দোলপূর্ণিমার কলকাতায় কার্যত সেই হোলিকার দহনভূমি গড়ে উঠেছিল।

রং বরসে: হোলিতে মাতোয়ারা। হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

রং বরসে: হোলিতে মাতোয়ারা। হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০৫:১৫
Share: Save:

কী ভাবে দোলযাত্রাকে পিছনে ফেলে পরাক্রান্ত হয়ে উঠছে ‘হোলি’, সেটা মালুম হচ্ছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। এ বার বাঙালির প্রাক্-দোল উৎসব ‘বুড়ি পোড়ানো’ বা ‘নেড়া পোড়া’-রও গেল-গেল দশা!

‘বুড়ি পোড়ানো’ বা ‘নেড়া পোড়া’র বদলে বঙ্গজীবনে দোলেই জাঁকিয়ে বসেছে ‘হোলিকা দহন’। যার পৌরাণিক গল্প কমবেশি শোনা থাকলেও এত দিন শহর কলকাতায় বসে যা তেমন চাক্ষুষ করা যেত না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, দোলপূর্ণিমার কলকাতায় কার্যত সেই হোলিকার দহনভূমি গড়ে উঠেছিল।

দোল বা হোলিতে আগুনে অশুভকে সমর্পণের রীতিটি প্রায় সর্বভারতীয়। ফাল্গুনী পূর্ণিমার আবহে শীতের আবর্জনা, শুকনো ডালপাতা পুড়িয়ে খাক করে দেওয়ার রীতি চালু আছে সারা দেশেই। কিন্তু হোলিকা দহন বাঙালির তত চেনা নয়। বাঙালির ‘নেড়া পোড়া’ দোলের আগের সন্ধ্যার আচার। আর হোলির আগের দিন উত্তর ভারতে হোলিকা দহনকে ‘ছোট হোলি’-ও বলা হয়।

সাবেক বাঙালি দেবতা মনসা, শীতলাদের পিছনে ফেলে ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছেন হনুমানজি, গণেশজি। ভূত চতুর্দশী ভুলে ধনতেরাস, কালীপুজোর থেকেও দিওয়ালিতে মত্ত বাঙালি। কারও কারও মত, একই ভাবে নেড়া পোড়া ভুলে হোলিকা দহনের জয়জয়কার। নিউ আলিপুরের একটি ক্লাবের মাঠে হোলিকা দহনের আসরে এ বার রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে পুরোভাগে দেখা গেল। সল্টলেকের বি-এফ ব্লকের বধূ সোনালি চৌধুরী বললেন, ‘‘ব্লকে হোলিকা দহন দিন-দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।’’ বেহালা, ফুলবাগানের কয়েকটি আবাসনেও এক ছবি। ই এম বাইপাসের ধারে মুকুন্দপুরের নয়াবাদের মতো শহুরে উপকণ্ঠেও মহাসমারোহে হোলিকা দহনই দেখা গেল দোলের সন্ধ্যায়।

পুরাণ, মহাকাব্যবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি হাসছেন, ‘‘বিশ্বায়নটা আজকাল বাঙালির কাছে হিন্দিকরণের আদলেই ঢুকছে!’’ তাঁর ব্যাখ্যা, হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকার হাত থেকে প্রহ্লাদকে বাঁচাতেই তাকে পুড়িয়ে মেরেছিলেন বিষ্ণু। আর নেড়া পোড়া কথাটি আদতে মেড়া বা ভেড়া পোড়ানো থেকে ধার করা। বৈদিক ভাব অনুযায়ী ভেড়া অশুভের প্রতীক। হোলিকাও তা-ই। তবে উত্তর ভারতের প্রথাটি পুরাণ-আশ্রিত। আগে দোলের পরের দিন অর্থাৎ হোলিতে ছুটি পেত না বাঙালি। এখন এ দিনও ছুটি দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

বাঙালি হোলিকা দহন করুক বা হোলি খেলুক— তাতে অবশ্য সমস্যা দেখছেন না নৃসিংহবাবু। তবে তাঁর আফসোস, ‘‘দোল যে শ্রীচৈতন্যের জন্মতিথি, বাঙালি সেটা ভুলতে বসেছে দেখে কষ্ট হয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE